চৈতন্যের আলো

ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে সাম্যের ধারণা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শ্রীচৈতন্যের ভূমিকা সর্বাগ্রগণ্য। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন সমাজের বেশিরভাগ তথাকথিত প্রান্তিক মানুষ। এই সামাজিক আন্দোলন জাত্যাভিমানের প্রাচীর চূর্ণ করে মানবতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিল। গতকাল, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল মহাপ্রভুর জন্মদিন। স্মরণ করলেন উৎপল সিনহা

Must read

ঐ মহামানব আসে
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে।।
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক—
এল মহাজন্মের লগ্ন।
শ্রীচৈতন্যদেবের পায়ের কাছে বসে ভারতীয় রাজনীতিকদের রাজনীতির পাঠ নেওয়া উচিত। এতবড় রাজনৈতিক শিক্ষক ভারতবর্ষে তো বটেই, গোটা বিশ্বের ইতিহাসে আর ক’জন এসেছেন? বুদ্ধি ও মেধার এমন অপূর্ব দীপ্তি আমরা আর দেখেছি নাকি? হাতে কোনও পুঁজি নেই। প্রভাব প্রতিপত্তি নেই। শুধুমাত্র প্রেম, ঔদার্য আর ভক্তি দিয়ে, সুর, তাল ও ছন্দকে সম্বল করে লক্ষ-কোটি মানুষের হৃদয় জিতে নেওয়ার এমন মহার্ঘ উদাহরণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে আর কোথায়?

আরও পড়ুন-শৈবতীর্থ তারকেশ্বরে শিবরাত্রির পুজো দিলেন দূরদূরান্তের মানুষ

আর জনগণকে নেতৃত্বদানের শক্তি? তিন ফালি গৈরিক বসনে নিজেকে আবৃত করে নবদ্বীপের মতো অখ্যাত এক জনপদে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বুকে টেনে নিলেন সারা বিশ্বকে, এমন রোমাঞ্চকর দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি আছে বুঝি!
ষোড়শ শতকের সীমাহীন প্রতিকূলতার বিপুল অন্ধকারে দাঁড়িয়ে জীর্ণ লোকাচারে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধাপড়া সহস্র শৈবালদামে নিমজ্জিত প্রায় জীবনহারা অচল অসার একটা জাতির পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছেন কপর্দকশূন্য একা এক সন্ন্যাসী, কণ্ঠে যাঁর
হরিনাম সংকীর্তন, বুকে যাঁর এক আকাশ প্রেম, এমন জনগণমনঅধিনায়ক আর কবেই বা দেখেছে পৃথিবী?

আরও পড়ুন-ঐতিহ্যবাহী জল্পেশ মেলা শুরু হল

দেখেছে নাকি?
একদিন চৈতন্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে ভেদাভেদ, লোভ আর হিংসায় দীর্ণ আমাদের এই সাধের পৃথিবীখানি। নদীয়ার নবদ্বীপের আলো ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়, যার বিশুদ্ধ সঙ্কেত ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছে মানুষ দুনিয়ার দেশে দেশে। চৈতন্যচন্দ্রিমার মায়াময় প্রভায় সেদিন ভেসে যাবে অন্তহীন চরাচর।
প্রায় পাঁচশো বছর আগেকার এক শুভ্রসুন্দর ভাবনা কালের বাতাস বেয়ে ছুটে বেড়াবে বিশ্বময়, স্পর্শসুধাদানে নিবারণ করবে চিরতৃষিতের অন্তরদাহ, বিশ্বপথিকদের দেবে শীতলস্নিগ্ধ বিশ্রাম, আর কোটি কোটি মুমূর্ষুদের দেবে পরম শুশ্রূষার আশ্বাস।

আরও পড়ুন-বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু

শুধু ঘা মেরে নয়, কানে কানে
কীর্তনের অনাবিল প্রেমসুর শুনিয়ে আধমরাদের বাঁচানোর এক আশ্চর্য মন্ত্র শিখিয়ে গেছেন আমাদের নদের নিমাই। বাংলা ছাড়িয়ে, সারা ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে পৃথিবীর কোনে কোনে আজ ছড়িয়ে পড়েছে এই মহামৃত্যুঞ্জয় কীর্তনমন্ত্র, মুগ্ধ বিস্ময়ে শুনছে স্তব্ধবাক সভ্যতা।
কীর্তন কি শুধুমাত্র গান? আর কিছু নয়? কীর্তন কি কেবলমাত্র বাংলা গানের একটি বিশিষ্ট ধারা? শুধু এই? ঘুমন্ত বিশ্বকে জাগানোর অসীম ঐশী শক্তি কি লুকিয়ে নেই কীর্তনের কথা ও সুরে? শক্তিকবি যে লিখে গেছেন অপরূপভাবে ভাঙা-গড়ার চেয়েও মূল্যবান কখনোসখনো, তাতেও কি চৈতন্য নেই? চৈতন্যদেব প্রথমে ভাঙলেন তারপর গড়লেন হরিনাম সংকীর্তনের অমোঘ হাতিয়ার নিপুণভাবে ব্যবহার করে।
এইসব বিচিত্র দলছুট কথাবার্তা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল এক ঘরোয়া আড্ডায়। আজ থেকে বহুবছর আগে। কলকাতায়।
সেটা যতদূর মনে পড়ে ১৯৮৫ সাল। টালিগঞ্জ ট্রামডিপো থেকে কিছুটা এগিয়ে ইন্দ্রপুরী স্টুডিও যাবার পথের বাঁকে কোনও এক বিশেষ বাড়িতে।
সেখানে প্রতি সন্ধ্যায় একদল টগবগে তরুণ তুর্কি এসে জুটতেন চা-মুড়ির জমজমাট আসরে। খুলে দিতেন তাঁদের ভাবনার সমস্ত অর্গল। হত তর্ক-বিতর্ক। উঠত তুফান। সমকাল ও চিরকাল আলিঙ্গন করত সেখানে। তাৎক্ষণিক বক্তৃতায় জমে উঠত সন্ধ্যা।

আরও পড়ুন-হোটেলমালিক খুনের তদন্ত

দেশকাল, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য ও সংগীতের প্রথাবহির্ভূত আলোচনার আলপথ বেয়ে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে হাজির হতেন যুগপুরুষবৃন্দ। তারই এক অসামান্য অংশ শ্রীচৈতন্য সম্পর্কে উপরিউক্ত মূল্যায়ন। যা অকস্মাৎ একঝলক ঝোড়ো হাওয়ার মতো এসে লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় প্রচলিত ভাবনার সাজানো বাগান, আর খুলে দিয়ে যায় মুক্তচিন্তার সমস্ত দরজা-জানলা।
কোন্ আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো—
সাধক ওগো, প্রেমিক ওগো,
পাগল ওগো, ধরায় আসো।।

আরও পড়ুন-পাট্টা পেয়ে আবেগাপ্লুত মাতকাতপুর

আপামর জনসাধারণের হৃদয়ে অধিষ্ঠান করা কি সহজ কথা? প্রাতিষ্ঠানিকতার
অচলায়তন ভেঙে, ভেদাভেদের কাঁটাতার ছিন্ন করে নতুন যুগের ভোর ছিনিয়ে আনা কি যার-তার কাজ? রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতা যিনিই হোন না কেন জনজাগরণের কান্ডারি হতে গেলে তাঁকে একাধারে সাধক, প্রেমিক ও পাগল হতেই হবে। নান্যপন্থা বিদ্যতে অয়নায়। নবজাগরণ কি যার-তার হাত ধরে আসে? বিশ্বের ইতিহাসে চৈতন্য ছাড়া একইসঙ্গে এমন বিরল রাজনৈতিক শিক্ষক, এমন মানবধর্মে দীক্ষিত নেতা, জনগণমনঅধিনায়ক, সাধক, প্রেমিক ও পাগল আর কখনও আসেননি একথা বললে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না। মগজ ও হৃদয়, বুদ্ধি ও সারল্য কেবল চৈতন্যে, বাংলার গরব নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্যে মিলেমিশে একাকার। শিক্ষণীয় তাঁর বিশ্ববীক্ষা।
স্বাতন্ত্রে অনন্য এমন মানবদরদি জননেতা এক সহস্রাব্দে হয়তো একবার জন্মান। এ পৃথিবীর বড় সৌভাগ্য যে পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতক দেখেছে এই মহামানবের জন্ম ও কর্ম।

আরও পড়ুন-এনআরএসে বিরল অস্ত্রোপচার

উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে
ঐ যে তিনি ঐ যে বাহির পথে।
রাষ্ট্রনায়কবৃন্দ কী শিখবেন শ্রীচৈতন্যের কাছে?
শিখবেন কীভাবে প্রেমালিঙ্গনে লীন হয়ে জনতার বুকে কান পেতে শুনতে হয় হৃদ্‌স্পন্দন। কীভাবে বুঝতে হয় জনতার মন, ইংরেজিতে যাকে বলে পাবলিক পালস। শিখবেন কীভাবে জেনে নিতে হয় দুর্গত জনগণের নাড়ি ও হাঁড়ির খবর। শিখবেন ষোড়শ শতকের অন্ধকারাচ্ছন্ন অখ্যাত জনপদ নবদ্বীপে দাঁড়িয়ে কীভাবে ২০২৩-এর তথাকথিত আল্ট্রা মডার্ন আমেরিকার কোনে কোনে পৌঁছে দেওয়া যায় হরিনাম সংকীর্তনের প্রেমময় বার্তা।
আর তাঁর মৃত্যু?

