ভবানীপুর কেন্দ্রের মোট ভোটার ২,০৬,৪৫৬ জন৷ আর এই উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছেন
৪২২৬টি ভোট৷ শতাংশের হিসাব করাও কষ্টকর৷ আলিমুদ্দিনকে ভেন্টিলেশনের বাইরে এবারও আনা গেল না৷
আরও পড়ুন-এবার সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরের ফল বুঝিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেসই আসল কংগ্রেস
একুশের ভোটে মোর্চা গড়েও খাতা খুলতে পারেনি আলিমুদ্দিন৷ বিধানসভায় সিপিএম বলে কিছু নেই৷ এবার মোটামুটি পাতে দেওয়ার মতো ভোট পেলেও নিজেদের অস্তিত্ব বোঝতে পারত সিপিএম৷ ভবানীপুরের ফল বলছে,রাজ্য থেকে উঠেই গিয়েছে সিপিএম৷ অগ্রজ বামপন্থীদের এখন ভাবা দরকার এই ফলের পর কবে তাঁরা দলটির প্রাতিষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করবেন৷ বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস বা আরসিপিআইয়ের সঙ্গে এক বেঞ্চে বসার যে ধারা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকে আলিমুদ্দিন তৈরি করেছে, ভবানীপুরের উপনির্বাচনেও যথেষ্ট কৃতিত্বের সঙ্গে তা ধরে রাখতে সফল হয়েছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা৷ ভবানীপুর বলছে, বাংলায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে বামেরা৷ ভবানীপুরের ২লক্ষেরও বেশি ভোটারের মধ্যে মাত্র …..জন এবার সিপিএমকে ভোট দিয়েছেন৷ এর অর্থ, একটা অংশের বাম ভোটার সরাসরি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন বিমান-সূর্যকান্তে৷ এদের প্রতি এবং এদের নেতৃত্বের ধরনে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন কমিটেড বাম ভোটারদের বৃহত্তর অংশ৷ সিপিএমের নেতারা যে তা বোঝেন না এমন নয়৷ তবুও ন্যূনতম লজ্জা হয়নি বামেদের৷ ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রার্থী দিয়েছে ভবানীপুরের উপনির্বাচনে৷ প্রচার-ট্রচার করেছে সিপিএমের সেই সব চেনা এবং হেরো মুখগুলি৷ মানুষের কাছে ভোট চেয়েছিলেন৷ আর তার ফল দাঁড়িয়েছে, বাম অস্তিত্বই এ রাজ্যে নেই৷ ৩৪ বছরের বাম-শাসনের পর একুশের সাধারণ নির্বাচনে রাজ্যবাসী দেখেছেন বামপন্থীবিহীন রাজ্য বিধানসভা। সিপিএম-সহ বামপন্থী দলগুলির কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধিই নেই৷ বামপন্থী রাজনীতিতে বেশকিছু তরুণ মুখ ঢোকানোর পরেও আলিমুদ্দিনকে ভেন্টিলেশনের বাইরে এবারও আনা গেল না৷
পরিসংখ্যানে নজর রাখলে বোঝা যায়, এই ঘটনা হঠাৎ ঘটেনি। বামপন্থীদের ‘অধঃপতন’ এ রাজ্যে ধারাবাহিক এবং নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে গত ১৫ বছর ধরে। ২০০৬-এ রাজ্য বিধানসভার ২৩৫টি আসন জিতে ক্ষমতায় এসেছিল বামফ্রন্ট। পতনের শুরু তার পর থেকেই। ২০১১-য় উত্তাল তৃণমূল কংগ্রেস ঝড়েও নিশ্চিহ্ন হয়নি বাম৷ সেবার বিধানসভায় পায় ৬২টি আসন। কিন্তু তারপরের দিনগুলিতে আন্দোলনের মাধ্যমে শক্তিবৃদ্ধি তো দূরের কথা, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের আসন দাঁড়ায় ৩২-এ। আর শতকরা হিসেবে সিপিএম তথা বামপন্থীদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬.১ শতাংশে। এর কারণ একটাই, ওই সব হেরো মুখগুলিকে রাজ্যবাসী আর সহ্যই করতে পারছিলেন না৷
আরও পড়ুন-চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস
এতখানি পতনেও সম্বিত ফেরেনি৷ বিধি বামই থেকেছে৷ মানুষ তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়েই থেকেছেন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তারা৷ নিশ্চিহ্ন হয়েছেন৷ ওই নির্বাচনে বামপন্থীরা পেয়েছিলেন সাকুল্যে ৭.৪৬ শতাংশ ভোট। একুশের ভোটে বামপন্থীদের ‘কৃতিত্ব’, তাঁদের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫ শতাংশে পৌঁছতে পেরেছে। বাংলায় বামপন্থী আন্দোলনের দীর্ঘ পরম্পরা, দু’-দু’টি যুক্তফ্রন্ট সরকার, ১৯৭৭ থেকে একটানা ৩৪ বছরের বাম- রাজত্বের পর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সিপিএমকে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছে৷ মাঠের বাইরে থাকলে কী হবে, সেখানেও সমানে চলছে খেয়োখেয়ি৷ রাজ্য সম্পাদকের পদ দখল করতে নিজেদের মতো করে গ্রুপবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন তিন ‘হেরো’ নেতা৷ এদের মধ্যে কেউ পদে এলেই নাকি দুধ-মধুর জোয়ার বইবে আলিমুদ্দিনে৷ ধন্য আশা কুহকিনী৷
ওদিকে, ভবানীপুর আরও একবার জানিয়ে দিল, আলিমুদ্দিনে তালা ঝোলানোর ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে৷ পুজো আসছে, বাংলার মানুষ চাইছেন, ভলগা বা হোয়াংহো-র পাড়ে দাঁড়িয়ে তর্পন সেরে রাজ্যের তথাকথিত বামনেতারা বরং নতুনভাবে রাজনীতির সেকেণ্ড ইনিংস শুরু করুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এগিয়ে চলা এক সুমহান যাত্রার পিছনে পা মিলিয়েই৷