সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি: গরুমারা জাতীয় উদ্যানে যেন উৎসবের আবহ! বন দফতরের কুনকি হাতি রামি এক ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ গরুমারার মেদলা পিলখানায় রামি সন্তানের জন্ম দেয়। এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ এবং বিশেষ পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বনকর্মীরা। এই খুশির খবরের সঙ্গে এসেছে নতুন এক দৃষ্টান্ত, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনদপ্তরের তরফে রামিকে দেওয়া হয়েছে মাতৃত্বকালীন ছুটি। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তাকে এখন আর কোনো বনদফতরের কাজে নিযুক্ত করা হচ্ছে না। চলছে রাজকীয় যত্ন! রামির জন্য প্রতিদিন পরিবেশন করা হচ্ছে তার প্রিয় খাবার গুড়ের জল, ওআরএস, পুষ্টিকর ফলমূল, আর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ তার প্রিয় কচি কলাগাছ। বছর বাইশের রামির জীবনকাহিনি যেন সিনেমার চিত্রনাট্য!
আরও পড়ুন-দুর্ঘটনার কবলে তেজস্বীর কনভয়, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আরজেডির
ছোটবেলায় মেদিনীপুরের জঙ্গলে দলছুট হয়ে পড়েছিল সে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জলদাপাড়ায় আনা হয়, পরে পাঠানো হয় গরুমারায়। সেখানেই বন দফতরের প্রশিক্ষণে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে দক্ষ কুনকি। জঙ্গল পাহারা থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণী উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রামি। বারবার দলছুট দাঁতাল হাতিকে বশে এনে সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে রামি প্রমাণ করেছে তার দক্ষতা। জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে বনকর্মীরা রামির শরীরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। চিকিৎসা ও পরীক্ষায় ধরা পড়ে সে গর্ভবতী। সেই থেকেই তাকে সব দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয় এবং শুরু হয় বিশেষ যত্ন। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হয় প্রসবযন্ত্রণা, তড়িঘড়ি আনা হয় চিকিৎসক। সফলভাবে একটি সুস্থ কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় রামি। গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের এডিএফও রাজীব দে জানিয়েছেন, শিশু এবং মা একদম সুস্থ। তাদের সবরকম নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যত্নে কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। রামি এখন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছে, চিকিৎসকদের সবুজ সংকেত পেলে সে আবার ডিউটিতে ফিরবে। বনদফরের সকলের প্রিয় রামির কন্যা জন্মে বন বিভাগের অন্দরমহলে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দ। নতুন প্রাণের আগমনে যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে গরুমারার সবুজ বনভূমি।