খেলাতে নেই মন

খেলতে ভুলেছে ছোটরা। যুগের হাওয়ায় হঠাৎ হারিয়েছে তাদের শৈশব। আগের সেই মাঠ-ঘাট প্রান্তরের স্নেহ, খেলনাবাটির আদর তারা পায় না। এখন বরং মোবাইল, ভিডিও গেমেই দারুণ স্বচ্ছন্দ তাঁরা। কিন্তু কেন এমন বিবর্তন? এর জন্য কী সমস্যায় পড়তে পারে তারা। আন্তর্জাতিক শিশুদিবসের কথা মনে রেখে আলোচনায় পেরেন্টিং কনসালটেন্ট পায়েল ঘোষ

Must read

রৌনকের মা তাকে চারবেলা খাওয়াতে নাজেহাল হয়ে যায়। অগত্যা টিভিই ভরসা তার মায়ের। পছন্দসই কার্টুন চালিয়ে দিলেই তা হাঁ করে দেখতে বসে যায় রৌনক। মায়েরও হাত চলতে থাকে দ্রুত তাকে খাওয়ানোর জন্য। সেক্ষেত্রে মাও খুশি, বাচ্চাও খুশি। কিন্তু সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়। আড়াই বছরের রৌনক অন্য কোথাও গিয়ে খাওয়াদাওয়া করতে চায় না। কারণ বাড়ির ওই পরিবেশে ওই কার্টুনটাই চাই তার খাবার সময়। তা না হলে জেদ, কান্নাকাটি, শেষে কাঁদতে কাঁদতে বমি। এসব তার নিত্যদিনের উপসর্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরের ঘটনাটি সুহানিকে নিয়ে। প্রি-স্কুলে পড়া তিন বছরের সুহানি মা-বাবার সাথে ইন্টারভিউ দিতে গেছে। তার ইন্টারভিউ হয়ে যাওয়া মাত্রই সে ছুট্টে তার মা-বাবার কাছে চলে এসে মোবাইল ফোন নেওয়ার বায়না করতে শুরু করল। তার মা-বাবা তখন প্রিন্সিপালের সামনে ইন্টারভিউ দিতে ব্যস্ত। কিন্তু সুহানি এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে রাজি নয়। সেই মুহূর্তে তার মোবাইল ফোন চাই-ই চাই। সে তখন গেমস খেলবে। মা-বাবার হাজার বারণও সুহানিকে নিরস্ত করতে পারল না। উপরন্তু সে শুরু করল প্রচণ্ড ট্যানট্রাম। বলাই বাহুল্য সেই স্কুলে আর সে পড়ার সুযোগ পায়নি।
ছোট্ট ঋজু ভারী মিষ্টি স্বভাবের ছেলে ছিল। ওর পাঁচ বছরের জন্মদিনে ওর মা-বাবা ওকে একটি ভিডিও গেম উপহার দেয়। তারপর থেকে ঋজুর স্বভাবের বহু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কার রেসিং খেলা ছাড়া ঋজু এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। এমনকী স্কুল যেতে বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিশতেও সে পছন্দ করে না আজকাল। উপরন্তু সে ভয়ঙ্কররকম আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। সব কিছু ভেঙে ফেলার উপসর্গও দেখা যাচ্ছে আজকাল তার মধ্যে।

আরও পড়ুন-উত্তরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

ছ’বছরের দূর্বার সমস্যাক আবার অন্যরকম। তার বাচনভঙ্গি বা কথোপকথনে ক্রমে সারল্যেতর ভাব হারিয়ে যাচ্ছে। বয়ফ্রেন্ড, কিস বা অ্যাফেয়ার এসব শব্দ তার মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। স্মার্টফোনের কিছু প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট নিয়মিত দেখে দূর্বা। তাকে সেইসব কনটেন্ট দেখা থেকে কিছুতেই নিরস্ত করা যাচ্ছে না। উপরন্তু ক্রমশ স্মার্টফোন দেখার তাগিদে সে স্কুল না-যাওয়ারও বিভিন্নরকম বাহানা খুঁজছে।
উপরোক্ত চারটি ঘটনাই আজকাল শহর ও শহরতলির বাচ্চাদের দৈনন্দিন জীবনের খুব চেনা ছবি। খেলতে, ছুটতে, লাফালাফি করতে ভুলে গেছে বাচ্চারা। হারিয়েছে শৈশব। বদলে তারা ভিডিও গেম, মোবাইল, টিভিতেই আসক্ত। কিন্তু কেন? তার জন্য অনেকাংশে দায়ী আমাদের বর্তমান পারিবারিক বিন্যানস এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যালান্সের অভাব।
বর্তমানে বিশ্বের ৯২ শতাংশ লোকের হাতে মোবাইল ফোন আছে। এর ভেতর ৩১ শতাংশ কখনওই তাদের ফোন বন্ধ করে না। দেখা যাচ্ছে শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ সময়ের প্রায় ৩ গুণ। চলতি বছরে শিশুদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রি-স্কুল শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত। এদের মধ্যে ২৯ শতাংশের মারাত্মক স্মার্টফোন আসক্তি রয়েছে। অন্যদিকে, মাত্র ১৪ শতাংশ শিশু অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে। আরও দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন মায়ের ৪ জনই সন্তানের স্মার্টফোন আসক্তি সম্পর্কে অবগত নন।
একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন কিছু জরুরি নিউরোট্রান্সমিটার (যেমন সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন) যা তাদের মনকে উৎফুল্ল রাখে, মনঃসংযোগে সাহায্য করে। এই নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণের জন্য বাচ্চাদের নিয়মিত খেলাধুলা এবং সৃজনশীল কাজের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর ফলে তাদের সামাজিক যোগাযোগ ক্ষমতার উন্নতি হয়। বাচ্চারা বিভিন্নরকম কথোপকথনের মাধ্যমে বড়দের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম হয়, বিভিন্ন বিষয়ে তারা তাদের অনুসন্ধিৎসু মনকে বড়দের সামনে তুলে ধরে। অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধব… এই ভিনবয়সি মানুষদের সাথে কীভাবে বাক্যপ্রয়োগ করবে, সেটার সম্যক ধারণাও তৈরি হয় তাদের।

আরও পড়ুন-এসআইআর-আতঙ্ক: একদিনে চার মৃত্যু, নির্বাচন কমিশনে চিঠি তৃণমূলের

টিভি, মোবাইল গেম বা যে কোনও ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেনমেন্ট দেখার সময় আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ক্ষরণ হয় এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যার নাম ডোপামিন। এই ডোপামিনের ক্ষরণ আমাদের মনে এক ভাললাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। তার ফলে অতি-সহজেই আমরা এই ধরনের এন্টারটেনমেন্ট মিডিয়ামগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়ি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা উচিত যতটা কম ডোপামিনের ক্ষরণ হয়।
কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ বাচ্চারা অণু পরিবারের অন্তর্গত। অনেক সময়ই বাবা-মা কর্মরত হওয়ার জন্য তারা গৃহসহায়িকার কাছে অনেকটা সময় কাটায়।
তাদের দৈনন্দিন রুটিনে খেলাধুলার কোনও স্থান নেই। নিজেদের অবসর সময় কাটাতে তাদের ভরসা মোবাইল-ল্যাপটপ বা ট্যাব। সেখানে কখনও তারা কার্টুন দেখছে, কখনও বা রিলস-শর্ট ভিডিও আবার কখনও বা অনলাইন গেম। অনেক সময়ই দেখা যায়, বাচ্চারা যে ধরনের ফোন ব্যবহার করে, তাতে পেরেন্টাল কন্ট্রোল থাকে না। অনেক সময় তারা বড়দের বিভিন্নরকম বিষয় বা ডার্ক কনটেন্ট দেখে ফেলে, যার প্রভাবে তাদের মনের মধ্যে বিভিন্নরকম চঞ্চলতা গ্রাস করে, অতিরিক্ত জটিল এবং আশঙ্কাগ্রস্ত হয়ে যায় মন। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের পরিমাণ ক্রমে বাড়তে থাকে শরীরে। অনেক সময় অপরিণত বয়সে প্রাপ্তবয়স্কদের বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে গিয়ে বিভিন্ন সহজ সম্পর্কে অনর্থক জটিল বানিয়ে তোলে যার উদাহরণ কেস স্টাডির ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লিখিত আছে।
আরেকটি নেশার বিষয় হল অনলাইন গেম। যেখানে বিভিন্ন রকম নেতিবাচক বিষয় খেলার অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে খেলা চলাকালীন যে ধরনের অশালীন শব্দের প্রয়োগ করে বাচ্চারা কী রীতিমতো চিন্তাদায়ক। শুধু তাই নয়, বাচ্চাদের এই অনলাইন গেম খেলার নেশা এত তীব্র হয়ে যায়, কখনও কখনও ওরা স্থান-কাল-পাত্র ভুলে সবার সামনেই সে-সব ভাষা প্রয়োগ করে গেম খেলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনলাইন গেমের পরের লেভেলে যাওয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা এই নেশায় আক্রান্ত হয়ে কখনও কখনও এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে বাড়ির লোকজনের আড়ালে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুলে এই অনলাইন গেমের পরের স্তরে যাওয়ার চেষ্টা করে।

আরও পড়ুন-শিলিগুড়িতে উৎসব, রিচাকে পায়েস খাইয়ে বরণ করলেন মা

কী কী সমস্যায় পড়তে পারে শিশুরা
আজকের শিশুরা রেডিয়েশন ঘেরা এক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে। শিশুদের মস্তিষ্ক ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে নির্গত ক্ষতিকর তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। বড়দের তুলনায় শিশুদের মস্তিষ্ক প্রায় দ্বিগুণ এবং অস্থিমজ্জা প্রায় দশ গুণ বেশি বেতার তরঙ্গ শোষণ করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাদের মস্তিষ্ক ও কানে নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার উচ্চতর আশঙ্কা থাকে।
মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের রেটিনা, কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টি সমস্যা।

এই রোগের কারণে চোখে যন্ত্রণা ও মাথাব্যথায় ভোগে শিশুরা, ক্লাসের পেছনে বসলে সামনের বোর্ড স্পষ্ট দেখতে পায় না। ইদানীং খুব অল্প বয়সের ছেলেমেয়েদের চশমা ব্যবহার করতে দেখা যায়।
এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্মার্টফোনে আসক্ত বাচ্চাদের ঘন ঘন মেজাজ বদলে যায়। কারণ ছাড়াই রেগে যাওয়া, অপর্যাপ্ত এবং অনিয়মিত ঘুম, অমনোযোগিতা, ভুলে যাওয়া, ভাষার দক্ষতা বিকাশ না হওয়া এবং ভাইবোন, বাবা-মা ও খেলার সাথীদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা-সহ বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হয়।
ভবিষ্যতে আমাদের শিশুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তারা নিজেদের সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলবে। ঘরকুনো স্বভাবের হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হবে। পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো অটুট রাখার দক্ষতা শিখতে পারবে না। ক্রমে তারা হয়ে উঠবে একাকী এবং নিঃসঙ্গ, যা পরবর্তী জীবনে অবসাদ নিয়ে আসতে পারে।
শিশুরা অনলাইনে ভায়োলেন্স ও সাইবার বুলিংয়ের মতো অপরাধের শিকার হতে পারে, যা তাদের কোমল মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন-৮ সপ্তাহের মধ্যে পথকুকুরদের সরানোর সুপ্রিম-নির্দেশ, নজর সড়ক-হাইওয়ের গবাদি পশুর দিকেও

