বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার : দুর্গম বক্সায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গতি এসেছে চিকিৎসায়। আগে এই পাহাড়ি পথে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার কথা ভাবতেও পারতেন না বাসিন্দারা। এখন দুর্গম পথে অভিনব পালকি-অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে গিয়েছে সেখানে। এবার ওই অ্যাম্বুল্যান্সে করে ফুটফুটে কন্যাসন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরলেন পাহাড়ের বাসিন্দা পাশালুঙ ডুকপা। সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে বারবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই নতুন মা।
আরও পড়ুন-টিকা গবেষণায় ১০০ কোটির প্রতিশ্রুতি বাস্তবে শূন্য! ফাঁস আরটিআইয়ের তথ্যে
আলিপুরদুয়ার জেলার সিনচুলা পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বক্সা, লেপচাখা, চুনাভাটি, দাঁড়াগাঁও, আদমার মতো ১৩টি গ্রাম, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৬০০ ফুট বা তার বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। যে-গ্রামগুলোতে দুর্গমতার কারণে এই ৫ জি’র যুগেও গৃহেই প্রাচীন পদ্ধতিতেই হত সন্তানপ্রসব। যদি প্রসবের সময় সমস্যা হত, তবে বাঁশের মধ্যে কাপড় বেঁধে মাচা বানিয়ে প্রসূতিকে কঠিন পাকদণ্ডী বেয়ে নামিয়ে আনা হত সমতলে। নিয়ে যাওয়া হত হাসপাতালে। খবরের কাগজের পাতায় এই লাইন দুটি পড়ে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবে ঠিক ততটাই কঠিন কাজ ছিল সেটা। তাই বহু ভাবনাচিন্তা করে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে এই পাহাড়বাসীদের জন্য সম্প্রতি চালু করে পালকি অ্যাম্বুল্যান্স। এবার তাতেই কেল্লা ফতে।
আরও পড়ুন-এগোলেন সিন্ধু
গত ১৫ জানুয়ারি হঠাৎ শারীরিক ভাবে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন দাঁড়াগাঁওয়ের বাসিন্দা সন্তানসম্ভবা বছর বাইশের পাশালুঙ ডুকপা। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পাহাড়ে সদ্য চালু হওয়া পালকি-অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাকে। খবর পেয়েই বাড়ির সামনে হাজির। এবং তাতে চড়েই পাহাড় থেকে নেমে আসেন জিরো পয়েন্ট। তারপর সেখান থেকে প্রচলিত অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কালচিনির লতাবাড়ি মাদার হাবে। শারীরিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ায়, তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে।
সেখানেই সোমবার এক ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই আরও ৮টি পালকি-অ্যাম্বুল্যান্স চালু হতে চলেছে বক্সা পাহাড়ে। এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মন বলেন, ‘‘বাকি পালকি-অ্যাম্বুল্যান্সগুলি চালু হলে দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দারা আরও উপকৃত হবেন।”