মানস দাস, মালদহ : যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে! কথাটা মেয়েদের ক্ষেত্রে চালু হলেও পুরুষেরাও কম যান না। তাঁরাও পুজোর সময় লুচি ভাজেন, ভোগ রাঁধেন, ফল কাটেন, মন্দিরে ধূপ-ধুনো জ্বালানো-সহ পুজোর জোগাড়ের দায়িত্বেও থাকেন। এই পরম্পরা দু-এক বছর নয়, তিনশো বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে ইংলিশবাজারের আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়িতে। কংসবণিক সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর অর্থেই এই পুজো হয়। ৩৫০ বছর আগে মহানন্দা নদীর নিমতলি ঘাটে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায় একটি শিলা।
আরও পড়ুন-উদয়ন গুহের নাম ঘোষণা হতেই উল্লাস
পরবর্তীকালে তৎকালীন জমিদার গিরিজাকান্ত দাস সেই শিলা প্রতিষ্ঠিত করে পুজো শুরু করেন। পরে তিনি এই পুজো অর্পণ করেন আদি কংসবণিক সম্প্রদায়ের হাতে। সেই পুজোই আজকের দুর্গাবাড়ির পুজো। সঙ্গে থাকেন রাম, লক্ষ্মণ, জয়া, বিজয়া-সহ ২২ দেবদেবী। বড় বাজেটের নয়, তবুও শহরের অন্যতম হয়ে উঠেছে এই পুজো। মহাষষ্ঠীর দিন উন্মোচন হয় মাতৃপ্রতিমার। বিশালাকার একচালায় স্থাপিত মাতৃমূর্তি। মহাসপ্তমীর সকালে নবপত্রিকার প্রবেশ থেকে দশমীর সকালে অপরাজিতা পূজা অবধি মহাসমারোহে চলে আরাধনা। অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে কিংবা সন্ধিপুজোয় ভক্তদের ঢল নামে।
আরও পড়ুন-মুক্তি পেল রূপঙ্করের নতুন গান
দশমীর সন্ধ্যায় ভক্তরা কাঁধে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যান মহানন্দার নিমতলি ঘাটে। সেখানে নৌকায় পুনরায় একই বেশে সাজানো হয় তাঁকে। তারপর নিমতলি ঘাট থেকে মা রওনা দেন মিশন ঘাটের উদ্দেশে। সেখানে তাঁর অপেক্ষায় থাকেন সাহাপাড়ার মা দুর্গা। দুই পক্ষের কুশল বিনিময় অতীত-পরম্পরা। মালদহের আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়ি কমিটির সভাপতি নিমাইচন্দ্র দত্ত বলেন, নিখুঁত উপচারে মায়ের পুজো সম্পূর্ণ হয়। এই পুজো জেলার মধ্যে অন্যতম। বাইরে থেকে চাঁদা তোলা হয় না। ছেলেরা পুজোর আয়োজন করেন। ১২৭৫ সালে দুর্গাবাড়ি মন্দির নির্মাণ হয়। এরপর থেকে একই পরম্পরা মেনে পুজো হয়ে চলেছে এখানে।