মানস ভট্টাচার্য: অবশেষে লিওনেল মেসির (FIFA World Cup- Lionel Messi) হাতে উঠল বিশ্বকাপ ট্রফি। স্বপ্নপূরণের রাতে দিয়েগো মারাদোনার শুধু পাশেই বসল না, আমি বলব কাপ জিতে ফুটবলের রাজপুত্রকে ছাপিয়েই গেল মেসি। নাটকের পর নাটক, স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অবিশ্বাস্য এক চিত্রনাট্যের সমাপ্তি হল জাদুকর মেসির হাতে ট্রফি ওঠার মধ্যে দিয়ে। যে সোনালি ট্রফি দিয়ে ফুরিয়েছে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের বিশ্ব জয়ের অপেক্ষা। ইউরোপের শক্তিকে হারিয়ে ফের লাতিন শিল্পের জয়জয়কার।
অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স—এই ফরমুলাতেই ফাইনালে বাজিমাত করল আর্জেন্টিনা। কিলিয়ান এমবাপের হ্যাটট্রিক সত্ত্বেও শেষ হাসি জোড়া গোলের নায়ক মেসির (FIFA World Cup- Lionel Messi)। অনবদ্য খেলে একটি গোল অ্যাঞ্জেল ডি’মারিয়ার। ট্র্যাজিক নায়ক এমবাপে। এত উপভোগ্য আর আকর্ষণীয় বিশ্বকাপের ফাইনাল আগে হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না। রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারাল মেসির আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সের হয়ে কোমান, চুয়ামেনি পেনাল্টি মিস করে। একটি শট বাঁচায় আর্জেন্টিনার গোলকিপার মার্টিনেজ। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার গোলদাতা মেসি, দিবালা, পারেদেস ও মন্তিয়েল। ফ্রান্সের দুই গোলদাতা এমবাপে ও কোলো মুয়ানি।
আরও পড়ুন-টাইব্রেকারে যুদ্ধজয়, এবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা
ফাইনাল ম্যাচটাকে মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপের দ্বৈরথ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। গতি, শক্তি, শিল্পের সঙ্গে মস্তিষ্ক আর টেকনিকের লড়াই ছিল দুই তারকার মধ্যে। দু’জনেই যেন পরস্পরকে টেক্কা দিতে নেমেছিল ফাইনালে। জোড়া গোল করা মেসিকে ছাপিয়ে হ্যাটট্রিক করে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুট জিতে নিল এমবাপে। ফ্রান্সকে একাই ম্যাচে ফেরাল। ১৯৬৬ সালে জিওফ হার্স্টের পর বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথম হ্যাটট্রিক। ফ্রান্সের কৃতিত্ব, তারা বারবার পিছিয়ে পড়েও খেলায় সমতা ফেরাল। দুই কোচ দিদিয়ের দেশঁ ও লিওনেল স্কালোনি খুব ভাল ম্যাচ রিড করে পরিবর্তনগুলো করেছেন। আমি বলব কিছুটা আর্জেন্টিনার জন্যই ফ্রান্স খেলায় ফেরার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। প্রথমার্ধে যে ফুটবলটা আর্জেন্টিনা খেলেছে তাতেই ম্যাচ কার্যত পকেটে নিয়ে ফেলেছিল মেসিরা।
অ্যাঞ্জেল ডি’মারিয়াকে নামিয়ে দুর্দান্ত চাল দিয়েছিলেন স্কালোনি। ৪-৩-৩ ছকে মেসি, আলভারেজের সঙ্গে ডি’মারিয়াকে পজিটিভ স্ট্রাইকার-কাম-উইঙ্গার করে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ। তাতেই ফরাসিদের যাবতীয় প্রতিরোধ ভেঙে যায়। মাঝমাঠের লড়াইয়ে ফ্রান্সকে দাঁড়াতেই দেয়নি রডরিগো ডি’পল, ডি’মারিয়ারা। কড়া মার্কিং ভেদ করে বেরিয়ে আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই মেসি। ঝড়ের গতিতে শুরু করা আর্জেন্টিনাকে অবশ্য গোলের জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ২৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেয় মেসি। নিশ্চিত পেনাল্টি ছিল। ৩৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলে স্কালোনির দল। পাঁচ টাচে অনবদ্য মুভে গোল ডি’মারিয়ার। ৭৯ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে থাকার পর মাত্র দু’মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে এমবাপে। নিষ্প্রভ গ্রিজম্যান, জিরু, ডেম্বেলেদের তুলে দেশঁ নামিয়ে দেন কিংসে কোমান, কামাভিঙ্গা, মার্কাস থুরামদের। তরতাজা সুপারসাবরা নামতেই মাঝমাঠের দখল ফিরে পায় ফ্রান্স। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে এমবাপে। ৮০ ও ৮১ মিনিটে জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় ফিরিয়ে আনে। এর পর অতিরিক্ত সময়ের ১০৮ মিনিটে মেসির গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাওয়ার পর ১১৮ মিনিটে এমবাপে ফের গোল করে ব্যবধান ৩-৩ করে। শেষে টাইব্রেকারে জিতে স্বপ্নপূরণ মেসির।