প্রতিবেদন : নজিরবিহীন। লোকসভা ভোটের মুখে বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েও অনমনীয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ইডি হেফাজতে থেকেই দিল্লিবাসীর স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। আবগারি কাণ্ডে ইডির গ্রেফতারির পর তিনি বলেছিলেন, জেলে থাকলেও দেশের জন্য কাজ করে যাবেন। কোনও চাপের কাছেই মাথা নোয়াবেন না। সেইমতো রবিবার ইডি হেফাজতে বসেই প্রশাসনিক কাজ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আপ-সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
আরও পড়ুন-‘এবার ৩০-৩৫টি আসন পাবে তৃণমূল কংগ্রেস’ হিসেবে দেখালেন কুণাল ঘোষ
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা অবস্থায় প্রথম একটি নির্দেশ দিলেন তাঁর সরকারের জল দফতরকে। এই গরমে রাজধানীতে জল সরবরাহ-সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রী অতিশিকে একটি নোট পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তিনি। কার্যত লক-আপে বসে এইভাবে সরকার চালানো দেশের ইতিহাসে বেনজির ঘটনা। তবে এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবগারি মামলায় আপ-সুপ্রিমো ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরেই আপনেত্রী অতিশি বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালই। শনিবার হেফাজত থেকে স্ত্রী সুনীতার মাধ্যমে দেওয়া কেজরিওয়ালের ভিডিও-বার্তায় তারই সমর্থন মিলেছিল। সেইমতোই রবিবার সকাল না হতে হতেই হেফাজতে বসেই সরকারি কাজ শুরু করে দিলেন কেজরিওয়াল। এবং বিষয়টা রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন জলমন্ত্রী অতিশি। পড়ে শোনালেন দলের শীর্ষনেতার লেখা চিঠিও। কী লেখা আছে নোটে?
আরও পড়ুন-রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কেরল, বিল আটকে রাখা হচ্ছে
কেজরি লিখেছেন, আমি জেলে আছি। এর জন্য যেন দিল্লিবাসীর কোনও অসুবিধে না হয়। আমি জানতে পেরেছি, দিল্লির কিছু এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে। এ-নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। গরম পড়েছে। যেখানে জল কম, সেখানে যথাযথ সংখ্যার জলের ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা করুন। মুখ্যসচিব এবং অন্য আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিন। আমজনতা যেন কোনও অসুবিধেয় না পড়ে। দরকার হলে উপ-রাজ্যপালের সাহায্য নিন। তিনিও আপনাদের সাহায্য করবেন।
তবে প্রশ্ন উঠেছে এভাবে সরকার চালানোর বৈধতা নিয়ে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশই মনে করছেন, মুখে যা-ই বলুন, এভাবে দীর্ঘমেয়াদে সরকার চালানো যাবে না। কেজরিও হয়তো পারবেন না। সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং লোকসভার প্রাক্তন মহাসচিব পি ডি টি আচার্যের মতে, জেল বা হেফাজত থেকে সরকার চালানো অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ, মন্ত্রিসভার বৈঠকে পৌরোহিত্য করতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। হেফাজতে বসে কীভাবে তা সম্ভব? তত্ত্বাবধানের ক্ষমতাই বা তিনি প্রয়োগ করবেন কেমন করে? তাই সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা এটাও বলছেন, একজন মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারের ফলে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ নেই সংবিধানে।
আরও পড়ুন-উনি ‘২৮ পয়সার প্রধানমন্ত্রী’! মোদিকে খোঁচা উদয়নিধির
গ্রেফতার হলেই পদত্যাগে বাধ্য হবেন মুখ্যমন্ত্রী, এমন কোনও আইনও নেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যদি দোষী সব্যস্ত হন, তা হলে তিনি পদে থাকতে পারবেন না কোনওভাবেই। আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী মনে করেন, সরকারের প্রয়োজনে একজন মুখ্যমন্ত্রীকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। জেলে বা হেফাজতে থেকে তা কখনওই সম্ভব নয়। ঝাড়খণ্ডের ক্ষেত্রে হেমন্ত সোরেন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন। এর পাশাপাশি অনেকে বলছেন, নৈতিকতার একটা প্রশ্ন আছে। সবচেয়ে বড় কথা, মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা না দিলে তাঁকে সাসপেন্ড করার সম্ভাবনাও বাতিল করা যায় না আইন অনুযায়ী। কেজরিকে নানাভাবে হেনস্থায় ব্যস্ত বিজেপি সরকার তা করতেই পারে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আপ নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালই। পরে অন্য পরিস্থিতি তৈরি হলে সেইমতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে কেজরির রাজনৈতিক প্রচারসঙ্গী স্ত্রী সুনীতার নামও চর্চায় রয়েছে।