সংগ্রাম থেকে সাফল্য, হেমন্তের আলো

দারিদ্র আর হতাশায় জর্জরিত হয়ে কলেজ-পড়াকালীন দু’বার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। সেই তিনিই কলেজ পাশ করার প্রায় এক বছরের মধ্যে হয়ে যান আইএএস অফিসার। তিনি হেমন্ত পারেখ। তাঁর রূপকথাময় জীবন নিয়ে লিখলেন সৌরভকুমার ভূঞ্যা

Must read

জিরো থেকে হিরো কিংবা গলি থেকে রাজপথ— হেমন্ত পারেখের ক্ষেত্রে এই কথা দুটি সুন্দরভাবে প্রযোজ্য। রাজস্থানের হনুমানগড়ের বিরানগাঁও গ্রামে অত্যন্ত গরিব পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা পুরোহিত। উপার্জন বলতে তেমন কিছু নেই। মায়ের দিনমজুরির অতি সামান্য উপার্জনে কোনেওরকমে সংসার চলে। চরম অভাব-অনটন সত্ত্বেও স্বামী-স্ত্রী চেয়েছিলেন তাঁদের মেয়ে আর ছেলে পড়াশোনা করুক।
গ্রামে ছেলেদের কোনও সরকারি বিদ্যালয় ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য গ্রামের সরকারি কন্যা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন হেমন্ত। এখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ভর্তি হন মহর্ষি দয়ানন্দ স্কুলে। এই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল মাত্র একজন। তাই যা কিছু পড়াশোনা নিজেকেই করতে হত। হেমন্ত ছিলেন অতি সাধারণ মেধার ছাত্র। অন্যান্য বিষয়ে মোটামুটি জ্ঞান থাকলেও ইংরেজিতে তিনি ছিলেন খুব দুর্বল। ইংরেজি গ্রামার সম্পর্কে বেসিক ধারণাই ছিল না তাঁর। যাই হোক, ষাট শতাংশ নম্বর পেয়ে তিনি দশম শ্রেণি পাশ করেন।

আরও পড়ুন-‘সিলিকন ভ্যালি’-তে তোড়জোড়, রাজ্যে আসছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার তথ্যপ্রযুক্তি বিনিয়োগ

