জলের দরে এলআইসির শেয়ার বিক্রি, মোদি সরকারের সিদ্ধান্তে ক্ষতি ৫৪ হাজার কোটি টাকা!

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা জানতে চেয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার এলআইসির মূল্যায়ন করেছিল ১২ থেকে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা।

Must read

প্রতিবেদন : ভারতীয় জীবন বিমা নিগম বা এলআইসির প্রথম শেয়ার বাজারে আসার আগেই শুরু হল তীব্র বিতর্ক। দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে প্রাক্তন আমলা ও বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের প্রায় সব নেতাই অভিযোগ করেছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার জলের দরে এলআইসির শেয়ার বিক্রি করছে। এভাবে নিতান্তই কম দামে এলআইসির শেয়ার বিক্রি করার ফলে সরকারের প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের চাপের কাছে মাথা নুইয়ে নিতান্তই জলের দরে এলআইসির শেয়ার বিক্রি করছে মোদি সরকার।

আরও পড়ুন-শিল্পতালুকের জন্য ৫ একর জমি

পাশাপাশি তাঁরা এলআইসির শেয়ার বিক্রির সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্বেই শেয়ার বাজারে একটা টালমাটাল চলছে। এই পরিস্থিতিতে মোদি সরকার কেন তাড়াহুড়ো করে এলআইসির শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে? অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বলেছে, অর্থমন্ত্রকের বিলগ্নীকরণ দফতরের ঘোষিত নীতি হল, শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার ছাড়া হবে না। তাহলে এলআইসির ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হল না কেন? এর পেছনে নরেন্দ্র মোদি সরকারের কী উদ্দেশ্য রয়েছে? দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, এলআইসির ব্যবসা ও মুনাফার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে এর মোট মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন-উচ্চ আদালতে জানালেন নির্যাতিতার বাবা সিবিআই নয়, পুলিশেই আস্থা

এই টাকার উপর ভিত্তি করে এলআইসির শেয়ারের ন্যূনতম মূল্য হওয়ার কথা ৮৫৩ টাকা। সরকার এলআইসির গ্রাহকদের জন্য শেয়ারের দাম ঠিক করেছে ৮৮৯ টাকা। কিন্তু খুচরো ও দীর্ঘমেয়াদি লগ্নিকারীদের জন্য প্রতিটি শেয়ারের দাম ধার্য হয়েছে ৯০৪ থেকে ৯৪৯ টাকা। যা আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয়। অর্থনীতিবিদরা স্পষ্ট বলেছেন, বাস্তবে এলআইসির শেয়ার দর ঠিক করতে হলে বিমা সংস্থার বাজারমূল্যকে আড়াই থেকে চার গুণ করে তবেই তার শেয়ারের দাম নির্ধারণ করা উচিত। ফেব্রুয়ারি মাসেও মোদি সরকার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল। কিন্তু মাস দুয়েকের মধ্যে কী কারণে পর্দার আড়ালে হঠাৎই সেই সিদ্ধান্ত বদলে গেল তা বোধগম্য নয়! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলআইসির বাজারমূল্যকে আড়াই গুণ করে যদি তার শেয়ার দর ঠিক করা হত তাহলে প্রতিটি শেয়ারের দাম হত ২১৩২ টাকা।

আরও পড়ুন-মিথ্যা চলবে কতদিন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জবাব দিন

সংস্থার ৩.৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেই সরকারের আয় হত ৪৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। সেখানে মোদি সরকার মাত্র ২১ হাজার কোটি টাকায় শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে। অর্থাৎ সরকারের লোকসান হচ্ছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অন্যান্য বিমা সংস্থার সঙ্গে তুলনা করে এলআইসির বাজারদর চারগুণ করে শেয়ার মূল্য নির্ধারণ করা উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে সরকারের আয় হত প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে দেখতে গেলে সরকারের লোকসান হচ্ছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা জানতে চেয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার এলআইসির মূল্যায়ন করেছিল ১২ থেকে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন-ভিড় টানতে ভলভো ভাড়া, গর্জে উঠল গোর্খারা, অমিতের সভার জন্য লোক ভাড়া

দু’মাসের মধ্যে হঠাৎই কী কারণে তা ৬ লক্ষ টাকায় নামিয়ে আনা হল সরকারের উচিত সেটা স্পষ্ট করে জানান। কেন সরকার এই চূড়ান্ত অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে এলআইসি শেয়ার বিক্রি করতে উঠে পড়ে লেগেছে? দেশি-বিদেশি কিছু লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের পরই কেন এলআইসির মূল্য কমানো হল এবং ৫ শতাংশের পরিবর্তে কেন ৩.৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সেটাও সরকারের জানানো উচিত।

Latest article