কুণাল ঘোষ, মাদ্রিদ (মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার পৃথিবী কাঁপানো স্পেনের লা-লিগার (La Liga Academy In Bengal) সঙ্গে ঐতিহাসিক মউ স্বাক্ষরিত হল রাজ্য সরকারের৷ বাংলা ফুটবল ইতিহাসে এ এক বৈপ্লবিক ঘটনা। এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মধ্যমণি হয়ে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেট আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও৷ এই চুক্তির ফলেই আগামিদিনে বাংলার সঙ্গে লা-লিগার ফুটবল বিষয়ক সবকিছুর আদানপ্রদান হবে৷ লা-লিগা থেকে কোচ, ফুটবলার ও বিশেষজ্ঞরা বাংলায় যাবেন প্রশিক্ষণ দিতে। শুধু ফুটবলারদের নয়, তাঁরা কোচদেরও প্রশিক্ষণ দেবেন। কলকাতা অ্যাকাডেমি বাদেও জেলায় জেলায় গিয়ে ফুটবলার তুলে আনবে লা-লিগার দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম। আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল কী তা বাংলাকে শেখাবেন লা-লিগা বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে বাংলা থেকে মাদ্রিদে নিয়ে এসেও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে লা-লিগা। সার্বিকভাবে গোটা বাংলার ফুটবল উপকৃত হবে এই বৈপ্লবিক চুক্তির ফলে। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে মাদ্রিদে এই চুক্তির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লা-লিগার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার তেবাস। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্পেনে ভারতের রাষ্ট্রদূত দেবেশ পট্টনায়েক-সহ অন্যান্যরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণের শুরুতেই বলেন, বাংলা মানেই বাণিজ্য। আমরা গর্বিত লা-লিগার (La Liga Academy In Bengal) প্রেসিডেন্ট নিজে উপস্থিত থেকে আমাদের সঙ্গে এই মউ স্বাক্ষর করেছেন। আমরা গর্বের সঙ্গে বলি, ‘সব খেলার সেরা ফুটবল’। তাঁর সংযোজন, বাংলার যেকোনও গ্রামে যান, দেখবেন সবাই ফুটবল খেলছেন। বাংলা কতখানি ফুটবলে আসক্ত তা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মধুমেহ রোগের উদাহরণ তুলে এনে বলেন, মিষ্টি ভালবাসেন এমন মানুষজনের মধুমেহ রোগ হলেও তাঁরা ডায়াবেটিক মিষ্টি খান। বাংলায় ফুটবল খেলাটাও অনেকটা সেইরকম। এরপরে তিনি বলেন, আমরা অনেক আশা নিয়ে এসেছি। লা-লিগা বাংলায় ফুটবল অ্যাকাডেমি তৈরি করুক। জমির কোনও সমস্যা হবে না। যা প্রয়োজন সব পাবেন। আমি চাই আগামী দিন বাংলা থেকে মেসি-রোনাল্ডো তুলে আনুক।
আরও পড়ুন- ফাইনালে শ্রীলঙ্কা
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমি সারাজীবন ক্রিকেট খেললেও, ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন থাকলেও ছোট থেকেই ফুটবল ভালবেসেছি। খেলেছি। বাংলা-ভারতবর্ষ ফুটবলের দেশ। ফুটবলের জনপ্রিয়তা সাঙ্ঘাতিক বাংলায়। এই অ্যাকাডেমি তৈরি হওয়ার ফলে উপকৃত হবে বাংলার ফুটবল ও ভবিষ্যতের ফুটবলাররাও৷ স্পেন ফুটবলের দেশ বলেই পরিচিত। আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলাররা এখানেই তৈরি হয়েছেন। খেলেছেন। এখানে ফুটবলের ঐতিহ্য রয়েছে। আমি আশা করব লা-লিগা কলকাতাতে শুধু অ্যাকাডেমি করে প্রশিক্ষণ দেবে তাই নয়, কলকাতা লিগেও তারা খেলবে। লা-লিগার প্রেসিডেন্ট তেবাস বলেন, আমিও শুনেছি বাংলায় ফুটবলের জনপ্রিয়তা। ফুটবল নিয়ে পাগলামি কোন পর্যায়ে আছে। আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করলাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে। বাংলাতে আমাদের অ্যাকাডেমি বেশ বড় করে বাংলা ফুটবলের জন্য কাজ করবে। স্পেনে ভারতের রাষ্ট্রদূত দেবেশ পট্টনায়েক বলেন, আমি দেখেছি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিলে কথা রাখেন। এক্ষেত্রেও এই চুক্তি ভালভাবেই বাস্তবায়িত হবে, তা হলফ করে বলতে পারি।
এদিন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্ত্রী ডোনা ও কন্যা সানাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরে লা-লিগার প্রেসিডেন্ট তেবাস ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রীর আলাদা কথা হয়। এরপরেই বলরুমে হয় ঐতিহাসিক চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। কলকাতার তিন প্রধান ক্লাবের কর্তা ইস্টবেঙ্গলের আদিত্য আগরওয়াল, মোহনবাগানের দেবাশিস দত্ত ও মহমেডান স্পোর্টিংয়ের ইশতিয়াক আহমেদ রাজু উপস্থিত ছিলেন। এঁরা প্রত্যেকেই উচ্ছ্বসিত এই চুক্তি স্বাক্ষরে। অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী সপরিবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শিল্পপতি ও সফরসঙ্গী ও ক্লাবকর্তাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। চুক্তি স্বাক্ষর ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর লা-লিগার প্রেসিডেন্ট তেবাস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি বল দেন। সেটি হাতে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, খেলা হবে।