কী করবেন বড়রা
বাড়ির বড়দের প্রধান কাজ তাঁদের সন্তানদের দৈনন্দিন রুটিনে বিশেষভাবে নজর দেওয়া। সেই রুটিনে যেন বিকেলবেলা আউটডোরে খেলাধুলো করার সময় সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়। বর্তমানে প্রচুর ক্রীড়া অনুশীলন কেন্দ্র আছে, সেখানে বাচ্চাদের যোগদান করানো যেতে পারে। অনেক সময় অভিভাবকরা দু’জনেই কর্মরত হলে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে যাতে বাচ্চাকে নিয়মিত খেলতে পাঠানোর যায়।
বাচ্চাদের স্ক্রিনটাইমের সময়সীমার ওপর বিশেষভাবে নজর রাখা উচিত যাতে কোনওভাবেই তা মাত্রাতিরিক্ত না হয়। এর সাথে সাইবার সিকিউরিটি বা পেরেন্টাল কন্ট্রোলের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সফ্টওয়্যার অভিভাবকদের প্রয়োগ করা উচিত যাতে বাচ্চাদের স্ক্রিন কনটেন্টের ওপর তাঁরা যেন অবগত থাকেন।
প্রতিদিন নিজেদের রুটিনে বাচ্চাদের জন্য আলাদা কিছুটা গুণগত সময় চিহ্নিত করে রেখে দিন। এই সময়ে ওদের সাথে প্রাণভরে গল্প করুন, ওদের নিয়ে হাঁটতে যান, কোনও সমস্যা থাকলে সেটা মন দিয়ে শুনুন, বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক কথা বলুন। ওদের বলা কথায় শোনার উৎসাহ দেখান।
অনেক সময় বাচ্চাদের মনে বড়দের বিভিন্নরকম আচরণ, সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহ জন্মাতে পারে। সেসব বিষয়ে মুক্তমনে আলোচনা করুন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে তার বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করুন। নিজেদের মনকে শান্ত এবং সংযত রাখুন।
কখনও বাচ্চারা ফোনের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্কদের কিছু বিষয় জানতে পারলে উত্তেজিত হয়ে বকাবকি না করে, শান্ত মনে বোঝানোর চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করুন ওদের মনে সেসব বিষয় কতটা রেখাপাত করেছে। তারপর বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে ওদের বিশ্লেষণ করুন অপ্রয়োজনীয় বিষয় না দেখার জন্য।
বাড়ির পরিবেশে শান্তি থাকা খুব প্রয়োজনীয়। যদি অভিভাবকদের মধ্যো ক্রমাগত অশান্তি, চিৎকার-চেঁচামেচি, উদ্ধত বাচনভঙ্গি চলতে থাকে, তাহলে অনেক সময়েই মনের দিক থেকে বিধ্বস্ত হয়ে বাচ্চারা ভার্চুয়াল জগতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সেখান থেকে নানাবিধ সমস্যা দেখা যায়।
বাচ্চার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন। ছোটবেলা থেকে রোজ রাতে শোয়ার আগে বাচ্চাকে যদি বই থেকে গল্প পড়ে শোনানোর অভ্যাস তৈরি করা হয় তাহলে বাচ্চাদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতাও বাড়ে। তখন টিভি, মোবাইল বা ভিডিও গেমের আসক্তি থেকে অনেক সহজেই বাচ্চাকে দূরে রাখা যায়।
মাঝে মাঝে বাচ্চাদের নিয়ে প্লে ডেট তৈরি করুন। ওদের খেলার সাথে নিজেরাও মেতে উঠুন। দেখবেন ওরা অনেক বেশি উপভোগ করছে ওদের শৈশবকে।
অনেক সময় বিভিন্ন কার্টুন ক্যারেক্টার বা মোবাইল গেমস বাচ্চাদের ভায়োলেন্ট করে তোলে। কার্টুনে দেখানো বিভিন্ন মারপিট বা মোবাইল গেমের কার ক্র্যাশিং খেলা বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। তারা অতিরিক্ত হাইপারঅ্যাক্টিভ বা অ্যাগ্রেসিভ হয়ে ওঠে। তাই লক্ষ রাখুন কী ধরনের প্রোগ্রাম বাচ্চারা দেখছে। সেক্ষেত্রে বাচ্চার সাথে একসাথে বসে ওকে সঠিক ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিন।
বাচ্চাদের কখনই বড়দের সোপ সিরিয়াল বা ক্রাইম প্যাট্রল জাতীয় প্রোগ্রাম দেখতে দেবেন না। আমরা বড়রা অনেক সময়ই এ-ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না, তার ফলে অচিরেই বাচ্চাদের মনের মধ্যে অকারণ জটিলতা, ভয় বা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। নানারকম মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে তারা। শুধু তাই নয়, যে কোনও কাজে মনঃসংযোগ করতেও তাদের অসুবিধে হয়।
উপরোক্ত সব কিছুই সম্ভব হবে যদি বাবা-মা সঠিকভাবে সব কিছু প্ল্যান করেন। এর জন্য নিজেদের বাচ্চাদের সামনে রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরতে হবে। মোবাইলে গেম খেলা বা স্মার্টফোন দেখার অভ্যাস মা-বাবার মধ্যে যতটা নিয়ন্ত্রিত হয় ততই উপকৃত হবে আপনার সন্তান।

Latest article