ভারতের কায়দায় জল বন্ধ করে পাকিস্তানকে শিক্ষা দেবে কাবুল

আফগানিস্তান সীমান্তে কুনার নদীর উপর বাঁধ তৈরি করে পাকিস্তানের দিকে জল আটকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিবান শাসক।

Must read

কাবুল : জল-বন্ধের কূটনৈতিক অস্ত্র প্রয়োগ। পাকিস্তানকে সবক শেখাতে নয়াদিল্লির পথে হাঁটতে চায় কাবুল।
আফগানিস্তান সীমান্তে কুনার নদীর উপর বাঁধ তৈরি করে পাকিস্তানের দিকে জল আটকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিবান শাসক। এই কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা মৌলভি হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তালিবানের ভারপ্রাপ্ত জলসম্পদ মন্ত্রী মোল্লা আব্দুল লতিফ মনসুর ‘এক্স’-এ জানিয়েছেন, আফগানদের নিজেদের জল ব্যবহারের অধিকার আছে এবং বাঁধ তৈরির কাজ দেশের কোম্পানিই করবে, কোনও বিদেশি কোম্পানি নয়।

আরও পড়ুন-সরকারি চাকরিতে নিয়োগই হচ্ছে না, বেকারত্ব কমবে কী?

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, কাবুল তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান নামে একটি জঙ্গিগোষ্ঠীকে সাহায্য করছে। এই অভিযোগের পর থেকেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিতর্কিত সীমান্ত বা ডুরান্ড লাইনে অশান্তি বেড়েছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে তালিবান শাসক জল আটকানোর সিদ্ধান্ত নিল। ভারতের কাছ থেকে পাকিস্তান যে ধরনের আঘাত পেয়েছিল, তালিবানের এই নয়া সিদ্ধান্তে তারই ছায়া। এর আগে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার পর ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে পাকিস্তানের দিকে জল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। কুনার নদী প্রায় ৫০০ কিলোমিটার লম্বা। এটি পাকিস্তানে শুরু হয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে এবং তারপর আবার পাকিস্তানে ফিরে কাবুল নদীর সাথে মিশেছে। এই নদীটি পাকিস্তানের দিকের অংশে চাষাবাদ, পানীয় জল ও বিদ্যুৎ তৈরির জন্য খুব জরুরি। যদি আফগানিস্তান এই নদীর উপর বাঁধ তৈরি করে, তাহলে পাকিস্তান বড় ধরনের জল-সমস্যায় পড়বে। কারণ ভারতের জল কমানোর পর এবার এই নদী থেকেও জল কমে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, ভারতের সাথে পাকিস্তানের যেমন জলচুক্তি আছে, আফগানিস্তানের সাথে এই নদীর জল ভাগাভাগি করার কোনও চুক্তি নেই। ফলে আফগানিস্তানকে থামানোর কোনও কূটনৈতিক হাতিয়ার বা সহজ পথ পাকিস্তানের হাতে নেই। এতে দু-দেশের মধ্যে আরও বড় ধরনের অশান্তি ও গোলযোগ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা দখলের পর থেকে তালিবান নিজেদের দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। তারা বাঁধ আর খাল তৈরি করছে, যাতে নিজেদের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এর উদাহরণ হল উত্তর আফগানিস্তানের বিতর্কিত কোশ টেপা খাল। এই খাল তৈরি হলে বিশাল শুষ্ক জমি চাষের উপযুক্ত হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে আম দরিয়া নদীর প্রায় ২১ শতাংশ জল কমে যেতে পারে, যা আগে থেকেই জলকষ্টে থাকা উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো দেশগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করবে। প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগেই তালিবান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে এসেছিলেন। সেখানে তিনি হেরাত প্রদেশে বাঁধ তৈরি এবং সেটির দেখাশোনার কাজে ভারতের সমর্থনের প্রশংসা করেন। ভারত ও আফগানিস্তানের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, দু-পক্ষই জলের সঠিক ব্যবহারের লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতায় গুরুত্ব দেবে।

Latest article