মন এবং মস্তিষ্ক
দুর্ধর্ষ অ্যাকশন। তীক্ষ্ণ চাউনি। চোখা চোখা সংলাপ। কোথাও নেই তথাকথিত নায়িকা সুলভ কোমলতা। বরং অতিমাত্রায় রুক্ষ। কঠিন। অবতীর্ণ হয়েছেন দুষ্টের দমনে। দেবী দুর্গার মতো। তিনি কোয়েল মল্লিক। কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’র (Jongole Mitin Mashi) ট্রেলার। আছেন নাম ভূমিকায়। ট্রেলারে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন। পুরোনো কোয়েলের সঙ্গে এই কোয়েলকে মেলানো মুশকিল। চেষ্টার ত্রুটি ছিল না আগেও। এখন তিনি অনেক পরিণত। আরও পরিশ্রমী। মনের পাশাপাশি অভিনয় করছেন মস্তিষ্ক দিয়ে। যখন উচ্চারণ করেন, ‘মানুষই বোধহয় জীব জগতের সবথেকে নির্মম প্রজাতি। যে নিজেকে সাজানোর জন্য, নিজের ঘর সাজানোর জন্য পাখি, হাতি, বাঘ হত্যা করে’, তখন তাঁর চোখে মুখের এক্সপ্রেশন দেখার মতো।
পোস্টার দেখেই আগ্রহ
ছবির নামেই স্পষ্ট ছবির প্রেক্ষাপট জঙ্গল। ট্রেলারের শুরুতেই দেখানো হয়েছে সারান্ডায় হাতি-হত্যার দৃশ্য। জঙ্গলের চোরা শিকারিদের নিয়ে দানা বেঁধেছে গল্প। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেলারটি শেয়ার করে ছবির পরিচালক অরিন্দম শীল লিখেছেন, ‘গত তিন মাসে সারন্ডার জঙ্গলে মারা হয়েছে দুটি হাতি। চোরা শিকারিদের ধরতে ডাক পড়ল মিতিন মাসির। জঙ্গলে নাকি রয়েছে পাগলা হাতিও। যার ভয়ে সকলে ভীতসন্ত্রস্ত। তাকে দেখতে একেবারে অকুতোভয় মিতিন মাসি। টানটান উত্তেজনা, রহস্য-গোয়েন্দার স্বাদে ভরপুর ট্রেলারই আরও একটু উসকে দিল দর্শকের উত্তেজনাকে।’ তবে শুধু ট্রেলারেই নয়, প্রাথমিক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ছবির পোস্টার দেখে। পোস্টার মুক্তি পেয়েছিল পয়লা বৈশাখ। তখনই পড়ে গিয়েছিল সাড়া। কৌতূহলী হয়েছিলেন অনেকেই। ট্রেলার মুক্তির পর সেই পারদ চরমে উঠেছে।
রিভলভারের বদলে মন
সাহিত্য-নির্ভর ছবি। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা। মিতিন মাসি তাঁর প্রাণের চরিত্র। কে এই মিতিন? আসল নাম প্রজ্ঞাপারমিতা মুখোপাধ্যায়। ঘরোয়া, আটপৌরে। রাঁধতে পছন্দ করেন। তিনি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। কাজের সময় রিভলভারের পরিবর্তে ব্যবহার করেন নিজের মন। থার্ড আই নামে একটি গোয়েন্দা সংস্থা চালান। ঐন্দ্রিলা টুপুর তাঁর বোনঝি। টুপুর স্কুলে পড়ে। মিতিন মাসিকে সাহায্য করে। অনেকটা ফেলুদার তোপসের মতো। সুচিত্রা ভট্টাচার্য মূলত কিশোর পাঠকদের কথা ভেবেই মিতিন মাসির গল্পগুলো লিখেছেন। তবে কয়েকটি প্রাপ্তমনস্ক গল্পও আছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গার পটভূমি নিয়ে লেখা। ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’র পটভূমি সারান্ডার জঙ্গল। ছবিটা তৈরি হয়েছে ‘সারান্ডায় শয়তান’ গল্প নিয়ে।
আরও পড়ুন-সুপ্রিম–গুঁতোয় মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ বোস
ফ্যান ফলোয়ার
