এই নিয়ে তৃতীয় দফায় সোনাদা গুপ্তধন খুঁজতে বেরোবে। সঙ্গে আগের মতোই আবির আর ঝিনুক। রহস্য, রোমাঞ্চ, অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে সোনাদা-আবির-ঝিনুকের রসায়ন আর সেই সঙ্গে ইতিহাসের অনুসন্ধান, সব মিলিয়ে পুজোর জন্য জম্পেশ ককটেল বরাদ্দ করেছেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’, ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ দর্শক পছন্দ করেছেন দারুণ রকম। প্রায় আড়াই বছর পর সোনাদার ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ অভিযান দেখতেও যে তাঁরা ভিড় জমাবেন হল-এ সে নিয়ে সন্দেহ নেই। সেটা এজন্যেই আরও, সোনাদার দর্শক আট থেকে আশি সবাই। এ জন্যে আরও, সপরিবারে পুজোর ছবি বহুদিন পর! তাছাড়া আগের দুটি ছবির থেকে লুক, ফিল, গ্র্যাঞ্জার সব দিক থেকেই এই ছবি আরও একটু বড় মাত্রায়।
বাংলার প্রথম সার্বভৌম রাজা শশাঙ্কের রাজধানী ছিল বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ। আজও প্রচুর মিথ প্রচলিত অঞ্চলে। শুধু মিথই নয়, হিউয়েন সাং-এর ভ্রমণ কাহিনিতে কর্ণসুবর্ণের (Karnasubarner Guptodhon) বিবরণ রয়েছে, নানাবিধ উল্লেখ আছে। ঐতিহাসিক এই প্রেক্ষাপটকে ধরেই কাহিনি রচনা করেছেন ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মাটির নিচে গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া ও তা উদ্ধারের অভিযানে যাবে সোনাদা। কর্ণসুবর্ণের (Karnasubarner Guptodhon) ঐতিহাসিক সৌধ, অতীতের অস্তিত্ব, গা ছমছমে জঙ্গল, শত্রুদের প্রতিকূলতা সবকিছুর মুখোমুখি হয়ে ও মোকাবিলা করেই সোনাদা বাংলার গচ্ছিত সম্পদ উদ্ধার করবে! রীতিমত রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা জার্নি বলা যায় যা ছোট থেকে বড় সবাইকেই পুজোর আবহে ভরপুর বিনোদন জোগাবে।
ব্যোমকেশ, ফেলুদার পাশাপাশি ইতিহাসের অধ্যাপক সুবর্ণ সেন ওরফে সোনাদার চরিত্রে একই রকম জনপ্রিয় আবির। সবক’টিই ফ্র্যাঞ্চাইজি ছবি। এ নিয়ে আবিরের নিজস্ব কিছু বক্তব্য আছে, “একটা সময় অনেকেই বলতেন, আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি ছাড়া নাকি কাজ করি না! ব্যাপারটা যে পুরোটাই কো-ইন্সিডেন্স সেটা কিন্তু সকলেই বুঝতেন, তবু এই অভিযোগ করতেন আড়ালে-আবডালে। তারপর দেখি, যাঁরা এসব বলছেন তাঁদের অনেকে নিজেরাই ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিল্ম করছেন!” ঘটনা হল, যে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি বা সিকোয়েল তখনই তৈরি হয় যদি দর্শক পছন্দ করেন। আবির আরও জানিয়েছেন, “ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিল্মের পজিটিভ দিকগুলো হল, দর্শক একবার যখন পছন্দ করেছেন, তখন পরেরগুলোর ক্ষেত্রে দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। কারণ তাঁরা আশা করেন পরেরটা আরও ভাল হবে, আরও এক্সাইটিং হবে।” কিন্তু দর্শকদের প্রত্যাশাটা চাপ হয়ে যায় না? এ প্রশ্নের উত্তরে অভিনেতা জানান, “চাপ নয়, এটা চ্যালেঞ্জ! শুধু আমার কাছে নয়, পরিচালক থেকে বাকি অভিনেতা, সবার কাছেই এটা একটা চ্যালেঞ্জ। আর আমি এই চ্যালেঞ্জগুলো নিতে খুবই মজা পাই। সোনাদার জন্যে আরও বেশি পাই একারণেই যে, সোনাদার কিন্তু কোনও সাহিত্যের ভিত নেই। দর্শক আগে থেকে গল্পগুলো জানেন না। সরাসরি পর্দায় দ্যাখেন। এটা কিন্তু খুব কম ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্ষেত্রেই হয়েছে। এর ক্রেডিট কিন্তু ধ্রুবদারই।’’
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর ছবির ঘোষণা করেছিলেন ধ্রুব। তারপর চুটিয়ে শ্যুটিং করেছেন মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গের আরও নানা জায়গায়। সোনাদার ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁর কাছে ভীষণ স্পেশ্যাল। বলছিলেন সেকথাই। সোনাদাকে দিয়েই তাঁর বাংলা ছবির জগতে পা দেওয়া। আরও বলছিলেন, “নিছক রহস্যভেদ বা গুপ্তধন সন্ধান নয়, সোনাদার অভিযানগুলির মাধ্যমে আমি বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক জায়গাগুলিকেও সামনে আনতে চাই। বাংলার ইতিহাস এতটাই সমৃদ্ধ আর ইতিহাসে এমন অনেক অজানা কাহিনি আছে যা জানলে মানুষ বিস্ময়বোধ করবে। তাই সোনাদার অভিযান আমি সবসময় বাংলার মধ্যেই রাখব ভেবে রেখেছি।” আসলে শুধু সোনাদা বলেই নয়, টলিউডে পরিচালকের কেরিয়ার গ্রাফ দেখলেই বোঝা যায়, বাংলার ইতিহাস, তার গৌরবময় অধ্যায় নিয়ে তাঁর বিশেষ ভাললাগার কথা। সে গত বছর পুজোয় তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি, ‘গোলন্দাজ’ই হোক বা আগামীর ছবি ‘রঘু ডাকাত’ই হোক।
আরও পড়ুন-অষ্টমীতে পূজিত হন রক্ষাকালী
‘সোনাদা’র আরেক ইউএসপি হল আবির-ঝিনুক রসায়ন। দুই চরিত্রে যথাক্রমে অর্জুন চক্রবর্তী ও ইশা সাহা। ওঁদের সাবলীল অভিনয় এবং মিষ্টি প্রেম অ্যাডভেঞ্চার ছবির রিলিফ। এই প্রথম ‘সোনাদা’ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে যুক্ত হলেন অভিনেতা সৌরভ দাশ। বড়পর্দায় নেগেটিভ চরিত্রে এই প্রথম। যদিও নিজের চরিত্রটিকে তিনি ধূসর আখ্যা দিয়েছেন। একই সঙ্গে কিছুটা মজারও। এরকম একটা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে সৌরভ খুবই খুশি। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দর্শক প্রতিক্রিয়ার জন্য। “আমার আগে খরাজদা, রজতাভদা সোনাদা সিরিজে এধরনের খল চরিত্র করেছেন। তাই আমার দায়িত্ব ছিল অনেকটাই। তবে প্রথমবার চরিত্রের লুক ও গল্প শুনেই আমার দারুণ পছন্দ হয়ে গিয়েছিল,” বললেন সৌরভ। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌগত বসু। সিনেমাটোগ্রাফি শৌমিক হালদার। সংগীত পরিচালনা ও আবহ বিক্রম ঘোষ। সম্পাদনা সংলাপ ভৌমিক। ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ (Karnasubarner Guptodhon) মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর।