বিয়ের আগেই খুন (kohrra)
রক্তাক্ত লাশ। পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত মাঠে। মুখ থেঁতলানো। বীভৎস। পরিচয়পত্র দেখে জানা যায়, মৃত ব্যক্তি একজন অনাবাসী ভারতীয়। নাম পল। ব্যবসায়ী-পুত্র। পরের দিন ছিল তার বিয়ে। বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ। হঠাৎ ছড়ায় দুঃসংবাদ। খুন করা হয়েছে তাকে। নৃশংসভাবে।
পলের সঙ্গে ছিল তার এক বিদেশি বন্ধু। খুনের ঘটনার পর থেকেই আশ্চর্যজনকভাবে সে নিখোঁজ। দানা বাঁধে সন্দেহ। কেন উধাও বন্ধুটি? কী কারণে খুন হতে হল পলকে? এর পিছনে কার বা কাদের হাত? উঠতে শুরু করে নানা প্রশ্ন।
খুলতে থাকে রহস্যের জট
তদন্তে নামেন পাঞ্জাবের জাগরানা অঞ্চলের কর্তব্যরত পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর বলবীর সিং এবং তার সঙ্গী অফিসার গারুন্ডি। দুজনেই দুঁদে অফিসার। সৎ। সাহসী। কর্তব্যে অবিচল। পরোয়া করে না কোনও কিছুকেই। পরতে পরতে রহস্য। তাদের তৎপরতায় ধীরে ধীরে খুলতে থাকে জট। নজর পড়ে এক সংগীতশিল্পী, গাড়ির চালক এবং মাদক ব্যবসায়ীর উপর। সন্দেহের তালিকায় উঠে আসে পরিবারের সদস্যরাও। কে ভাল, কে মন্দ, বোঝা যায় না। একাকার হয়ে যায় আলো-কালো। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের কথা ছিল পলের। কেমন সম্পর্ক ছিল হবু স্ত্রীর সঙ্গে? মাঝখানে তৃতীয় কেউ ছিল কি? জাগে প্রশ্ন। উঠে আসে চমকে দেওয়ার মতো কিছু তথ্য।
মার্ডার মিস্ট্রি
এই খুনের ঘটনা এবং তদন্ত নিয়েই তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘কোহরা’। নির্ভেজাল মার্ডার মিস্ট্রি। নেটফ্লিক্সে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে ১৫ জুলাই। সিরিজটির নির্মাতা ‘পাতাল লোক’-খ্যাত সুদীপ শর্মা। যাঁরা ডার্ক গল্প দেখতে পছন্দ করেন, তাঁরা জানেন ‘পাতাল লোক’ সিরিজে ডার্কনেসটা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ‘কোহরা’ও কিন্তু আচ্ছন্নতা, অন্ধকারময়তা এবং বুনোটের দিক থেকে কোনও অংশে কম নয়। সিরিজটি ছ’টি পর্বের। প্রতি পর্ব গড়ে ৪৫-৫০ মিনিটের। ধরলে শেষ না দেখে ছাড়া যায় না।
পটভূমি পাঞ্জাব
কাহিনির পটভূমি পাঞ্জাব। নির্মাণের মুনশিয়ানায় গোটা পাঞ্জাব এই সিরিজে হয়ে উঠেছে অন্যতম একটি চরিত্র। পাঞ্জাবের রাজনৈতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যকে এই সিরিজে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেখানো হয়েছে পাঞ্জাবের শহর, গ্রাম। সবুজ কৃষিজমির মাঝখান দিয়ে বাইক ছোটানোর দৃশ্যটি অসাধারণ। সিরিজটি হিন্দি। তবে সংলাপে আছে পাঞ্জাবি ভাষার আধিক্য।
আরোপিত মনে হয় না