এর আগে ‘হাতে মাত্র তিন দিন’ গল্পটি নিয়ে ‘মিতিন মাসি’কে (Jongole Mitin Mashi) ফ্রেমে ধরেছিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। নাম ভূমিকায় সেবারও দর্শক-মন ছুঁয়ে ছিলেন কোয়েল। এবার তাঁকে দেখা যাবে চোরাশিকারিদের দমনে। কেন এত আগ্রহ ছবিটা ঘিরে? আসলে গোয়েন্দা গল্পের প্রতি বাঙালিরা বরাবরই দুর্বল। পছন্দ করেন রহস্য রোমাঞ্চ। তাই তো ব্যোমকেশ বক্সী, ফেলুদা, কিরীটী রায়, শবর, কাকাবাবুদের তুমুল চাহিদা। এই চরিত্রগুলো সামনে রেখে বহু ছবি তৈরি হয়েছে। বাজিমাত করেছে। মিতিন মাসির ক্ষেত্রেও ঘটেছে সেটাই। গোয়েন্দাসাম্রাজ্যে পুরুষদের একাধিপত্যে কিছুটা হলেও তিনি থাবা বসিয়েছেন। যাঁরা সাহিত্য-নির্ভর ছবি পছন্দ করেন, তাঁরা যতটা মুখিয়ে, ততটাই মুখিয়ে গোয়েন্দা কাহিনির ভক্তরা। এই ছবির ক্ষেত্রে আরেকটা প্লাস পয়েন্ট, মূল চরিত্রে কোয়েল মল্লিক। আগের তুলনায় ছবি কম করেন। তবু তাঁর ফ্যান ফলোয়ার কমেনি। বরং দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এখনও কোনও ইভেন্টে গেলে তাঁকে ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা দেখা যায়। মনে করা হচ্ছে, এই শ্রেণির দর্শকদের মধ্যেও প্রবল আগ্রহ রয়েছে ছবিটা ঘিরে। সবাই মিলে হলমুখো হবেন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভ্রজিৎ দত্ত, লেখা চট্টোপাধ্যায়, অসীম রায়চৌধুরী, বরুণ চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল জয়দীপ কুন্ডু প্রমুখ। ছবির চিত্রনাট্যকার অরিন্দম শীল এবং পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। সঙ্গীত পরিচালক বিক্রম ঘোষ। ক্যামেলিয়া প্রোডাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন রূপা দত্ত। জঙ্গল-কেন্দ্রিক ছবি। তাই ছবির বেশিরভাগ শ্যুটিং হয়েছে ছোটনাগপুর মালভূমির জঙ্গলে। মুক্তি পাবে ১৯ অক্টোবর। পুজোয়।
পুজোয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার উপর ভর করে চোরাশিকারিদের দমন করবেন মিতিন মাসি। তবে বক্স অফিসের লড়াই খুব সহজ হবে না কোয়েলের। একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে আরও তিনটি বড় ছবি। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দশম অবতার’। অভিনয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এ-ছাড়াও মুক্তি পাবে দেব অভিনীত এবং প্রযোজিত ‘বাঘা যতীন’। সেইসঙ্গে মুক্তি পাবে নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রক্তবীজ’। এই ছবির মাধ্যমে বহু বছর পর মূলধারার বাংলা ছবিতে ফিরছেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি একটা সময় বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রুল করতেন। ফলে এবার পুজোয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। দর্শক এবং সমালোচকদের বিশ্বাস, তার মধ্যেও স্কোর করে বেরিয়ে যাবেন মিতিন মাসি। দেবীপক্ষে জয় হবে নারীশক্তির।