প্রতিবেদন : বিশ্বশ্রেষ্ঠ হবে কলকাতা বইমেলা (Kolkata Book Fair)। ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনে এসে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের থিম কান্ট্রি ব্রিটেন৷ সে-প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লন্ডনের সঙ্গে ভারতের বিশেষ করে রাজ্যের সম্পর্ক আজীবন অটুট থাকবে।
সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক বইমেলা প্রাঙ্গণে স্টেট ব্যাঙ্ক অডিটোরিয়ামে কলকাতা বইমেলা ২০২৪-এর উদ্বোধনের নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগেই উপস্থিত হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই বইমেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন মমতা। মেলা চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেও একজন লেখক, গীতিকার। এদিন নিজের বইয়ের সংখ্যা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি জানান, ১৯৯৫ সালে তাঁর প্রথম বই প্রকাশ পেয়েছে দে’জ পাবলিশিং থেকেই। এখনও পর্যন্ত ১৪৩টি বই লিখেছেন তিনি। আগামী বছরের মধ্যে ১৫০ ছাড়িয়ে যাবে তাঁর বইয়ের সংখ্যা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় ট্রাভেল করতে করতে বই লিখি। নিজের হাতে লেখার সময় কম। সব থেকে ভাল হয় যদি আমি বলি আর কেউ লিখে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগে বইমেলা অনেক ছোট জায়গায় হত, তা নিয়ে বিতর্ক হত। গায়ে গায়ে লেগে থাকত দোকান। এখন কত বড় জায়গা হয়েছে। এই জায়গাটা এখন বইমেলা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিয়েছি। এটা এখন থেকে বইমেলা প্রাঙ্গণ। আমরা সব সময় সহযোগিতা করি। কারণ আমাদের সহযোগিতা ছাড়া ওরা কিছু করতে পারবে না।
এরপরেই লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমাকে কীভাবে আমি লন্ডন চিনি? তাহলে বলব আমি লন্ডনের সব রাস্তা চিনি। আমি পায়ে হেঁটে ঘুরেছি লন্ডনের রাস্তায়। হাঁটতে ভালবাসি। লন্ডন শুধু আপনাদের নয়, আমাদেরও শহর। আমাদের এখানের অনেকেই সেখানে কাজ করে। যুব সম্প্রদায় ওখানে পড়াশোনা করে। খুব ভাল কমিউনিকেশন আছে আমাদের ইউকের সঙ্গে।
আরও পড়ুন- এগোল মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের সময়
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, বইমেলা নিয়ে আগেই কবিতা লিখেছিলেন তিনি। সেই কবিতা পাঠ করেন তিনি— ‘ব্যস্ততম বিকেলের দীর্ঘতম সন্ধ্যায় জমে উঠেছিল বইমেলা বইপ্রেমীদের পবিত্র ছোঁয়ায়/ ধুলা মন্দিরের দুর্লভ সন্ধ্যায় কত মানুষের কাঙ্ক্ষিত আনাগোনায়/কিছু মুহূর্ত দেখা হল বইপ্রেমী তোমার ও আমার।’ তিনি বলেন, কেউ কেউ নিজেদের প্রচার খুব করে। আমরা করতে চাই না। বাংলাই পথ দেখায় সব সময়। এখন সবাই খুব ব্যস্ত তবুও বলব একটু বই পড়ুন।
মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা পুলিশের স্টলে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের মডেল সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীও। এরপর ‘জাগো বাংলা’র স্টলে যান মমতা। প্রদীপ জ্বালিয়ে ফিতে কেটে স্টলের উদ্বোধন করেন। সেখানে লোকশিল্পীদের সঙ্গে ছবিও তোলেন, এমনকী বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গত করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মণ্ডপে গিয়ে বেশ কয়েকটি বইয়ের পাতা উল্টে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। আধিকারিক ও আয়োজকদের একগুচ্ছ নির্দেশ দেন তিনি। ঢাকের তাল আর বাউলের সুরে বইমেলা প্রাঙ্গণ তখন জমজমাট। আগামিকাল বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ‘ব্রিটেন ডে’ পালিত হবে বলে জানা যাচ্ছে। এ বছর বইমেলায় আগামী ২১ জানুয়ারি শিশু দিবস পালিত হবে এবং ওইদিন গিল্ডের তরফে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছে। প্রবীণদের জন্য ২৪ জানুয়ারি ‘সিনিয়র সিটিজেন ডে’ পালিত হবে। ৩১ জানুয়ারি রাত ন’টায় সমাপ্তি অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।