মিতা নন্দী, ঝাড়গ্রাম: কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিনে দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তবাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল মেতে থাকল লোক উৎসব ‘আভড়াপুণেই’-এ। বিশেষ করে সুবর্ণরেখা নদীর উভয় তীরে পালিত হয় ‘আভড়াপুণেই’ বা অব্যূঢ়া পূর্ণিমা অথবা অব্যুঢ়া ব্রত। এই লিঙ্গবৈষম্যহীন লৌকিক উৎসব পালিত হয় অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের জন্য।
আরও পড়ুন-লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অর্থে
উৎকল সংস্কৃতি বা ওড়িশার রীতিমতো প্রভাব এই উৎসবে লক্ষ্য করা যায়। এ রাজ্যের ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম ব্লক-সহ বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকার একটা বড় অংশ ওড়িশা রাজ্য লাগোয়া হওয়ায় ওইসব অঞ্চলে ওড়িয়া মেশানো বাংলা শব্দ বা ভাষা লক্ষ্য করা যায়। ওড়িশার ‘কুমার পূর্ণিমা’র প্রভাব এই ‘আভড়াপুণেই’ উৎসবে পরিলক্ষিত হয়। এই উৎসবে মা, ঠাকুমা, দিদিমারা অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের মঙ্গল কামনা করেন। তাঁদের অবিবাহিত সন্তানরা যাতে ভবিষ্যতে ভাল জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনী পায় সেই কামনা করা হয়। এদিন বাড়িতে পিঠে, পায়েস, লুচি, সুজি, ক্ষীর থেকে শুরু করে নানা নিরামিষ পদ তৈরি হয়। সারাদিন অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের ‘ভুজা’ বা মুড়ি খাওয়া বারণ। স্থানীয় ভাষায় মুড়িকে ভুজা বলা হয়। মুড়ি খেলে এই ব্রত ‘বুড়ি যাওয়া’ (ডুবে যাওয়া) বা ডিসকনটিনিউ হওয়ার ভয় থাকে।
আরও পড়ুন-পুরসভা থেকে সারদার ফাইল-লোপাট, ফের জেরার মুখে সৌমেন্দু
এদিন স্নান করে নতুন পোশাক বা নিদেন পক্ষে নতুন রেশম (ঘুনসি) কোমরে পরতে হয়। স্নানের পরে মায়েরা অবিবাহিত সন্তানের মঙ্গলকামনায় কপালে চন্দনের মঙ্গল টীকা পরিরে দেন। অনেক অবিবাহিত ছেলেমেয়ে যাদের বয়স একটু বেশি তারা অনেক ক্ষেত্রে নিজের ভবিষ্যৎ জীবনে কার্তিকের মতো স্বামী বা লক্ষ্মী প্রতিমার মতো স্ত্রী পাওয়ার লক্ষ্যে সরাদিন উপবাস রেখে ব্রত করেন। আবার কারও কারও মতে চাঁদের মতো সুন্দর জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনী পাওয়া এই ব্রতর লক্ষ্য। পূর্ণিমার চাঁদ উদয় হওয়ার পর এই ব্রত শেষ হয় তুলসী গাছে জল ঢেলে। ছেলেমেয়েদের মঙ্গল কামনায় অনেক ক্ষেত্রে মা তুলসী গাছে জল ঢালেন। ব্রত শেষে আজকাল তুলসী গাছে জল ঢালার রীতি প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। এই উৎসব ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে সমান। এই নিয়ে আগের দিনে মা-ঠাকুমারা অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের আশীর্বাদ করে থাকেন।