সংবাদদাতা, দুর্গাপুর : মধ্য ভাদ্রের হালকা হিমেল শিশিরের পরশ লেগে থাকা নরম দূর্বাঘাসের গন্ধ জানান দিল শুরু হয়ে গেছে শারদোৎসবের কাউন্টডাউন। রাত পোহালেই শুরু হবে গণেশ পুজো। এখন এ বাংলায় গণেশ চতুর্থী থেকেই উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে যায়। মহারাষ্ট্রের মতো ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’তে এ বাংলার মানুষ সেভাবে উৎসবে মেতে না উঠলেও গত কয়েক বছর ধরেই সর্বজনীনের ছোঁয়া লেগেছে লম্বোদরের আরাধনাতেও। আর এই উৎসবের উত্তাপ পোহাতে দু’দিন আগে থেকেই বাড়তি রোজগারের আশায় শিল্পশহরের পথ ধরেছেন বাংলার ঢাক শিল্পীরা।
আরও পড়ুন-বাংলাই হবে পর্যটনে সেরা : বাবুল
গণেশ পুজো থেকে কালীপুজো, উৎসবের এই লম্বা প্যাকেজে হাত ডুবিয়ে ফেলেছেন শিল্পীদের অনেকেই। দীর্ঘ বাম আমলের বঞ্চনায় প্রায় বিলুপ্তির পথে হারিয়ে যেতে বসা এই প্রাচীন শিল্প ধীরে ধীরে আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এখন আর শুধু উৎসবের দিনগুলোর দিকে হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে বসে থাকতে হয় না শিল্পীদের। সারা বছরই বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে ডাক পান ওঁরা। বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের গোহালিয়ারা, তাঁতিপাড়া ইত্যাদি গ্রাম থেকে কাঁধে ঢাক নিয়ে সাত সকালেই সিটি সেন্টারে হাজির হয়েছেন অমরনাথ বাদ্যকর, সুশীল বাদ্যকর, প্রদীপ বাদ্যকররা। দুর্গাপুর ও আসানসোল শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন এঁদের দূরসম্পর্কের আত্মীয়রা। আগামী কয়েকটা দিন তাঁদের বাড়িতেই থাকবেন তাঁরা। কয়েক বছর আগে পর্যন্তও শিল্পী হিসেবে আলাদা করে কোনও পরিচিতি ছিল না এঁদের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহস্পর্শে ওঁরা পেয়েছেন শিল্পীর সম্মান, পেয়েছেন বাদ্যযন্ত্র শিল্পী হিসেবে মর্যাদা।
আরও পড়ুন-মধ্যকলকাতায় জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে, বিকল্প বুস্টার মার্কাস স্কোয়ারে
বর্তমানে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পান জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের পক্ষ থেকে। অমরনাথবাবু বলেন, প্রতি বছরই এই সময় থেকেই বিভিন্ন শহরাঞ্চলে আসতে থাকেন তাঁরা। প্রদীপবাবু বলেন, তাঁর স্ত্রী গ্রামেই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তিনি নিজেও কৃষি শ্রমিক। গণেশ পুজোর পরই আবার ফিরে যাবেন গ্রামে। কারণ এখন চাষের সময়। সুশীলবাবুর ছেলে সিভিক পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। আগে বিশ্বকর্মা পুজো থেকে কালীপুজো পর্যন্ত ঢাক বাজিয়ে সাকুল্যে বাড়ি নিয়ে আসা যেত হাজার দশেক টাকা। এখন সেই রোজগারই প্রায় পাঁচ-ছয়গুণ বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। ছেলেমেয়েরা সব স্কুল, কলেজে পড়াশুনা করছে, তাই আগামী দিনে আর ঢাক শিল্পীদের সেভাবে হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না, জানালেন অমরনাথবাবু।