প্রতিবেদন : এফসি গোয়ার পর ঘরের মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছেও হার মোহনবাগানের। প্রথমবার কেরলের কাছে হেরে সবুজ-মেরুন শিবিরে (Kerala Blasters- Mohun Bagan) নামল ঘোর অন্ধকার। মুম্বই ম্যাচ ধরলে আইএসএলে হারের হ্যাটট্রিক হয়ে গেল মোহনবাগানের। দিমিত্রিওস দিয়ামনতাকোসের গোলে কেরল ১-০ গোলে মোহনবাগানকে হারিয়ে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এল। ইভান ভুকোমানোভিচের দল আবার জয়ের হ্যাটট্রিক করল। জুয়ান ফেরান্দোর দল টানা তিন হারে ১৯ পয়েন্টেই থেকে নেমে গেল পাঁচ নম্বরে। লিগ-শিল্ড জয়ের দৌড়েও পিছিয়ে পড়ল মোহনবাগান।
কোচ হিসেবে জুয়ানও প্রথমবার হারলেন কেরলের (Kerala Blasters- Mohun Bagan) কাছে। চোট, কার্ড সমস্যার অজুহাত শুনছেন না সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। কাঠগড়ায় কোচ জুয়ানের রণকৌশল। বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে বাগানের স্প্যানিশ কোচ। সমর্থকদের ক্ষোভ বাড়ছে। যুবভারতীতে মোহনবাগান কোচ, ম্যানেজমেন্টকে ধিক্কার সমর্থকদের। ‘গো ব্যাক জুয়ান’, ‘গো ব্যাক সাদিকু-কামিন্স’ ধ্বনি উঠল এদিনও। খেলার পর ক্ষোভের আগুন সমর্থকদের মধ্যে। মোহনবাগানের বাতিল দুই বাঙালি প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাসরা বিপক্ষ দলের জার্সি গায়ে যুবভারতীতে তাঁদের ‘ঘরের মাঠে’ নেমে জবাব দিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন- রাহুলকেও ছাপিয়ে গেলেন এলগার
রক্ষণ নড়বড়ে, ব্রেন্ডন হ্যামিল নেই। আশিস রাই, হেক্টর ইয়ুস্তে লাল কার্ডের নির্বাসন কাটিয়ে ফিরলেও সেই তিন ডিফেন্ডারে খেলার গোঁ ধরে রেখে দল সাজান সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ কোচ। তবে আগের ম্যাচের মতো হুগো বুমোসকে বেঞ্চে রেখে প্রথম একাদশ নামানোর ঝুঁকি আর নেননি জুয়ান। আপফ্রন্টে জেসন কামিন্স ও দিমিত্রি পেত্রাতোসের একটু পিছন থেকে অপারেট করেন বুমোস। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকে কেরলের আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারেননি জুয়ানের ছেলেরা।
মোহনবাগানকে খেলা ধরতে না দিয়েই শুরু থেকে আক্রমণের ঝড় তুলে দেয় কেরালা ব্লাস্টার্স। খেলা শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যায় তারা। কেরলের দিয়ামনতাকোস জীবনের সেরা ফর্মে রয়েছেন। তাঁকে সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেল মোহনবাগান রক্ষণ। দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়েই বাগান ডিফেন্ডারদের মাটি ধরিয়ে ৯ মিনিটের মাথায় গোল করে যান দিয়ামনতাকোস। দীপক টাংরি ফাইনাল ট্যাকল করতে গিয়ে কেটে যেতেই আশিস ও ইয়ুস্তেকে ড্রিবল করে ছিটকে দিয়ে দুর্দান্ত গোল করেন গ্রিক ফরোয়ার্ড।
শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও প্রথমার্ধে বাকি সময়েও গোল শোধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি মোহনবাগান। বলা ভাল, বিপক্ষের সব পাসিং চ্যানেল কেটে দিয়েছিল কেরল। ম্যাচের প্রথম ২৫ মিনিট ম্যাচেই ছিল না মোহনবাগান। দিমিত্রি, কামিন্স, বুমোসদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি। দুই উইংয়ে কিয়ান নাসিরি ও শুভাশিস বোসকে ব্যবহার করেন মোহনবাগান কোচ। মাঝমাঠে অনিরুদ্ধ থাপা, টাংরি আক্রমণের থেকে বেশি নীচে নেমে কেরলের আক্রমণ সামাল দিতেই ব্যস্ত থাকেন।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য মোহনবাগানের খেলায় ঝাঁজ বাড়ে। গোল শোধের মরিয়া চেষ্টায় তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শুরু করে জুয়ানের দল। বুমোস, দিমিত্রি, কিয়ান, শুভাশিসরা একের পর এক আক্রমণে কেরল রক্ষণে চাপ বাড়ান। বাগানের প্রাক্তনী প্রীতম তাঁর পুরনো দলের একাধিক আক্রমণ রুখে দেন। কেরলের দুই বিদেশি ডিফেন্ডার লেসকোভিচ, দ্রিনচিচও ঢাল হয়ে দাঁড়ান। তাতেও গোলের লকগেট প্রায় খুলে ফেলেছিল মোহনবাগান। কিন্তু কামিন্স ও শুভাশিস সুযোগ নষ্ট করেন।
৬০ মিনিটের পর তিনটি পরিবর্তন করেন জুয়ান। টাংরি, কামিন্স ও সুমিত রাঠির জায়গায় নামান হামতে, আর্মান্দো সাদিকু ও মনবীর সিংকে। পরে কিয়ানকে তুলে নামান সুহেল ভাটকে। কিন্তু পরিকল্পিত আক্রমণ শানিয়ে গোল তুলে নিতে ব্যর্থ সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। কেরল কোচ আবার প্রীতমকে তুলে সবুজ-মেরুনের আর এক প্রাক্তন সাইড ব্যাক প্রবীরকেও নামিয়ে দেন। বাকি সময় লড়াই করে পুরনো দলকে রুখে দিলেন সোদপুরের ছেলে।