বড় হলে কী হতে চাও বললে হেমন্তের জবাব ছিল ডাক্তার হবেন। অথচ ডাক্তারি পড়তে গেলে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে হয় সেটা জানা দূরে থাক, তিনি জানতেন না একাদশে আলাদা করে বিষয় নির্বাচন করতে হয়। পরিচিত বন্ধুরা এগ্রিকালচার নেওয়ায় তিনিও ওই বিষয় নিয়ে ভর্তি হয়ে যান। দ্বাদশে সত্তর শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন তিনি। বিএসসি এগ্রিকালচার নিয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য জেট (JET) পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। প্রথমবার এন্ট্রান্স টেস্টে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় পাশ করেন। সরকারি কলেজ। ফিজ অতি সামান্য। কিন্তু সেই টাকা জোগাড় করতে না পারায় কলেজে ভর্তি হতে পারেন না।
পড়াশোনা একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায় হেমন্তের। এই সময় তাঁর জীবনে ঘটে যায় বেদনাদায়ক ঘটনা। হঠাৎ করে তাঁর দিদিমা মারা যান। দিদিমা ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণা। তিনি তাঁকে পড়াশোনার ব্যাপারে সবসময় উৎসাহ দিতেন। খুব আঘাত পান হেমন্ত। তবে মারা গিয়েও এই দিদিমাই তাঁকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিয়ে যান।
দিদিমা যে বয়স্ক ভাতা পেতেন সেটা খরচ করতেন না। কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে টাকা দিয়ে গেলে তিনি জমিয়ে রাখতেন। বলতেন এই টাকা দিয়ে তিনি হেমন্তকে পড়াবেন। দিদিমার রেখে যাওয়া স্বল্প সঞ্চিত টাকা হেমন্তকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তিনি স্থির করেন প্রাইমারি শিক্ষক হবেন। তার জন্য জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হন। এখানে সব বিষয়ে পাশ করলেও ইংরেজিতে ফেল করে যান। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার পরও একই অবস্থা হয়। বেশ হতাশ হন তিনি। লজ্জায় ফেল করার কথা বাড়িতে জানাতে পারেন না। বাবা-মাকে মিথ্যে করে বলেন তিনি জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং (JBT) পাশ করে গেছেন। এখন সেন্ট্রাল টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (CTET) করতে চান। তাঁর কোচিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা বাড়ি থেকে কোনওরকমে ব্যবস্থা হয়। সেই টাকা দিয়ে সিটিইটি (CTET) না করে হেমন্ত ভর্তি হন একটি ইংরেজি কোচিং কোর্সে। কেননা ততদিনে তিনি বুঝে গেছেন ইংরেজির দক্ষতা বাড়াতে না পারলে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা বৃথা।
এই সময়কালে এমন একটি ঘটনা ঘটে যা হেমন্তের পরবর্তী জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। একদিন তিনি বাড়ি ফিরে দেখেন মা খুব কাঁদছেন। জানতে পারেন দফতরের কর্মচারী তাঁর প্রাপ্য মজুরি দেয়নি। মা তখন মনরেগা (MGNREGA)-তে দিনমজুরির কাজ করতেন। খাতায়-কলমে বেতন ২০০ হলেও হাতে পেতেন ৮০ টাকা। এটাকেই তাঁরা স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছিলেন। তবে একটা নিয়ম ছিল কেউ যদি বাড়ি থেকে জল নিয়ে গিয়ে শ্রমিকদের খাওয়ায় তাহলে বাড়তি ২০ টাকা পাবে। বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রের দূরত্ব ছিল প্রায় চার কিলোমিটার। বাড়তি কিছু উপার্জনের আশায় হেমন্তের মা অনেক কষ্ট করে বাড়ি থেকে জল নিয়ে গিয়ে শ্রমিকদের খাওয়ান। কিন্তু দফতরের কর্মচারী তাঁকে বাড়তি টাকা দেন না। মায়ের চোখের জল আর অন্যায় দেখে স্থির থাকতে পারেন না হেমন্ত। তিনি সেই দফতরে যান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করেন কেন তাঁর মায়ের টাকা দেওয়া হয়নি। সেই কর্মচারী নানান অফিসিয়াল নিয়মের কথা বলে তাঁকে ভাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। হেমন্ত তাঁকে বলেন সরকারি নিয়মের নথি দেখাতে। এই কথা শুনে সেই কর্মী খুব রেগে যান। তাঁকে অপমান করে বলেন, ‘‘তুই কি কোথাকার কালেক্টর নাকি?’’ হেমন্ত জানতেন না কালেক্টর বলে কিছু হয়। তাঁর মনে হয়িছেল তিনি বোধহয় কনডাক্টর বলতে চেয়েছেন। যাই হোক, প্রাপ্য টাকা ছাড়া অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয় হেমন্তকেও।

আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ, বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থে নয়া স্বাস্থ্য প্রকল্পের পথে রাজ্য

