অলোক সরকার: ভিকট্রি ল্যাপ শেষ করে সবে ক্লাব হাউসের কাছে এসেছেন। শাহরুখ খান দেখতে পেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৌরভ পিছন ফিরে ছিলেন। তাই দেখেননি। বাদশা পিছন থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। এই ছবিটাই দু’দিন ধরে খুঁজছিল কলকাতা (KKR-Delhi Capitals)। পেয়ে গেল। এক ফ্রেমে ধরা পড়লেন দাদা-বাদশা।
জ্যাক ফ্রেজার ম্যকগুর্ককে নিয়ে প্রচুর চর্চা হল গত কয়েকদিন। মিচেল মার্শ চোট নিয়ে ফিরে গিয়েছেন। ডেভিড ওয়ার্নারের চোট না বাদ, বোঝা যাচ্ছে না। এই আবহে পন্টিংরা ঝুলি থেকে বের করেছিলেন তাঁকে। কিন্তু ইডেনে ম্যাকগুর্ক তাস কাজ করল না। দিল্লির ডাকসাইটে টপ অর্ডারও দশে শূন্যের বেশি পায়নি। ফলে যেটা হল, নাইটদের কাছে ৭ উইকেটে হেরে চারের দৌড় অনিশ্চিত হয়ে গেল দিল্লি ক্যাপিটালসের।
রাজস্থান আর পাঞ্জাব ম্যাচের উল্টো ছবি দেখা গেল এদিন। যত রান চাই, তার ডাবল বল হাতে। ডাগ আউটে গম্ভীর। কেকেআর বক্সে শাহরুখ। গত পাঁচদিন ধরে শহরে পড়েছিলেন বাদশা। কে জানে, না জিতে কলকাতা ছাড়বেন না বলে পণ করেছিলেন কি না! শেষমেশ তৃপ্তির হাসি। দাদার গড়ে নাইটদের বাজিমাত। ১২ পয়েন্ট নিয়ে শেষ চারের খুব কাছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।
নারিন আর সল্ট সব ম্যাচে মোমেন্টাম তৈরি করে দিচ্ছেন। এদিন লিজার্ড উইলিয়ামসের প্রথম ওভারে তাঁরা তুলে নেন ২৩ রান। লিজার্ডের কপালে আরও দুঃখ ছিল পরের ওভারে। খলিলের বলে সল্টের বহু দামি ক্যাচ মিড অনে ফেলে দেন তিনি। বোর্ডে যখন অল্প রান, তখন শুরুতেই উইকেট নিতে হয়। এরকম সুযোগ তো অবশ্যই কাজে লাগাতে হয়। দিল্লির (KKR-Delhi Capitals) ফিল্ডিং কেন পন্টিংয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল, সেটা আবার বোঝা গেল।
১৫৪ রান তাড়া করা ছাড়া আর একটা লক্ষ্য ছিল দুই নাইট ওপেনারের সামনে। তাড়াতাড়ি রান তোলো আর ম্যাচ ফিনিশ করে আসো। পয়েন্ট টেবলের দিকে তাকালে এটা এখন স্পষ্ট যে, শেষ চারে নেট রান রেট বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি পারো ম্যাচ শেষ করে আসো। ৩ ওভারে ৪০/০। পাওয়ার প্লে-র পর সেটা ৭৯/০। ততক্ষণে হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে সল্টের।
নারিন শুরুতে চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু মারতে যেতেই (১৫) অক্ষর তাঁকে তুলে নিলেন। এটা যদি ইডেনের জন্য ধাক্কা হয়, তাহলে তার থেকেও বড় ধাক্কা রিঙ্কু সিংয়ের আউট। ১১ বলে ১১ রান করে রিঙ্কু শো শেষ হয়ে গেল সোমবার। এতে হৃদয় ভেঙে গেল গ্যালারির। নাইট শিবিরে সবথেকে জনপ্রিয় মুখ রিঙ্কু। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে রিঙ্কুর রান দরকার ছিল। তাঁকে এদিন চারে নামানো হয়েছিল। কিন্তু রিঙ্কু রান পেলেন না!