আঁটোসাঁটো গল্প এবং টানটান চিত্রনাট্য। লিখেছেন গুঞ্জিত চোপড়া, সুদীপ শর্মা, দিগ্গি সিসোদিয়া। বেশকিছু সংলাপ মনে দাগ কাটে। গল্প এগিয়েছে স্বাভাবিক গতিতে। যেভাবে একটি ফুলের সঙ্গে আরেকটি ফুল দিয়ে মালা গাঁথা হয়, সেইভাবেই। একটি মুহূর্তের পর এসেছে আরেকটি মুহূর্ত, ঘটনার পর ঘটনা। কোনও অংশ আরোপিত বা অপ্রয়োজনীয় মনে হয় না। বজায় রাখা হয়েছে সাসপেন্স। অপরাধীকে চিহ্নিত করা যায় না সহজে। অপেক্ষা করতে হয় শেষ পর্যন্ত। এখানেই থ্রিলারের সার্থকতা। সাসপেন্সের পাশাপাশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আবেগ এবং সম্পর্কের নানা দিক। মূল ঘটনার পাশাপাশি দেখানো হয়েছে দুই পুলিশ অফিসারের ব্যক্তিগত জীবন। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না।
আরও পড়ুন- চিরস্মরণীয়া দুই নায়িকা
লম্বা রেসের ঘোড়া
সিরিজটি পরিচালনা করেছেন রণদীপ ঝা। বয়সে তরুণ। এরমধ্যেই চমকে দেওয়ার মতো কিছু কাজ দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ‘হলাহল’, ‘আগলি’। আশা করা যায়, ‘কোহরা’ তাঁকে আলাদা উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। সিরিজটা এতটাই নিখুঁত, কোনও জায়গা অতিরিক্ত মনে হয় না। অভিনেতাদের কাছ থেকে তিনি সেরাটা আদায় করে নিয়েছেন। এই পরিচালক লম্বা রেসের ঘোড়া।
অতি-অভিনয়ের দোষে দুষ্ট নয়
অনবদ্য অভিনয় এই সিরিজের বড় প্রাপ্তি। যদিও নেই তারকার উপস্থিতি। তবে যাঁরা আছেন, ফাটিয়ে দিয়েছেন। পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর বলবীর সিং-এর চরিত্রে দেখা গেছে সুভিন্দর ভিকিকে। পুলিশ অফিসার গারুন্ডির ভূমিকায় বরুণ সোবতি। সুভিন্দর ততটা পরিচিত মুখ না হলেও, বরুণ ইতিমধ্যেই পরীক্ষিত, সমাদৃত। অভিনয় করেছেন বেশকিছু ছবি ও সিরিজে। তাঁর ‘অসুর’ দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে। এই সিরিজে তাঁর স্মার্ট অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি পল চরিত্রে মার্জিত অভিনয় করেছেন বিশাল হান্ডা। লিয়াম চরিত্রে ইভান্তি নোভাক, ক্লারা চরিত্রে রাচেল শেলি, পলের বাবা স্টিভ ধিলনের চরিত্রে মণীশ চৌধুরী, নিমরাতের চরিত্রে হারলিন শেঠি, সাকারের চরিত্রে সৌরভ খুরানা, মান্না চরিত্রে বরুণ বাদোলা যথাযথভাবে চিত্রনাট্যের দাবি মিটিয়েছেন। কোনও দৃশ্য অতি-অভিনয়ের দোষে দুষ্ট নয়। ক্যামেরা, সম্পাদনা, আবহ-সহ প্রতিটি বিভাগ প্রশংসনীয় কাজ করেছে।
জবরদস্ত্ ট্যুইস্ট
খুন, তদন্তের পাশাপাশি ‘কোহরা’র গল্পে তুলে ধরা হয়েছে জেনারেশন গ্যাপের সমস্যা। পারিবারিক কারণে ছেলে-মেয়ে এবং মা-বাবার মধ্যে কীভাবে দূরত্ব বাড়ছে, চমৎকারভাবে দেখানো হয়েছে। গল্পের শেষে রয়েছে জবরদস্ত্ ট্যুইস্ট। কী সেটা? না-ই বা বললাম। জানার জন্য দেখতে হবে সিরিজটি। এটা বলা যায়, ক্রাইম থ্রিলারটি কোনওভাবেই দর্শকদের নিরাশ করবে না।