প্রয়াত বিশিষ্ট শোলা শিল্পী অনন্ত মালাকার। কীর্ণাহারের বাসিন্দা ছিলেন শিল্পী, কিন্তু তিনি থাকতেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার পালিটা গ্রামে। পরিবার সূত্রে খবর, বেশ কিছুদিন ধরে হৃদরোগের ভুগছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবার গভীর রাতে বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিল্পীকে। তবে শেষ রক্ষা হল না, হাসপাতালেই মৃত্যু হয় কিংবদন্তি শোলা শিল্পীর।
শিল্পী অনন্ত মালাকারের (Ananta Malakar) তৈরি শোলার পূর্ণাঙ্গ দুর্গা মূর্তি একাধিকবার বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। তাঁর এই শিল্পকলার জন্য ১৯৭০ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে পুরস্কৃত হন তিনি। ১৯৭৪ সালে রাশিয়ায় গিয়ে শোলার লেনিনের মূর্তি তৈরি করেন। ২০০৪ সালে শিল্পগুরু উপাধির পাশাপাশি দেশ বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কারে পুরস্কৃত হন শিল্পী। আমেরিকার নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউজার্সি, রাশিয়ার মস্কো, কানাডার টোরেন্টো, হার্বোফ্রন্ট, তাইওয়ান প্রভৃতি জায়গায় শোলা শিল্পের প্রদর্শনী করেছেন বীরভূমের অনন্ত মালাকার (Ananta Malakar)। অনন্ত বাবু তাঁর কাজ শেখা শুরু করে রামকিঙ্কর বেইজ-এর হাত ধরে। একটানা তিন বছর কাজ শেখার পর তিনি জীবিকা অর্জনের জন্য বাড়ি থেকে কলকাতা চলে আসেন।
কলকাতার কুমোরটুলিতে থাকতেন তিনি। তিনি কুমোরটুলিতে শোলার অলংকার তৈরি করতে শুরু করেন। ভবানীপুরের সপ্তর্ষি ক্লাবের জন্য সম্পূর্ণ শোলার মূর্তি তৈরির বায়না নেন। মাত্র দু’মাসের মধ্যেই আট ফুট চালি বিশিষ্ট পাঁচ ফুটের সম্পূর্ণ শোলার সরস্বতী মূর্তি তৈরি করে সকলকে অবাক করে দেন শিল্পী অনন্ত মালাকার। এমনকি সেই মূর্তি দর্শনের উদ্দেশ্যে আসেন মহানায়ক উত্তমকুমারও। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে আড়াই ফুটের বাংলা আর্টের দুর্গা প্রতিমা গড়ে পাওয়া জাতীয় পুরষ্কার। তাঁর শিল্পের ছাপ রয়েছে কলকাতা জাদুঘর থেকে শুরু করে নেহরু চিল্ড্রেন মিউজ়িয়াম, দিল্লির ন্যাশনাল মিউজ়িয়াম, ন্যাশনাল ক্রাফটস মিউজিয়াম, ছত্রপতি শিবাজী মিউজিয়াম ছাড়াও আরও বিভিন্ন জায়গায়।
একাধারে তিনি যেমন শোলা শিল্পী তেমন ছিলেন একজন সাহিত্যিকও। ৩০০-র বেশি কবিতা ও ৪টি উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। যার মধ্যে অন্যতম ‘বিনোদ বৈষ্ণবী’। কিংবদন্তি শিল্পীর প্রয়াণে শিল্পী জগতে নেমেছে শোকের ছায়া।