বেঙ্গালুরু ম্যাচের উইকেটে খেলা হল সোমবার। তাতে কিছুটা স্বস্তি পেল নাইট শিবির। আর যাই হোক এটা অভিশপ্ত পাঞ্জাব ম্যাচের উইকেট নয়। রাজস্থান ম্যাচেরও নয়! তবে দিল্লির টসে জিতে আগে ব্যাট নেওয়া যদি বড় চমক হয়, তাহলে আরও বড় তাদের টপ অর্ডার বিপর্যয়। যা ৩.৩ ওভারে ৩৭/৩ হয়ে গিয়েছিল।
এই উইকেটে বাড়তি গতি আছে। যেটা বৈভব, স্টার্ক, হর্ষিতের বলে বোঝা গেল। দিল্লি পৃথ্বী শ-কে (১৩) ফিরিয়েছিল। বৈভবের প্রথম দু’বলে দুটো বাউন্ডারি মেরে রানের মঞ্চ তৈরি করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর বৈভবকে উইকেট দিয়ে চলে গেলেন। ১৭ রানে পৃথ্বী, ৩০ রানে জ্যাক ফ্রেজার ম্যাকগুর্ক (১২) ফিরে গেলেন স্টার্কের শিকার হয়ে।
আরও পড়ুন- সুরাটের মডেলে ইন্দোরেও ভোটচুরি গেরুয়া শিবিরের
এই আইপিএলের সেরা আবিষ্কার ম্যাকগুর্ক। যেভাবে তিনি সর্বত্র ঝড় তুলে দিয়েছেন তাতে এখানেও সবার নজরে ছিলেন। কিন্তু স্টার্ককে হেলিকপ্টার শট মারতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন ভেঙ্কটেশের হাতে। তারপর সাই হোপ আবার বৈভবের শিকার। দিল্লি তখন ৩৭।
মহা মুশকিলে পড়ে যাওয়া দিল্লিকে এরপর সামান্য টানলেন অভিষেক পোড়েল (১৮) ও ঋষভ পন্থ। পাওয়ার প্লে-র শেষে উঠল ৬৭/৩। কিন্তু ১ রান উঠতেই অদ্ভুতভাবে উইকেট দিয়ে গেলেন অভিষেক। তাঁর ঘরের মাঠ। বিরাট সুযোগ। কিন্তু যেভাবে হর্ষিতকে রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে বোল্ড হলেন, সেটা অবাক করার মতো। এত বড় মঞ্চে বঙ্গ উইকেটকিপার-ব্যাটারের উচিত ছিল সুযোগ দু’হাতে আঁকড়ে ধরা। তিনি উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলেন।
এসবের মধ্যে জোর হাততালি পেলেন ঋষভ পন্থ, যখন তিনি ব্যাট করতে নামলেন। দু’বছর আগের এক সকালে ঘুম থেকে উঠে গোটা দেশ জেনেছিল দুর্ঘটনায় সংকটজনক অবস্থায় ঋষভ। তাঁকে দেখে আবেগ আসা স্বাভাবিক। কিন্তু ঋষভ (২৭) দিল্লিকে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। বরুণ তাঁকে ফেরানোর পর অক্ষরকে (১৫) ফিরিয়েছেন নারিন। তাঁর আগে স্টাবসকেও (২) ফিরিয়েছিলেন বরুণ। দিল্লি তখন ৭ উইকেট হারিয়ে ১০১। এরপর দিল্লি যে ২০ ওভারে ১৫৩/৯-এ যেতে পেরেছে সেটা কুলদীপ যাদবের (৩৫ নট আউট) জন্য। তবে নাইটদের হারানোর জন্য এই রানটা যথেষ্ট ছিল না।
কেকেআর বোলিংয়ে বরুণ তিনটি ও বৈভব ও হর্ষিত দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। একটি উইকেট স্টার্কের। তবে স্টার্ক দুই ওভারের বেশি বল করেননি। এদিন ম্যাচের পর ছেলে আব্রামকে নিয়ে শাহরুখ মাঠ তো ঘুরলেনই, সঙ্গে দু’হাত ছড়িয়ে গ্যালারির সামনে চেনা পোজও দিয়ে গেলেন কয়েকবার। দেখে বোঝা গেল বাদশা খুশ হুয়া।