প্রতিবেদন : কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বেনজির হারের পর দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব উসকে দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গড়কড়ি (Minister Nitin Gadkari)। কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বারবার এসে রাজ্যজুড়ে ১৯টি জনসভা ও ৬টি রোড শো করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিজেপির প্রচারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ করেছিলেন ১৬টি জনসভা ও ১৫টি রোড শো। পিছিয়ে ছিলেন না বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাও। কর্নাটকে ১০টি জনসভা ও ১৬টি রোড শো করেন তিনি। প্রচারপর্বে এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী সহ গেরুয়া ব্রিগেডের প্রথম সারির একাধিক নেতা। মাটি কামড়ে পড়েছিলেন কর্নাটকের ভূমিপুত্র তথা বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ। মোদি, শাহ, নাড্ডার হাইভোল্টেজ প্রচারে সর্বশক্তিতে মেরুকরণ ও জাতীয়তাবোধের হিড়িক তোলার চেষ্টা হয়। শীর্ষ নেতাদের প্রচারে বিপুল ব্যয়ের পাশাপাশি যাত্রাপথের পুরোটাই মুড়ে দেওয়া হয়েছিল বিজেপির ব্যানার ও পোস্টারে। চোখ ঝলসানো প্রচার ও মোদি সরকারের সব চেষ্টার পরেও কর্নাটকে বিজেপির বিপর্যয় ঠেকানো যায়নি। অপ্রত্যাশিত খারাপ ফলাফল করে মাত্র ৬৬ আসনে জিতেছে বিজেপি। আর এরপরেই কার্যত কটাক্ষ করে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি (Minister Nitin Gadkari) বলেছেন, পোস্টার, ব্যানার দেখিয়ে ভোট পাওয়া যায় না। মানুষের মন পেতে হলে জনসেবা করতে হয়। তাঁদের পাশে থাকতে হয়। দাক্ষিণাত্যে বিজেপির সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের আবহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্যকে মোদি-শাহের প্রতি তির্যক কটাক্ষ হিসাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ঘটনাচক্রে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গড়কড়ি দলের অন্দরে মোদি-শাহের কট্টর রাজনীতির সমালোচক হিসাবেই পরিচিত।
ভোটমুখী রাজস্থানের শিকার জেলায় এক অনুষ্ঠানে গড়কড়ির এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। রাজস্থানে গিয়ে একথা বললেও কর্নাটক নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য মোদি-শাহকে খোঁচা বলেই মনে করছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে, এই মন্তব্য করে প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি প্রকারান্তরে কাকে নিশানা করলেন? রাজনৈতিক মহল তো বটেই, এমনকী, বিজেপির একাংশও মনে করছেন গড়কড়ি পরোক্ষভাবে মূলত মোদি, শাহ, নাড্ডাকেই নিশানা করেছেন। কর্নাটকের নির্বাচনী ব্যর্থতার দায়ভার যে শীর্ষ নেতৃত্ব এড়াতে পারেন না তাও বোঝাতে চেয়েছেন। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এই ত্রয়ী। গড়কড়ির মতো আরও অনেক বিজেপি নেতাই ছিলেন ব্রাত্য। এমনকী কর্নাটকে মাঝপথে মুখ্যমন্ত্রী বদলের সিদ্ধান্তও মোদি-শাহ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে এসব কিছুই কাজে আসেনি। উল্টে বিজেপিমুক্ত হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ভারত।
আরও পড়ুন- বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, এগরার বিস্ফোরণে NIA তদন্ত হোক
প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর ভোটে নীতীন গড়কড়ি নাগপুর থেকে সাড়ে তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে জেতেন। পরের লোকসভা ভোটেও প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে প্রার্থী হলেও ভোট ভিক্ষা করবেন না বলে আগাম ঘোষণা করেছেন গড়কড়ি। জানিয়েছেন, পোস্টার, ব্যানার লাগানো, সভা-সমিতি, রোড-শো কিছুই করবেন না। এমনকী কাউকে এক কাপ চা’ও খাওয়াবেন না।
কর্নাটকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগ তো ছিলই। এর সঙ্গে দিল্লির নেতাদের ডেলি প্যাসেঞ্জারি ও চোখধাঁধানো প্রচারও সাধারণ মানুষ ভালভাবে নেয়নি। বেঙ্গালুরুতে প্রধানমন্ত্রীর দু’দিন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা আটকে রোড-শো নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছে। রাজস্থানে আগামী নভেম্বরে বিধানসভা ভোট। প্রচারের বহরে সে-রাজ্যে এখনই অনেক এগিয়ে গড়কড়ির দল। পোস্টার, ব্যানার, কাট আউটে ছেয়ে আছে চারপাশ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোদির বিশাল কাট আউট। যথারীতি, মোদিকে সামনে রেখেই এখানেও ভোটভিক্ষার পরিকল্পনা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।