আরও পড়ুন-বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতির দাবি

কৃষ্ণলীলা কীর্তনের মধুমাখা ছুরিতে যিনি অনায়াসে ফালাফালা করে দিতে পারেন অমিতশক্তিমান ব্রাহ্মণ্যবাদের অগণ্য ঝুরিসমৃদ্ধ যোজনবিস্তৃত শিকড়বাকড়, মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তাঁর রহস্যমৃত্যুর আশঙ্কা তো থাকবেই। কিন্তু আনন্দের কথা, যা করার সেটা তিনি করে ফেলেছিলেন তাঁর স্বল্প আয়ুষ্কালেই। ষোড়শ শতকে ইতিহাসের অভিমুখ পাল্টে দিতে যখন ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছিল এক ভাববিপ্লবের, ঠিক তখনই আবির্ভূত হন তিনি। অবক্ষয়ের পাঁকে নিমজ্জিত প্রায় ক্ষয়িষ্ণু একটা জনগোষ্ঠীর বিষঘোর কাটিয়ে কীভাবে সুন্দরের আরাধনায় তাদের ব্রতী করে তুলতে হয় তার পাঠদান শ্রীচৈতন্য ছাড়া আর কে-ই বা করবেন?
পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে মুসলিম রাজানুকূল্যে একদিকে মুসলিম সমাজ-বিকাশ দ্রুততর গতি লাভ করছিল, অন্যদিকে হিন্দুদের অভ্যন্তরীণ নৈরাজ্য এই ধর্মাশ্রিত সমাজ কাঠামোকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। সব মিলিয়ে সে-এক ভয়ানক অরাজক পরিস্থিতি। বর্ণবিভক্ত সমাজের মূলে তখন একটা জোর আঘাত জরুরি হয়ে পড়েছিল। বহুধাবিভক্ত বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীকে অভিন্ন মিছিলে একত্রিত করা ছাড়া যখন আর অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না সেই যুগসন্ধিক্ষণে কণ্ঠে ভক্তিগান নিয়ে আবির্ভূত হন বিশিষ্ট সংগঠক তথা জননেতা শ্রীচৈতন্য।
অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, দারিদ্র্য ও জাতিভেদের সংকীর্ণ কানাগলিতে একটা জাতি যখন পথ হারিয়ে ফেলেছে তখনই মানবধর্মের পরম কান্তিময় মশাল হাতে উপস্থিত হলেন এই পথনির্দেশক।

আরও পড়ুন-অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে শঙ্কা

ভাবা যায় না আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে এই বাংলার কোনও এক অখ্যাত জনপদে দাঁড়িয়ে কেউ একজন বলছেন, ‘মানুষকে ভালবাসার চেয়ে বড় ধর্ম আর কিছু হতে পারে না। সব মানুষই জন্মগতভাবে সমান।’
‘জাতিভেদ প্রথা স্বার্থপরদের সৃষ্টি। এরাই মানুষকে বিভেদ, বৈষম্য, ঘৃণা ও হিংসার পথে ঠেলে দেয়। ভেদাভেদ ভুলে আমাদের মিলেমিশে বাঁচতে হবে। কেউ উঁচু বা নিচু নয়। কেউ ছোট বা বড় নয়। সকলেই সমান। সকলেই মানুষ। সকলেরই সমান অধিকার, সমান মর্যাদা।’
সাম্যবাদ কি এইসব কথাই বলে না?
আরও বলছেন, ‘মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে ও বর্ণে বর্ণে কোনও পার্থক্য নেই। মানুষকে ভালবাসা মানেই ভগবানকে ভালবাসা।’
উচ্চারণ করলেন সেই অমোঘ বাণী : ‘চণ্ডালোপী দ্বিজশ্রেষ্ঠ হরিভক্তিপরায়ণ। অর্থাৎ, চণ্ডালও দ্বিজশ্রেষ্ঠ হতে পারে যদি হয় ভক্তিপরায়ণ।’
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন , ‘আমাদের বাঙালির মধ্য হইতেই তো চৈতন্য জন্মেছিলেন, তিনি তো বিঘা-কাঠার মধ্যেই বাস করিতেন না, তিনি তো সমস্ত মানবকে আপনার করিয়াছিলেন, তিনি বিস্তৃত মানবপ্রেমে বঙ্গভূমিকে জ্যোতির্ময়ী করিয়া তুলিয়াছিলেন।’
শ্রীচৈতন্য ও তাঁর আন্দোলনকে বুঝতে হলে রক্তমাংসের চৈতন্যকে সম্যক অনুধাবন করতেই হবে।

