প্রতিবেদন : এককথায় নজিরবিহীন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Gangopadhyay) মুখোশ খুলে গেল৷ এতটাই বেআব্রু হল তাঁর মুখ যেখানে পেশাগত সহকর্মীকে সমস্ত শিষ্টাচার ছাপিয়ে কূট রাজনীতিবিদের মতো আক্রমণ করে বসলেন৷ সিপিএম-বিজেপি আঁতাত স্পষ্ট হয়ে গেল৷ এমনকী ভরা এজলাসে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তর সঙ্গেও বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়৷ শুধু তাই নয়, সাধারণত নিয়ম অনুযায়ী এজলাসে বিচারপর্ব চলাকালীন তার সরাসরি সম্প্রচার হয়৷ এদিন, গায়ের জোরে তা-ও বন্ধ করে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়৷ কিশোর দত্ত এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে তাঁকেও কুৎসিতভাবে আক্রমণ করেন তিনি৷ এমনকী ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে উপেক্ষা করে নিজের দেওয়া সিবিআই তদন্তের রায় বহাল রাখেন৷
বৃহস্পতিবার নিজের এজলাসে বসেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay) তীব্র আক্রমণাত্মক মন্তব্য করলেন বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে থাকা ব্যক্তির মতো তিনি আচরণ করছেন বলে মন্তব্য ছুঁড়ে দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আশ্চর্যজনকভাবে ভরা এজলাসের মধ্যেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করা হবে না?
অবাক কাণ্ড! এই নিয়ে একটি নির্দেশনামাও লিখে ফেলেছেন তিনি। হাইকোর্ট সূত্রে খবর, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আপত্তিকর মন্তব্য কানে আসা মাত্রই নিজের এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান বিচারপতি সেন। নিজের এজলাসে বসে একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে আর-এক বিচারপতির এই ধরনের আচরণে রীতিমতো ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন মহলে। তীব্র আলোড়ন আইন-মহলে। প্রশ্ন উঠেছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নিজেরই রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে। অনেকেই বলছেন, বিজেপি এবং সিপিএমের মধ্যে গোপন আঁতাত দ্রুত স্পষ্ট হয়ে উঠছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আচরণে, কথাবার্তায়। বেরিয়ে পড়েছে আসল রূপ। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, নিজের এক্তিয়ারের সীমারেখা ছাড়াচ্ছেন না তো বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়? নিজের রাজনৈতিক ইচ্ছে চরিতার্থ করতে গিয়ে তিনি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছেন৷ এবং বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক খারাপ নজির তৈরি করছেন৷ এর তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানায় তৃণমূল কংগ্রেস৷ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচারকের আসন ছেড়ে কোর্ট সাংবাদিকতায় আসা উচিত। পাশাপাশি ব্যঙ্গের সুরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে বিচারপতি অমৃতা সিনহার মুখপত্র কিনা তাও জানতে চান কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, কোর্ট আমাদের কাছে বিচারের শেষ ভরসা। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে যে ঘটনা ঘটছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো দু-একজন বিচারপতি গত কয়েকমাস ধরে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেই চলেছেন। অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতা করে মামলা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করছেন, মামলার বাইরে মন্তব্য করছেন, এমনকী আদালতের বাইরেও তৃণমূল-বিরোধী মন্তব্য করছেন, যা অবাঞ্ছিত। এবার ডিভিশন বেঞ্চের একজন বিচারপতি সম্পর্কে মন্তব্য করে বসলেন। আসলে তাঁর নির্দেশে একের পর এক স্থগিতাদেশ হচ্ছে বলে তিনি একটু হতাশায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন- নজরে এবার নীতীশ, আপের পর ক্ষুব্ধ এবার জেডিইউ প্রধান
আসলে মেডিক্যালে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বুধবার যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন তা খারিজ করে দেয় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। কোনও অজুহাতেই ডিভিশন বেঞ্চের সেই নির্দেশ পাশ কাটিয়ে যেতে পারেননি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এতেই মেজাজ হারান তিনি। ঠিক কী হয়েছিল ব্যাপারটা?
বুধবারের পর বৃহস্পতিবার, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবার সজোরে ধাক্কা খান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে দায়ের করা সিবিআইয়ের এফআইআরও বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। শুধু তাই নয়, সিবিআইকে ডিভিশন বেঞ্চের স্পষ্ট নির্দেশ, এই মামলার সূত্রে আদালত থেকে এখনও পর্যন্ত যা যা নিয়েছে তারা, তা ফিরিয়ে দিতে হবে অবিলম্বে। অর্থাৎ অজুহাত দেখিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশ পাশ কাটিয়ে নিজের বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখার প্রচেষ্টায় রীতিমতো ধাক্কা খেলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।