ইংরেজি কোচিং নেওয়ার সময় বন্ধু পঙ্কজের পরামর্শে তিনি আইসিএআর-এ ফর্ম ফিলাপ করেন। এটি পাশ করলে কলেজে স্নাতক স্তরে পড়ার সুযোগের পাশাপাশি এনটিএ থেকে মাসিক ৩০০০ টাকা স্কলারশিপ পাবেন। প্রথমবার পরীক্ষায় কম্পিউটার বিভ্রাট হয় তাঁর। সৌভাগ্যবশত সেই পরীক্ষাটি বাতিল হয়। দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সেন্টার পড়ে বাইরে। হেমন্ত যেতে চান না। কেননা বাইরে থেকে পরীক্ষা দেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য তাঁর ছিল না। বন্ধু পঙ্কজ একপ্রকার জোর করে তাঁকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যায় এবং তাঁর থাকার খরচ বহন করে। এবারের পরীক্ষায় পাশ করেন হেমন্ত এবং শ্রীকরণ নরেন্দ্র এগ্রিকালচারাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।
কলেজে ভর্তি ও হস্টেল ফি বাবদ প্রথমেই দরকার ছিল প্রায় চোদ্দো হাজার টাকা। হেমন্ত বাড়ি থেকে হাজার চারেক টাকা পান। এক পরিচিত আত্মীয়ের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ধার করেন। কলেজে ভর্তি হলেও নতুন সমস্যা এসে হাজির হয়। ভর্তির চারদিন পরেই ছিল প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা। যারা স্টেট লেভেল থেকে এসেছিল তাদের সিলেবাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি আইসিএআরের মাধ্যমে এসেছিলেন, আর পরীক্ষা বিভ্রাটের কারণে ভর্তি হতে দেরি হয়ে যায়। কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষা দিতে হয় তাঁকে। দুর্ভাগ্যবশত একটি বিষয়ে ফেল করে যান। তার ফলে এনটিএ-র স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত হন। কেননা এনটিএ-র নিয়মে কেউ কোনও বিষয়ে ফেল করলে
তার স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে। চোখে অন্ধকার দেখেন হেমন্ত। সেই সময় অল ইন্ডিয়া পারেখ মহাসমাজ তাঁর পড়াশোনার খরচ দেওয়ার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু দু’বছর পর কোনও কারণ ছাড়াই তারা সাহায্য বন্ধ করে দেয়। মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েন হেমন্ত। ভেবে পাচ্ছিলেন না বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে মুখ দেখাবেন কী করে। এতটাই হতাশ হন যে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবেন। গলায় বেল্টের ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন তিনি। সৌভাগ্যবশত শেষমুহূর্তে তাঁর এক বন্ধু দেখে ফেলেন এবং তাঁকে উদ্ধার করেন। এরপর এক স্বস্তিক পরিবার দেড় বছর তাঁর পড়াশোনার খরচ দেয়। বাকি ছয়মাস বন্ধুরা সাহায্য করে। ষাট শতাংশ নম্বর নিয়ে স্নাতক পাশ করেন তিনি।
কলেজের একটি ঘটনা তাঁর ভাবনাচিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রথম বর্ষে র্যাগিং-এর সময় বড় ক্লাসের ছেলেরা তাঁদের কাছে জানতে চাইছিল ভবিষ্যতে তারা কী হতে চায়। জীবনের লক্ষ্য বলতে কিছুই ভাবা ছিল না হেমন্তের। তিনি তাদের বলেন, কী হবেন তিনি স্থির করেননি। তবে তারা যদি কিছু বলে দেয় তিনি সেটা হওয়ার চেষ্টা করবেন। যারা র্যাগিং করছিল তারা বিদ্রূপ করে বলে, তাহলে আইএএস অফিসার হও। কেননা তাঁরা জানতেন আইএএস হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন-অভয়া সেলের সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

