বিজেপির কুৎসিত-ঘৃণ্য- ভেদাভেদের রাজনীতি, দেশজুড়ে চক্রান্ত

মাতৃভাষা বাংলা হলেই বুঝতে হবে বাংলাদেশি!

Must read

প্রতিবেদন : ভাবুন তো, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলছেন— যাঁরা জাতিগত জনগণনায় নিজেদের মাতৃভাষা বাংলা উল্লেখ করেছেন, তাঁরা নাকি ‘অবৈধ বাংলাদেশি’! ছিঃ! হিমন্ত বিশ্বশর্মা ছিঃ! আপনি এবং আপনার দল বিজেপি, ‘বাঙালি’ আর ‘বাংলাদেশি’-র মধ্যে পার্থক্যটাই মুছে দিতে চাইছেন। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক যে, ভারতবর্ষের একটি রাজ্যের মানুষ জনপ্রতিনিধিদের দ্বারাই ঘৃণ্য-কুৎসিত রাজনীতি ও বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন। মাতৃভাষা বাংলা বললেই বিদেশি! হিমন্তের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। ‘বাংলাবিরোধী’ বিজেপিকে একহাত নিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর সাফ কথা, বিজেপি বাঙালিদের ঘৃণা করে।

তীব্র বাংলাবিরোধী একটা দল। তা না হলে তাঁদের দলের একজন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলা যাঁদের মাতৃভাষা, তাঁরা নিজেদের বিদেশি হিসাবেই পরিচয় দিচ্ছেন। এই পুরো ঘটনাই বিজেপির সুপরিচিত অ্যাজেন্ডার অংশ। সেখানে বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দেশছাড়া করে দেওয়া নোংরা চক্রান্ত চলছে। ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু জেনে রাখুন, আমরা রাজ্যের মানুষকে নিজের দেশেই ‘বিদেশি’ হয়ে যেতে দেব না।

আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ, বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থে নয়া স্বাস্থ্য প্রকল্পের পথে রাজ্য

প্রথমে অসম সরকার বাংলার একজন বৈধ নাগরিককে এনআরসি নোটিশ পাঠায়। তিনি ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোচবিহারে বসবাস করছেন। সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় এখন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলছেন— আদমশুমারি পত্রে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা লেখা দেখলেই, অসমে বিদেশিদের সংখ্যা বোঝা যাবে। এত বাঙালি-বিদ্বেষ! এর উৎস কোথায়? কেন এত ঘৃণা বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রতি? শুধুমাত্র এই কারণে কি, যে বাংলার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে অপমানিত করেছে? তৃণমূল সাবধান করে দিয়েছে, ঘৃণা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং বহিরাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে যদি বাংলাকে দখল করতে চাও, তবে আমাদের করুণা রইল তোমাদের জন্য। বাংলার মানুষ এবার আরও বেশি জনসমর্থন নিয়ে বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবে।

সম্প্রতি অসমের এক সংখ্যালঘু নেতা রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, আসন্ন জাতিগত জনগণনায় তাঁরা যেন নিজেদের মাতৃভাষা হিসাবে ‘অসমিয়া’কে না বেছে নিয়ে বাংলাকে বেছে নেন। ওই সংখ্যালঘু নেতার মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আরও বিতর্কিত মন্তব্য করেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, অসমে অসমিয়াই স্থায়ী। এটাই সরকারি ভাষা, এটাই রাজ্য ভাষা। কিন্তু কেউ যদি বাংলাকে নিজেদের মাতৃভাষা হিসাবে দেখায়, তাহলে শুধু এটাই বোঝা যাবে যে রাজ্যে কতজন বিদেশি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যায়, তাহলে কি বাংলাভাষী মানেই তাঁদের বিদেশি হিসাবে দেগে দিতে চাইছেন হিমন্ত? তার জবাবে কুণাল বলেন, এসব কী চলছে? একটা বাঙালিবিরোধী, বাংলাবিরোধী দল বিজেপি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা নয়? পশ্চিমবঙ্গবাসী, ভারতবাসী নয়? এরা যদি বাংলাদেশের কথা বলে, তাহলে অমিত শাহর বিএসএফ থাকতে বেআইনি অনুপ্রবেশ হয় কী করে? কার দায়? সেসব এড়িয়ে বাংলা বললেই বিদেশী বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে? তৃণমূল কংগ্রেস সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী একটি অতি জঘন্য এবং অত্যন্ত নিন্দনীয় দাবি করেছেন। তাঁকে একটু মনে করিয়ে দিই, আমাদের জাতীয় স্ত্রোত্র বাংলা— ‘জনগণমন’। আমাদের জাতীয় গানও বাংলা— ‘বন্দেমাতরম্’। তাহলে যখন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ‘জনগণমন’ কিংবা ‘বন্দেমাতরম্’ গান, তখন কি উনিও তাঁর যুক্তিতে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হয়ে যান? নিজের বিকৃত যুক্তি অনুযায়ী, এবার কি তাঁর নাগরিকত্বই প্রশ্নের মুখে পড়বে না?

Latest article