আরও পড়ুন-মাথায় বল, ছিটকে গেলেন ওয়ার্নার

শৈবাল মিত্র লিখেছেন :
‘পাঁচশো বছরের বেশি সময় ধরে চৈতন্য অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাঙালি ব্যক্তিত্ব, হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ মানুষ চৈতন্য।’
জাতিভেদের কাঁটাতার উপেক্ষা করে তথাকথিত নিম্নবর্গের মানুষদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসেন শ্রীচৈতন্য। তাঁদের নিয়ে নগরসংকীর্তনের উদ্দেশ্যে বিশাল মিছিল সংগঠন করেন তিনি। হিন্দু-অহিন্দু, পণ্ডিত-মূর্খ, উচ্চ-নিচ সকলে ভেসে যান ভক্তিরসের প্লাবনে। ভক্তি আন্দোলনের হাত ধরে এমন যুগান্তকারী সামাজিক আন্দোলন আগে কখনও দেখেনি বাংলা। একইসঙ্গে ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে সাম্যের ধারণা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও চৈতন্যের ভূমিকা সর্বাগ্রগণ্য। ধর্মকাররা প্রাচীরে আঘাত হেনে ভক্তির এক অভিন্ন ধারা মিলিয়ে দেন বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীকে। চৈতন্যের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন সমাজের বেশিরভাগ তথাকথিত অস্পৃশ্য, পিছিয়ে পড়া নিম্নবিত্ত ও নিঃসহায় প্রান্তিক মানুষ। তাঁর এই সামাজিক আন্দোলন জাত্যাভিমানের প্রাচীর চূর্ণ করে মানবতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিল। তাঁর অস্পৃশ্যতা বর্জনের আহ্বান সে-কালের পক্ষে ছিল রীতিমতো বৈপ্লবিক। এখানে উল্লেখ্য, চৈতন্যপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম যবন হরিদাস বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর প্রবল সামাজিক আন্দোলনে ভীত হয়ে কিছু গোঁড়া ব্রাহ্মণ তৎকালীন নবদ্বীপের শাসক চাঁদ কাজির কাছে তাঁর নামে অভিযোগ করেন। কাজি তৎক্ষণাৎ নামসংকীর্তন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু চৈতন্য সেই নির্দেশ অমান্য করে সংকীর্তন চালিয়ে যেতে থাকেন। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতে প্রথম আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনাও হয় এখান থেকেই।

আরও পড়ুন-আদানি-কাণ্ডে মোদির জবাব চান মার্কিন ধনকুবের সোরেস

আজ পাঁচশো বছর পরেও চৈতন্যের অন্তর্ধান তথা মৃত্যুরহস্যের সমাধান হয়নি। তিনি নাকি জগন্নাথের মূর্তিতে বিলীন হয়ে যান। তিনি নাকি পুরীর সমুদ্রে ডুবে মারা যান। তিনি নাকি সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এমনকী, তিনি নাকি আত্মহত্যা করেন— এমন কথাও শোনা যায়। আবার এ-ও কথিত আছে যে সংকীর্তনে বেরিয়ে তাঁর পায়ে কোনওভাবে একটি গভীর ক্ষত তৈরি হয় এবং সেটি থেকে সেপ্টিসেমিয়া হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মধ্যে চৈতন্যকে গুম খুন করা হয়েছিল— এই অভিমত সর্বপ্রথম প্রচার করেন ঐতিহাসিক ড. নীহাররঞ্জন রায়। ২০০০ সালে পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের সংস্কার-কাজ চলার সময় হঠাৎই গর্ভগৃহ থেকে উদ্ধার হয় একটি নরকঙ্কাল, যার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৬ ফুট। আবার এ-ও শোনা যায় যে চৈতন্যকে হত্যা করে কোনও এক নির্জন স্থানে কবর দেওয়া হয়। তবে, কায়েমি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে তাঁর খুন হয়ে যাওয়ার তত্ত্বটিতেই অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস।

Latest article