আইএএস অফিসার! সেটা আবার কী? কী করে হওয়া যায়? এসব কিছুই জানা ছিল না হেমন্তর। তিনি তাঁর এক বন্ধুকে ফোন করেন। বন্ধু জানায় ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে আইএএস অফিসার হওয়া যায়। এটি ভারতের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। তিনি হেমন্তকে কিছু ইউটিউব লিঙ্ক পাঠান। সেসব ঘাঁটতে ঘাঁটতে হেমন্ত জানতে পারেন আইএএস পাশ করলে কালেক্টর হওয়া যায়। এই একটি তথ্য নাড়িয়ে দেয় হেমন্তকে। মনের মধ্যে ফিরে অতীতের সেই অপমান। সেদিনই তিনি স্থির করেন আইএএস অফিসার হবেন।
ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আলাদা করে কোচিং নেওয়ার সামর্থ্য ছিল না হেমন্তের। সকাল ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা তিনি কলেজ যেতেন। সাড়ে পাঁচটা থেকে লাইব্রেরিতে সময় কাটাতেন। তাঁর জেদ আর আর্থিক অবস্থা দেখে লাইব্রেরিয়ান তাঁকে ফ্রিতে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেন। রাত একটা দেড়টা পর্যন্ত তিনি লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতেন। তাঁর জীবনের ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠে বই। তাঁর আইএএসের প্রস্তুতির খবর শুনে অনেকেই তাঁকে ঠাট্টা বিদ্রূপ করতে থাকে। আসলে সাধারণ মেধার একটি ছেলের আইএএসের প্রস্তুতি তাদের কাছে পাগলামি মনে হয়েছিল। হেমন্ত তখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তাঁরও একসময় মনে হয় যেভাবে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাতে স্বপ্ন পূরণ হবে না। খুব ডিপ্রেশনে চলে যান। আবারও তিনি একইভাবে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। এবারও কয়েকজন বন্ধু দেখে ফেলায় তিনি বেঁচে যান। চতুর্থবর্ষে পড়ার সময় তিনি প্রথমবার ইউপিএসসির প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেন কিন্তু পাশ করতে পারেন না।
কলেজ শেষ হওয়ার পর হেমন্তের কাছে দুটো পথ ছিল। বাড়ি ফিরে যাওয়া কিংবা ইউপিএসসির প্রস্তুতি নেওয়া। হেমন্ত বুঝতে পারেন ফিরে গেলে তাঁর স্বপ্ন কোনওদিনই পূরণ হবে না। ইতিমধ্যে আইএএস হওয়ার বাসনা মনের মধ্যে তীব্র ভাবে চেপে বসেছে। সেই স্বপ্ন সফল করতে গেলে চাই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নেন হেমন্ত। তিনি স্থির করেন প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য দিল্লি যাবেন। এর জন্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ। বাড়িতে ফোন করে জানালে গরিব বাবা বলেন তিনি বাড়ি বিক্রি করে টাকা দেবেন। কিন্তু হেমন্ত চাননি বাড়ি বিক্রি হোক। দিদির বিয়ে এবং আরও কিছু কারণে ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কে ঋণ হয়ে গিয়েছিল। এরপর বাড়ি বিক্রি হয়ে গেলে সকলের জীবনে দুর্দশা নেমে আসবে। জেদ, সংকল্প আর আত্মবিশ্বাস সম্বল করে সঙ্গে মাত্র ১৪০০ টাকা নিয়ে তিনি দিল্লি আসেন। এখানে কিছুদিন এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন।
কথায় আছে ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়। দিল্লিতে থাকাকালীন এক ব্যক্তির পরামর্শে তিনি দেখা করেন এখানকার এক পারেখ ব্যবসায়ী পরিবারের সঙ্গে। সব শোনার পর তাঁরা তাঁর পড়াশোনার খরচ বহন করতে রাজি হন। চলার পথে বেশ কিছু মানুষকে তিনি পাশে পেয়েছেন যাঁরা তাঁকে পড়াশোনার ব্যাপারে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেছেন। প্রস্তুতিতে কোনওরকম ফাঁক রাখেন না তিনি। প্রিলিমিনারি পাশ করেন। এরপর মেইনসও। ইন্টারভিউ সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না তাঁর। সেই সময় অরবিন্দ বলে এক সিনিয়র তাঁকে তিনমাস ইন্টারিভিউ-এর প্রশিক্ষণ দেন। তিনি নিজেও ছিলেন পরীক্ষার্থী। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার কোট ছিল না হেমন্তের। অরবিন্দ নতুন কোট তৈরি করাবেন বলে বাড়ি থেকে টাকা চান। সেই টাকায় তিনি হেমন্তকে কোট বানিয়ে দেন, বুট কিনে দেন। ইন্টারভিউ ভাল হয় হেমন্তর। ৮৮৪ র্যাঙ্ক করেন তিনি।
স্বপ্ন সফল হয় হেমন্তর। রাজস্থানের এক অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা, মধ্যমেধার একটি ছাত্র নিজের জেদ, নিষ্ঠা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। একদিন যে মানুষ তাঁকে কালেক্টর বলে উপহাস করেছিল, অপমান করেছিল সেই মানুষদের সামনে তিনি নিজেকে উপস্থাপিত করেন একজন আইএএস অফিসার হিসেবে। এ-যেন রূপকথার গল্পের মতো।

আরও পড়ুন-জোকা আইআইএমে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে চরম ধোঁয়াশা

হেমন্তের জীবনের চলার পথে ছিল নানান প্রতিবন্ধকতা। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল আর্থিক অনটন। কিন্তু একথা সত্যি যখনই অর্থের অভাবে তাঁর পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে তখনই কোথাও না কোথাও থেকে তিনি আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। তাঁর জীবনের এগিয়ে যাওয়ার পথে বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষের অবদান রয়েছে। আর সবসময় পাশে পেয়েছেন বাবা-মাকে। সংসারের তীব্র অনটনের মাঝেও পড়াশোনার ব্যাপারে বাবা-মা সবসময় তাঁকে সমর্থন করেছেন। হেমন্ত প্রমাণ করে দিয়েছেন লক্ষ্যে অবিচল থেকে জেদ আর অত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে কোনও সমস্যাই পাহাড় হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
আইএএস অফিসার হয়ে একদিনের অপমানের জবাব দিয়েছেন তিনি। তিনি চান আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যে সকল ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছে না তাদের পাশে দাঁড়াতে। ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকজনকে তিনি সাহায্য পাইয়ে দিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে রয়েছে একটি এনজিও খোলার, যার লক্ষ্য হবে তাঁর মতো হেমন্তদের পাশে দাঁড়ানো। শুধু নিজে সফল হয়ে থেমে থাকতে চান না তিনি। আরও অনেকের জীবনের সাফল্যের আলো জ্বালার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এখানেই তাঁর মহত্ত্ব।

Latest article