কুণাল ঘোষ, লন্ডন: লন্ডনে বসে কলকাতার তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার শিল্পোদ্যোগীর আন্তর্জাতিক অফিসের উদ্বোধন করলেন বাংলার তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। অভিনব ভিডিও কনফারেন্সে লন্ডনে বসেই একযোগে যুক্ত হল ক্যালিফোর্নিয়া, দুবাই, বেঙ্গালুরু, ওড়িশা ও কলকাতার অফিস। ৬টি কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গেই কথাও বললেন রাজ্যের তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী। শনিবার বাবুল অসাধারণ ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তথ্য-প্রযুক্তি তথা আইটি সেক্টরের উন্নয়নের রেখাচিত্র মেলে ধরেন প্রবাসীদের কাছে। লন্ডনে প্রবাসী বাঙালিকেন্দ্রিক এক অনুষ্ঠান চলাকালীন বাঙালি শিল্পোদ্যোগীর নতুন আইটি সংস্থার উদ্বোধন করলেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন-সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন করল রাজ্য
শনিবার বিকেলে লন্ডনের বিখ্যাত ট্রাফালগার স্ক্যোয়ারের ঝাঁ-চকচকে অফিস উদ্বোধনের পর বাবুল বলেন, এটা আজ বলতে দ্বিধা নেই, তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করছে বাংলা। রাজ্যে এই প্রয়াস দেরিতে শুরু হলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা দেশের সেরা আইটি হাব হতে চলেছি। কেন দেরি? বাবুল আসলে রাজনীতির কথা এমন অনুষ্ঠানে তুলতে চাননি। কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না, তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন বাম জমানার কথা। কম্পিউটার-বিরোধিতার নামে তথ্য-প্রযুক্তি অগ্রগতিকে আটকে রাখার অপচেষ্টার কথা। বাবুল বলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সময়ের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজ্যে মণি-মাণিক্যের মতো মেধা ছড়িয়ে রয়েছে। সেটা বাংলার প্লাস পয়েন্ট। আইটি বান্ধব আইন করা হচ্ছে। বিশ্বসেরা উইপ্রো, ইনফোসিস-সহ নানা সংস্থা আসতে শুরু করেছে। কেউ কাজ শুরু করেছে। কেউ সম্প্রসারণের পথে রয়েছে তো কেউ কাজ শেষের পথে। সংস্থাগুলিকে রাজ্য নানা সুবিধাও দিচ্ছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। বাংলার তথ্য-প্রযুক্তির জগৎটা মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে বদলে যাচ্ছে।
বাবুল এদিন খোলামেলা ভঙ্গিতেই কথা বলছিলেন। লন্ডনে বাংলার বাঙালি শিল্পোদ্যোগীর অফিস উদ্বোধনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বিশ্লেষণ করে বোঝাচ্ছিলেন। বলছিলেন, বাংলা কেন ভারতের অন্য রাজ্যগুলিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। প্রবাসী লগ্নিকারীদের বাংলায় আসতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলার ছেলেরা মেধাবী। প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিকাংশ পাশ করেছেন। তাকিয়ে দেখুন, পৃথিবীর সেরা সংস্থাগুলির কর্তৃত্বভার তাদের হাতেই। প্রবাসীরা বাংলায় গেলে দেশের সেরা মেধাসম্পন্নদের নিজেদের সংস্থায় নিতে পারবেন। এতে উভয় পক্ষেরই সুবিধা। মন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, বাংলার সিলিকন ভ্যালির সব জমি কিন্তু ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কেন বিক্রি হয়েছে? বাবুলের জবাব, বিপুল শিল্প-সম্ভাবনা রয়েছে বলেই না মানুষ জমি নিয়েছেন! এই বাণিজ্য-সম্ভাবনার চিত্রটাই তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন শনিবার। নিজের দফতরের অভিজ্ঞতার কথা প্রবাসীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে বলেছেন, তাঁর দফতরের সচিব রাজীব কুমার শুধু পুলিশের ডিজি নন, তিনি আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত। দক্ষ মানুষ। দফতরকে সমৃদ্ধ করছেন।
আরও পড়ুন-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজ্যপালের রিপোর্ট, ক্ষোভ তৃণমূলের
রাজ্য একসময় তথ্য-প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়েছিল। ২০১১-র পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাল ধরেছেন। বদলাতে শুরু করেছে পরিবেশ। বাবুল বলেন, যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন না বাংলার চিত্রটা কীভাবে বদলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় আসুন শিল্পোদ্যোগীরা। ক্রীড়াপ্রেমী মন্ত্রী ক্রিকেটের উদাহরণ টেনে বলেন, মাঠে নামুন। ব্যাট করুন। মাঠে নেমে ব্যাট না করলে পিচ বুঝবেন কীভাবে? ব্যাট করতে হলে কলকাতায় চলুন। তথ্য-প্রযুক্তির আগামিদিনের ভবিষ্যৎ সেখানেই লেখা রয়েছে। শনিবার ট্রাফালগার স্ক্যোয়ারে বাবুল অ্যাডামাস টেক কনসালটেন্সির অফিস উদ্বোধন করেন। ছিলেন শিল্পোদ্যোগী সমিত রায়, রজতশুভ্র রায় ও লন্ডনের তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা।