কুণাল ঘোষ : M for মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
M for ম্যাজিক।
এবং মমতা = ম্যাজিক।
প্রমাণিত আগেও। প্রমাণিত আবার।
সংবাদমাধ্যমে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বারবার সমস্যায় পড়তে হয় মমতাদির কপির হেডার কী হবে?
এই যেমন এখন।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রও বিভ্রান্ত, কোনটা ছেড়ে কোনটা হেডার।
আবার মমতা ম্যাজিক।
নাকি, নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন মমতা।
নাকি, মমতা মমতাই।
নাকি, একেই বলে জবাব।
নাকি, মমতা-ঝড়ে বিধ্বস্ত বিজেপি।
নাকি, জবাবের নাম মমতা।
নাকি, রেকর্ডের নাম মমতা।
এক সে বড়কর এক হেডার পেশ করছেন সহকর্মীরা। বার্তা সম্পাদকের গালে হাতে।
রবিবার আসলে কী হল?
আসলে, গোটা দেশে বাংলার একটা বার্তা গেল। তা হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নেত্রী। তাঁর সঙ্গে অসভ্যতার চেষ্টা হলে বরদাস্ত করবে না বাংলা। আর গোটা দেশের সাড়া বুঝিয়ে দিল, মাথা উঁচু করেই পরের লক্ষ্যের দিকে এগনোর অভিযান চলবে।
স্কোরবোর্ড যে ৩-০ দেখাবে, প্রত্যাশিত ছিল।
প্রশ্ন ছিল ভবানীপুরের ব্যবধান আর মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্রে কংগ্রেস, বামেদের লড়াই নিয়ে।
রবিবার বেলা গড়াতেই স্পষ্ট, এসব মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ার কৃত্রিম জল্পনা।
মানুষ প্রাণঢেলে সমর্থন করেছেন একটিই নামকে, একটিই দলকে।
আসলে এই রায় হল বাংলার জবাব।
ধারাবাহিক কুৎসা, ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসার রাজনীতি, বেইমানির বিরুদ্ধে জবাব।
বিধানসভা ভোটে ২১৩ আসনে তৃণমূল প্রার্থীদের জিতিয়ে বাংলা বলে দিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চাই। নন্দীগ্রামে রহস্যজনকভাবে যা ঘটানো হয়েছে, মানুষ জানেন এবং তা আদালতে বিচারাধীন।
বিজেপি সর্বশক্তি দিয়েও বিধানসভায় জিততে না পারার রাগ ভুলতে পারছে না। সমানে চলছে চক্রান্ত, কুৎসা।
মানুষ এই অসভ্যতার বিরুদ্ধে এখন জবাব দিয়েছেন।
ভবানীপুরে এবারও কম চেষ্টা করেনি বিজেপি।
কেন্দ্রের মন্ত্রীরা ঘুরেছেন, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ঘুরেছে, এত কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘুরেছে, গদ্দার বুল ডগটাকে দিয়ে বিজেপি ঘেউ ঘেউ করিয়েছে, ওদের প্রার্থী ‘চিৎকার ভাবীজি’ নানা নাটক করে বেড়িয়েছেন।
তার পরেও মমতাদি নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে বিপুল ভোটে জিতেছেন। ২০১১-র থেকেও বেশি এবং ২০২১-এর ভোট থেকে দ্বিগুণ।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, সব ক’টি ওয়ার্ডে লিড। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছাড়া এটা হতে পারে?
বিজেপির ভোট শতাংশটাও কমে গিয়েছে।
এবং বাম। মানে সিপিএম।
প্রার্থী শ্রীজীব। পার্টি নির্জীব।
জামানত নেই।
শুধু টিভি, ফেসবুক, ট্যুইটারে বিপ্লব।
তৃণমূলের সমালোচনা করে বিজেপিকে সুবিধে করে দিতে গেলে তো মানুষ প্রত্যাখ্যান করবেনই।
এরা আর কবে বুঝবে?
একই কথা প্রযোজ্য কংগ্রেসের ক্ষেত্রে।
জঙ্গিপুরে জাকির হোসেন জিততেনই। সেই সঙ্গে সামশেরগঞ্জেও তৃণমূলের জয় প্রমাণ করে দিল মানুষ কংগ্রেস নয়, তৃণমূলের উপরেই আস্থা রাখছেন।
কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতারা বিধানসভায় শূন্যে নেমে এলেও শিক্ষা নেননি। তাঁরা অন্যায়ভাবে তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে আরও জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছেন।
আরেকটি দেখার মতো বিষয়।
ত্রিপুরায় ব্যাপক উল্লাসের ছবি আসছে।
অন্য রাজ্য থেকে আসছে বিপুল সাড়া।
অর্থাৎ মমতাদির এই বিপুল জয় এবং ৩-০ ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিকল্প শক্তির মুখ এবং আধার হিসেবে আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠা দিল মমতাদি এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে। আরও কাজ, আরও দায়িত্ব। বাংলায় এবং গোটা দেশে। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা আরও উৎসাহিত, আত্মবিশ্বাসী।
মমতাদি দুপুরের পর যখন ঘর থেকে বেরিয়ে সামনে এলেন, মানুষকে ধন্যবাদ দিলেন, তখন তাঁর মুখ থেকেও একটি সুন্দর কথা বেরিয়েছে- ‘‘মন ভরে গিয়েছে।’’
ধারাবাহিক কুৎসা, চক্রান্তের বিরুদ্ধে মাথা তুলে লড়াইয়ের পর মানুষ যখন প্রাণভরে আশীর্বাদ দিয়ে বুঝিয়ে দেন পাশে আছেন, তখন মন তো ভরবেই।
এই রায় বুঝিয়ে দিল, বাংলা দমনপীড়ন আর চক্রান্তে মাথা নিচু করবে না। লড়াই চলবে।
আমাদের বাংলার দুর্গ অটুট থাকবে।
আর দিল্লিতে তোমাদের সিংহাসন এবার যেতে বসেছে। ত্রিপুরা, গোয়া-সহ একাধিক রাজ্যেও তৃণমূলের জয়যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা জিতব।
এই রায় বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে—
ক) পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি; দেশের সম্পদ বিক্রি-সহ কেন্দ্রের সব জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে মানুষের রায়।
খ) মমতাদির নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের উন্নয়ন, কাজ, প্রকল্পগুলির প্রতি মানুষের সমর্থন।
গ) বাংলা এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, প্রতিহিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষের রায়।
ঘ) বিজেপির বিরুদ্ধে রায় এবং বিজেপির বিরুদ্ধে মমতাদি ও তৃণমূলকেই একমাত্র বিকল্প হিসেবে আস্থা রাখার রায়।
এরই প্রতিফলন আজ ৩-০ মোড়কে।
আর এই আত্মবিশ্বাসী মুহূর্ত থেকেই পরের চারটি উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করে দিলেন জননেত্রী।
কাজ অনেক বড়।
বিশ্রামের সুযোগ নেই।
আজ সাফল্য এসেছে। আজ থেকেই পরের লড়াই শুরু।
মমতাদির নেতৃত্বে, অভিষেকের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিকরা কর্তব্যপালনে এগিয়ে যাবেই।
বাংলার মা, মাটি, মানুষ, আবার সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ।