বাংলার আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে দেবী কালীর নিবিড় সম্পর্ক। শক্তি উপাসনা, তন্ত্রসাধনা কিংবা মানুষের ধর্মবিশ্বাস—সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছেন মা কালী। একদিকে তিনি ভয়ঙ্করী, মহাশক্তির প্রতিমূর্তি; অন্যদিকে আদ্যাশক্তি, মাতৃস্বরূপিণী। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর পুজো হয়ে আসছে বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন নামে।
হিন্দু ধর্মবিশ্বাস মতে মা কালী দেবী দুর্গার একটি রূপ। তন্ত্র অনুসারে তিনি দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবী। একসময় শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে দেবতাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। তাঁরা দেবী পার্বতীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তাঁদের প্রার্থনায় দেবী দুর্গার তৃতীয় নয়ন থেকে মা কালীর সৃষ্টি হয়। তিনি শুম্ভ-নিশুম্ভদের পরাজিত করেন। সব কাহিনির নির্যাস এক— কালী দেবী পার্বতীর থেকে সৃষ্টি হয়েছেন।
বিভিন্ন বিশ্বাস মতে মা কালীর বিভিন্ন রূপ রয়েছে। যেমন দক্ষিণাকালী, রক্ষাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, চামুণ্ডা প্রভৃতি। সৃষ্টি ইতিহাস, স্থানমাহাত্ম্য, লোকবিশ্বাস, অলৌকিকি কাহিনি— প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় কালী পূজিতা হন ভিন্ন ভিন্ন নামে। কোথাও তিনি বামাকালী, কোথাও-বা পরিচিত বড়মা কিংবা পোড়ামা নামে।
বামাকালী
বামাকালী মা কালীর একটি ভয়ংকর, শক্তিশালী রূপ। শাক্ত সাধনার অন্যতম পীঠস্থান বীরভূম জেলার একটি উল্লেখযোগ্য কালীমন্দির হল ইন্দ্রগাছার বামাকালীর মন্দির। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাধক রামকানাই-এর নাম। বীরভূমের হরকুনার ঘন জঙ্গলে সাধনা করতে গিয়ে তিনি মা কালীর দর্শন পান। সঙ্গে থাকা থালায় তিনি মায়ের ছবি এঁকে নেন। পরে সেই ছবি দেখে মায়ের মূর্তি তৈরি হয়। প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই পুজো। কথিত আছে, এই পুজোর মন্ত্র লিখেছিলেন সাধক রামকানাই। সাধারণত কালী মূর্তিতে দেখা যায় দেবীর ডান পা শিবের শরীরের ওপর থাকে। কিন্তু এখানে শিবের ওপর দেবীর বাম পা। সেই কারণে তিনি বামাকালী নামী পরিচিতা। এখানকার পুজোর বৈশিষ্ট্য হল পুজোর দিনই প্রতিমায় রং করা হয় এবং চক্ষুদান হয়। চক্ষুদানের পর শুরু হয় পালাগান। পালাগান না শুনে মা মন্দিরে প্রবেশ করেন না।
নদিয়ার শান্তিপুরেও বামাকালীর পুজো হয়। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কালীনাচ। বিসর্জনের দিন মায়ের প্রতিমা একটি বাঁশের মাচায় রাখা হয়। অগণিত ভক্ত সেই মাচা কাঁধে তুলে উদ্দাম নৃত্য করতে থাকে। দেখে মনে হয় মা যেন স্বয়ং নাচছে। এই কালীনাচ দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ এখানে ভিড় জমান।
বেহালার বড়িশার সিদ্ধেশরী কালী বামাকালী রূপে পূজিতা হন। এই মন্দির বেশ প্রাচীন। দেবীর মূর্তি মাটির তবে তার জিভ সোনার। দীপাবলির সময় মহাধুমধাম করে এখানে পুজো হয়। মায়ের ভোগে থাকে খিচুড়ি, নানারকম ভাজা, সবজি সঙ্গে মাছ ও পাঁঠার মাংস। একসময় এখানে বলি হলেও এখন তা বন্ধ।
বড়মা
কালী মায়ের কথা বলতে গেলে অবশ্যই করে বলতে হয় নৈহাটির বড়মা কালীর কথা। এই পুজোর প্রচলন করেন নৈহাটির ভবেশ চক্রবর্তী। একবার বন্ধুদের নিয়ে তিনি নবদ্বীপে রাস দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে অনেক বড়-বড় মূর্তি দেখে তাঁর ইচ্ছে হয় কালীপুজো করার। পরের বছর তিনি ২১ ফুট উঁচু কালীর প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু করেন। তাঁর নামানুসারে পুজোর নাম হয় ‘ভবেশকালী’। নৈহাটি শহরে এত বড় প্রতিমা আগে ছিল না। লোকেরা তাই একে ‘বড়মা’ বলে ডাকতে থাকে। বড়মার পুজোর পর শহরের অন্যান্য পুজো হয়। পাঁচদিন ধরে পুজো হয় এবং প্রতিদিন মাকে আলাদা আলাদা ভোগ দেওয়া হয়। পুজো উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। মনোবাসনা পূরণের আশায় অনেকে গঙ্গাস্নান করে এই মন্দিরে দণ্ডী কাটেন। পুজোর সময় বড়মাকে প্রায় একশো কেজি ওজনের সোনার ও দুশো কেজি ওজনের রূপোর অলংকার পরানো হয়। বিসর্জনের দিন সেসব অলঙ্কার খুলে দেবীকে ফুলের সাজ পরানো হয়। রীতি অনুসারে বড়মার বিসর্জনের পর শহরের অন্যান্য কালী মূর্তির বিসর্জন হয়।
আরও পড়ুন-দিল্লিতে সাংসদদের আবাসনে আগুন
পোড়ামা
মন্দিরের শহর নবদ্বীপে রয়েছে অতি-প্রাচীন পোড়ামা কালীর মন্দির। ‘পোড়ামা’ নবদ্বীপের লৌকিক দেবী। মায়ের এমন নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি কাহিনি। প্রায় ছয় শতাব্দী আগে বৃহদ্রথ নামে এক তন্ত্রসাধক নবদ্বীপের জঙ্গলে ঘটের ওপর দেবী কালীকে স্থাপন করেন। নবদ্বীপের পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌমের পিতামহ ছিলেন তাঁর মন্ত্রশিস্য। বৃহদ্রথের মৃত্যুর পর বাসুদেব সার্বভৌম জঙ্গল থেকে সেই ঘট এনে নবদ্বীপে একটি বটগাছের তলায় স্থাপন করেন। একসময় বাজ পড়ে বটগাছটি পুড়ে যায়। তখন থেকে দেবী ‘পোড়ামা’ কালী নামে পরিচিতা হয়ে ওঠেন। অন্য একটি মতে, একসময় নবদ্বীপে রামভদ্র সিদ্ধান্তবাগীশ নামে একজন পণ্ডিত বাস করতেন। তিনি ছিলেন দক্ষিণাকালীর সাধক। একসময় গোপাল মন্ত্রে সিদ্ধ এক পণ্ডিতের সঙ্গে তাঁর তর্কের আয়োজন হয়। স্থির হয় পরজিত ব্যক্তি নিজের ইষ্টনাম ত্যাগ করে বিজয়ী ব্যক্তির শিষ্যত্ব গ্রহণ করবেন। রামভদ্র সিদ্ধান্তবাগীশ পরাজিত হন। শর্তমতো তিনি যখন তাঁর ইষ্টমন্ত্র ত্যাগ করতে উদ্যত তখনই তাঁর বাড়িতে আগুন লেগে যায়। আগুনের মধ্যে তিনি দেখতে পান দেবী কালীর করাল মূর্তি এবং তাঁর কোলে গোপাল। পুরো বাড়ি পুড়ে যায় তবে মন্দিরের দুটি ইট অবশিষ্ট থাকে। মানুষের বিশ্বাস সেই পোড়া ইট দুটি আজও পোড়ামার আধার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর ওপর দেবীর ঘট স্থাপন করা হয়। দেবী খুব জাগ্রত। এই মন্দিরের পাশে রয়েছে ভবতারণ শিব ও ভবতারিণী কালীর মন্দির।
পুঁটেকালী
কলকাতার বড়বাজারের পোস্তা এলাকায় রয়েছে পাঁচশো বছরের প্রাচীন পুঁটে কালীর মন্দির। তান্ত্রিক মানিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পুঁটেকালী নামকরণের পেছনে দুটি কাহিনি রয়েছে। মায়ের মূর্তির উচ্চতা মাত্র ছয় ইঞ্চি। খুব ছোট মেয়েদের ‘পুঁটি’ বলা হয়। সেই থেকে দেবীর নামকরণ হয়ে ‘পুঁটেকালী’। অন্য একটি মতে, মানিকচন্দ্রের এক বংশধর খেলারাম বন্দ্যেপাধ্যায় একদিন হোম করার সময় পাশের খাল থেকে একটি পুঁটি মাছ সেই হোমকুণ্ডে পড়ে যায়। মরা মাছটিকে তুলে তিনি জলে ফেলে দিতে সেটি আবারও জীবন্ত হয়ে যায়। তিনি বুঝতে পারেন দেবী খুব জাগ্রত। তখন থেকেই কালীর নাম হয় ‘পুঁটিকালী’ যা পরবর্তীতে বদলে ‘পুঁটেকালী’ হয়ে ওঠে। মন্দিরের বর্তমান বিগ্রহ কষ্টিপাথর দিয়ে তৈরি। এখানে পুজো হয় তন্ত্রমতে। পুজোর রাতে প্রতিমার গায়ে সোনার পোশাক পরানো হয়। পুজো উপলক্ষে এখানে কুমারী পুজো হয়। দেবীকে আমিষ এবং নিরামিষ— দুই প্রকার ভোগ দেওয়া হয়। আমিষ ভোগে থাকে পুঁটি, রুই, ইলিশ, বোয়াল প্রভৃতি মাছ। শনি-মঙ্গলবার ও অমাবস্যার দিনে এখানে বিশেষ পুজো হয়। মানুষের বিশ্বাস পুঁটেকালীর কাছে মানত করলে দেবী মনোবাসনা পূরণ করেন।
ফিরিঙ্গি কালী
কলকাতার বউবাজারে অবস্থিত অতি প্রাচীন ফিরিঙ্গি কালী মন্দির। এখানে সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতার পুজো হয়। স্থানীয় মতে কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি এখানে মায়ের পুজো দিতেন। সেই থেকে এই কালী ‘ফিরিঙ্গি কালী’ ও মন্দির ‘ফিরিঙ্গি কালী মন্দির’ নামে লোকমুখে পরিচিত হয়ে ওঠে। যদিও এই কাহিনির বাস্তবতা নিয়ে সন্দেহ আছে। ঐতিহাসিক রাধারমণ মিত্রের মতে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির সঙ্গে এই কালীবাড়ির কোনও সম্পর্ক নেই। অন্য একটি মতে, এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীমন্ত নামে এক ডোম। সেই সময় এই এলাকায় বসন্তরোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। এলাকার আশেপাশে অনেক ফিরিঙ্গি পরিবার থাকত। বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তারা এই মন্দিরে এসে সুস্থতার জন্য মানত করত। শ্রীমন্তের দেওয়া মায়ের মন্ত্রপূত জল খেয়ে তাদের অনেকের রোগ সেরে যেত। তখন তারা এই মন্দিরে পুজো দিত। ফিরিঙ্গিরা পুজো দিত বলে দেবী ‘ফিরিঙ্গি কালী’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। প্রতিষ্ঠার সময় মূর্তিটি ছিল মাটির। তবে এখন তা কংক্রিটের। মূর্তিটি সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা। এখানে পুজো হয় বৈদিক মতে। আগে এখানে পশুবলি হলেও এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
চিনা কালী
কলকাতার ট্যাংরার চায়নাটাউন এলাকায় রয়েছে চিনা কালীর মন্দির। এক চৈনিক বৌদ্ধ ভদ্রলোক এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উল্লেখ্য, কর্মসূত্রে এই এলাকায় অনেক চিনা মানুষ বাস করেন। এখানে থাকতে থাকতে তাঁরা এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছেন অনেকটাই। কথিত আছে প্রায় সত্তর বছর আগে একটি চিনা বালক অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা করেও সে সুস্থ হয় না। তখন এই জায়গায় একটি গাছের নিচে দুটি পাথরের মূর্তিকে বাঙালিরা কালীমা হিসেবে পুজো করত। সেই চিনা বালকটির বাবা-মা ছেলেকে সেখানে নিয়ে এসে পুজো দেন। আশ্চর্যজনকভাবে ছেলেটি সুস্থ হয়ে ওঠে। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তারা এখানে মা কালীর মন্দির নির্মাণ করে দেন যা চিনা কালীবাড়ি নামে খ্যাত হয়ে ওঠে। একজন বাঙালি পুরোহিত এখানে নিত্য মায়ের পুজো করেন। বাঙালি এবং চিনা, উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে দেবীর আরাধনা করেন। এখানে মায়ের ভোগে চাইনিজ খাবার দেওয়া হয়।
জহুরা কালী
মালদা শহরের ইংরেজবাজার থানার রায়পুর গ্রামে অবস্থিত তিন শতাব্দী প্রাচীন জহুরা কালীর মন্দির। কথিত আছে, ছল্ল তেওয়ারি নামে উত্তপ্রদেশের এক সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবী জহুরা চণ্ডীর আরাধনা শুরু করেছিলেন। রায়পুরের আমবাগানে তিনি দেবী চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন। তবে মানুষের বিশ্বাস, এই মন্দির অনেক প্রাচীন। অনেকের মতে বল্লাল সেন ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় এই এলাকা ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল। ডাকাতেরা এই দেবীর পুজো করত। বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা যে ধনরত্ন লুঠ করে আনত তা এখানে মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখত। ধনরত্ন