মৌসুমী দাস পাত্র, নদিয়া: অসি ছেড়ে ধর মা বাঁশি /রামপ্রসাদের এই বাসনা। অষ্টাদশ শতকের শাক্তসাধক কবি রামপ্রসাদ সেনের লেখা এই লাইনটি শাক্তধর্মের কঠিন থেকে নমনীয় জায়গায় ফেরার দিকনির্দেশ করে। বলাবাহুল্য মহাপ্রভু চৈতন্যর প্রভাবেই তা সম্ভব হয়েছিল। বৈষ্ণবভাবের রেশ ব্যাপকভাবে পড়ায় একটা সময়ে থমকে গিয়েছিল শক্তি আরাধনা। কিন্তু সত্যিই বিস্ময় জাগে চৈতন্যের মাতুলালয় বেলপুকুর গ্রামে শাক্ত উপাসনা দেখে। আজও একই ঐতিহ্য বহন করে এই গ্রাম।
বাড়ির পুজো (Nadia- Kali Puja) থেকে শুরু করে বারোয়ারি, ছোট-বড় মিলিয়ে তিনশোর বেশি কালীপুজো এবারও হচ্ছে জাঁকজমকের সঙ্গে। ধুবুলিয়া থানার বেলপুকুর বরাবরই এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম। বেলপুকুরের বাচস্পতি পাড়াতে মহাপ্রভু চৈতন্যর দাদু নীলাম্বর চক্রবর্তী থাকতেন। তাঁর কন্যা শচীদেবী। জানা যায়, চৈতন্য মা শচীদেবীর সঙ্গে দাদুর বাড়িতে আসতেন। পরবর্তী সময়ে মহাপ্রভুর বৈষ্ণবধর্ম প্রচারে আলোড়ন পড়ে যায় সমাজে। চারিদিকে এই প্রচারের আলো ছড়িয়ে পড়ে। তা হলে কেমন করে তাঁর মাতুলালয়ে এই শক্তিসাধনা? জানা যায়, গ্রামের চারদিকে একসময় ঘন জঙ্গল ছিল। দেবদারু গাছে ঘেরা ছিল এলাকা। পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত ভাগীরথী নদী। উত্তরে তাতলার খাল। দক্ষিণে ছাড়িগঙ্গা। এরকম পরিবেশ তন্ত্র সাধনার পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। নদিয়ার সেই সময়ের রাজা রুদ্র রায়ের আমলে বেলপুকুর গ্রামে আসেন ঢাকার বিক্রমপুর কনকসার থেকে কালীর সাধক রামচন্দ্র ভট্টাচার্য। তিনি পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে মহাশঙ্খ বা জপমালা নিয়ে সাধনা করেন। রাজা রুদ্র রায় (১৬৮৩-১৬৯৪) রামচন্দ্রকে জমি দান করেন। একইসঙ্গে এই গ্রামে শক্তি আরাধনার বিষয়টিও জানান। পুজোর জন্য খরচও প্রদানও করেন তিনি। বলছেন গ্রামবাসীরা। অমাবস্যার রাতে অপমৃত্যু হওয়া সধবা চণ্ডালের আঙুলের কর, নাড়ি দিয়ে তৈরি হয় মহাশঙ্খ মালা। সেই মালা ও মাথার খুলি আজও রয়েছে ভট্টাচার্য পরিবারে। মহাশঙ্খর মালাটি খুলিতে ঢুকিয়ে রাখা হয়। একসময় রামচন্দ্রর শুরু করা কালীপুজো গ্রামে আজ রীতিমতো বিস্তৃতি লাভ করেছে। তাঁর সন্তানদের করা পুজো (Nadia- Kali Puja) বড়, মেজ, সেজ, ন’ বাড়ির পুজো নামে বিখ্যাত হয়েছে।
আরও পড়ুন-বন্যা-বিধ্বস্তদের জন্য বিশেষ দুয়ারে সরকার শিবির চালু