ঝড় তুলেছিল ট্রেলার। বাংলার দুই সুপারস্টার জিৎ এবং প্রসেনজিৎকে একসঙ্গে পর্দায় দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলেন দর্শকেরা। অবশেষে অবসান হয়েছে অপেক্ষার। ২০ মার্চ, শুক্রবার, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘খাকি দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ (Khakee: The Bengal Chapter)। কলকাতার অপরাধ জগতের উপর তৈরি রুদ্ধশ্বাস ওয়েব সিরিজ। খুঁটিয়ে দেখানো হয়েছে গ্যাংস্টার এবং রাজনীতিবিদদের সমীকরণ।
দুঁদে রাজনীতিবিদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর চরিত্রের নাম বরুণ রায়। কখনও তিনি ঠান্ডা, কখনও ভয়ঙ্কর। অন্যদিকে সৎ পুলিশ অফিসার অর্জুন মৈত্রর চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন জিৎ। তাঁর অভিনীত চরিত্রটি কলকাতার ভয়ঙ্কর ডনের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। সেইসঙ্গে তাঁকে একটি ভঙ্গুর সিস্টেমের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হয়। শঙ্কর বড়ুয়া ওরফে শহরের ডন বাঘার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আরাত্রিকার চরিত্রে আকাঙ্ক্ষা সিং, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শুভাশিস মুখোপাধ্যায় যথাযথ। সাগর তালুকদার চরিত্রে ঋত্বিক ভৌমিক, রঞ্জিত ঠাকুরের চরিত্রে আদিল জাফর খান নজর কেড়েছেন। রাজনৈতিক নেত্রী নিবেদিতা বসাকের চরিত্রে বলিউডের অভিনেত্রী চিত্রাঙ্গদা সিং মানানসই। অন্যান্য চরিত্রে আছেন মহাক্ষয় চক্রবর্তী, পূজা চোপড়া, শ্রদ্ধা দাস, জয় সেনগুপ্ত, শ্রুতি দাস, ছন্দক চৌধুরী।
২০২৪-এর ২৯ ফেব্রুয়ারি হয়েছিল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। অধিংকাশ অংশের শুটিং হয়েছে কলকাতায়। পাশাপাশি মুম্বইয়েও হয়েছে কিছু দৃশ্যের শুটিং। মুম্বাইয়ের সময়সূচি শেষ করার পর, ২০২৪-এর জুলাই এবং অগাস্টে বাংলায় শুটিং করা হয়েছিল। লোকেশন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল কলকাতার প্রিন্সেপ ঘাট, বিদ্যাসাগর সেতু, হাওড়া ব্রিজ, হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত বসতি এবং খিদিরপুর। দেখানো হয়েছে ২০০০-এর গোড়ার দিকের শহরের রাজনৈতিক অস্থিরতা। ফলে সিরিজে উঠে এসেছে শহর কলকাতার আলো এবং অন্ধকার দিক। দেখা গিয়েছে কার্তুজ, বন্দুক-সহ নানান অস্ত্র তৈরির ঝলক। এছাড়াও আছে খুন, রক্তপাতের মতো বীভৎস দৃশ্য।
দুই পরিচালকও বাঙালি। দেবাত্মা মণ্ডল ও তুষারকান্তি রায়। তাঁরা চমৎকারভাবে বুনেছেন সিরিজটি। টানটান চিত্রনাট্য। চোখাচোখা সংলাপ।
এই সিরিজ মূলত নীরজ পাণ্ডের মস্তিষ্কপ্রসূত। বাংলার সঙ্গে রয়েছে তাঁরও নিবিড় যোগ। শৈশব কেটেছে হাওড়ায়। বলিউডে দাপটের সঙ্গে কাজ করলেও, শেকড়কে ভোলেননি। আসেন মাঝেমধ্যেই। থাকেন। তাঁর প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিতেও দেখা যায় বাঙালি অভিনেতাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। সিরিজটি সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ট্রেলার প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বুঝতে পারছিলাম মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যদিও আমি নিজে সমাজমাধ্যমে সক্রিয় নই। তাই যে কোনও প্রতিক্রিয়ার জন্য আমাকে অন্যদের উপরেই নির্ভর করতে হয়। ঝলক প্রকাশের প্রথম ১২ ঘণ্টায় নাকি প্রচুর মানুষ সেটা দেখেছেন বলেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কর্তাদের কাছে খবর পেয়েছি। ‘স্পেশ্যাল ২৬’ বা ‘এমএস ধোনি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র মাধ্যমেও বাংলার সঙ্গে যোগসূত্র বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। এই সিরিজটার রেকির সময় এসেছিলাম। পরে শুটিংয়ের সময়েও দুবার ঘুরে গিয়েছি। অভিনেতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, গল্পটা কলকাতা শহরের। তাই আমার মনে হয়েছিল, বাংলার গল্পে বাংলার অভিনেতারা থাকলে তার গ্রহণযোগ্যতাও অনেকাংশে বাড়বে। তাই বাংলার অভিনেতাদের নির্বাচন করা হয়েছে। প্রথমে প্রস্তাব দেওয়া হয় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি রাজি হন। জিৎ অনেকটা শেষের দিকে এই সিরিজে যোগ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-সুনীতার প্রত্যাবর্তন, সঙ্গে কিছু প্রশ্ন
অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত দেড় দশকে আমি অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা করছি। তবে এমন একটি চরিত্রে আগে কখনও অভিনয় করিনি। এই চরিত্রের জন্য নীরজ পাণ্ডে আমাকে প্রথম ফোন করেছিলেন। আমি হ্যাঁ বলে দিই। পরে জানতে পারি চরিত্রটি কী! একবার জিৎকে ফোন করে বলেছিলাম যে, আমাকে এমন একটি চরিত্র দিল, যা আমার ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে। রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং। আমরা সেই ধরনের অভিনেতা, যারা পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এটা একটা দলগত কাজ। খাকির বিহার অধ্যায়টি হিট হয়েছে, তাই আমাদের উপর চাপ আছে।
জিৎ এর আগেও কাজ করেছেন নীরজ পাণ্ডের সঙ্গে। ‘দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ এবং ‘চেঙ্গিজ’ ছবিতে। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি বলিউডে পা রাখলেন। ফলে যথেষ্টই রোমাঞ্চিত। জানিয়েছেন ভাল লাগার কথা। দুর্দান্ত অভিনয়ের পাশাপাশি সিরিজে ফাটিয়ে অ্যাকশন করেছেন তিনি।
সংগীত পরিচালনায় জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, দৃশ্যগ্রহণে তুষারকান্তি রায়, অরবিন্দ সিং, তারাশ্রী সাহু, সৌভিক বসু, সম্পাদনায় প্রবীণ কাথিকুলথ চমৎকারভাবে নিজেদের মেলে ধরেছেন। প্রযোজনা করেছেন শীতল ভাটিয়া। ক্রাইম অ্যাকশন থ্রিলারটি রীতিমতো সাড়া জাগিয়েছে।