বা হিরে-জহরত থেকে দেবীর নাম হয়েছে জহুরা কালী। প্রথাগত কালী মূর্তির থেকে এখানকার বিগ্রহ আলাদা। লালরঙের ঢিবির ওপর মুখোশ রেখে সেটিকে কালীমা হিসেবে পুজো করা হয়। অনেকের মতে, আগে এখানে কালীর পূর্ণাবয়ব মূর্তি ছিল। বিধর্মীদের হাত মূর্তি রক্ষা করার জন্য পুরোহিতরা সেটিকে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছেন। কালীকে এখানে চণ্ডী হিসেবে পুজো করা হয়। বৈশাখ মাসের শনি-মঙ্গলবার এখানে বিশেষ পুজো হয়। এখানকার পুজোর বিশেষত্ব হল রাত্রে নয়, দিনের আলোয় পুজো হয়।
আরও পড়ুন-চুরি করা ‘খুকি মা’ বদলে দিয়েছিল দয়ালের জীবন
ডাকাত কালী
পশ্চিমবঙ্গে নানা প্রান্তে এরকম বেশ মন্দির রয়েছে যেগুলো ডাকাতকালীর মন্দির নামে খ্যাত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাসুদেবপুর ও সিঙ্গুরের ডাকাতকালীর মন্দির। বাসুদেবপুরের ডাকাতকালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে ডাকাত বিধুভূষণ ঘোষ আর তার ভাই রঘু ঘোষ। এরা দিনের বেলা দিনমজুরের কাজ করত, রাতে ডাকাতি করত। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মা কালীর পুজো করে যেত। এখানে একসময় নরবলি দেওয়ার প্রথা ছিল। একবার সাধক রামপ্রসাদ এই পথে গেলে রঘু ডাকাতের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায় মায়ের কাছে বলি দেওয়ার জন্য। বলির আগে রঘু ডাকাতের অনুমতি নিয়ে সাধক রামপ্রসাদ মায়ের গান গায়। রঘু ডাকাত তখন অবাক হয়ে দেখে হাড়িকাঠে স্বয়ং মা! রামপ্রসাদকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে ছেড়ে দেয় সে।
সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুরে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন ডাকাত কালীর মন্দির। কথিত আছে, মা সারদা একবার এই পথ দিয়ে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে যাওয়ার সময় এখানে গগন ডাকাতের খপ্পরে পড়েন। তখনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। গগন ডাকাত মা সারদার মধ্যে দেবী কালীর রূপ দেখতে পান। ভয় পেয়ে তিনি তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে ছেড়ে দেন। এখানকার কালীর প্রধান প্রসাদ চালকলাই ভাজা ও মদ।
হাজারহাত কালী
হাওড়ার শিবপুরে রয়েছে হাজারহাত কালীর মন্দির। তান্ত্রিক আশুতোষ তর্করত্ন ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। স্বপ্নে হাজারহাত কালীর দর্শন পেয়েছিলেন তিনি। কুমারটুলির প্রিয়নাথ পাল এই মন্দিরের বিগ্রহ বানান। এখানকার দেবী নীল বর্ণের। তাঁর ডান পা সিংহের ওপর। প্রতিদিন মায়ের পুজোয় ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে থাকে ভাত, মাছ, ফল ও মিষ্টি। এই কালী খুব জাগ্রত। মানুষের বিশ্বাস তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি সেই ইচ্ছা পূরণ করেন।
বাংলার সংস্কৃতিতে মা কালী কেবল দেবী নন; তিনি মানুষের জীবন-চেতনার অনন্ত শক্তি। শ্মশানের নির্জন অন্ধকার থেকে আলোকোজ্জ্বল গৃহস্থ বাড়ি— সর্বত্র বিরাজ করেন তিনি। কোথাও তিনি ভয়ংকরী, কোথাও-বা স্নেহময়ী জননী। মা কালীর এই বহুরূপী সত্তা আমাদের শেখায়, ভয় ও ভক্তি এবং সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্যেই জীবনের পূর্ণতা। সময়ের স্রোতে বদলে গেছে অনেক কিছু কিন্তু মায়ের প্রতি মানুষের ভক্তি ও ভালবাসা আজও চির অম্লান। এভাবেই তিনি থাকবেন মানুষের জীবনে কেননা মা কালী হলেন সেই চিরন্তনী শক্তি যা আমাদের অন্ধকারে আলো দেখায়, বিপদে রক্ষা করে আর জীবনের এগিয়ে চলার পথে বিশ্বাসের আশা জাগিয়ে রাখেন।