নয়াদিল্লি: ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ছয় বছরে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি সম্মিলিতভাবে মোট ৮,৮৮,৬২৪ কোটি টাকার নন-পারফর্মিং অ্যাসেটস (এনপিএ) বা অনাদায়ী ঋণ মকুব (Debt waiver) করেছে। এর মধ্যে পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলি মকুব করেছে ৭,১০,০০২ কোটি টাকা এবং প্রাইভেট সেক্টর ব্যাঙ্কগুলি মকুব করেছে ১,৭৮,৬২২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় অর্থ রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী লোকসভার তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারীর প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য দিয়েছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, ২০১৪ থেকে ২০২০ অর্থবর্ষের মধ্যে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি ৭,১০,০০২ কোটি টাকার এনপিএ মকুব করেছে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি মকুব (Debt waiver) করেছে ১,৭৮,৬২২ কোটি টাকা। মন্ত্রী জানান যে, ব্যাঙ্কগুলি আরবিআই নির্দেশিকা এবং তাদের বোর্ডের অনুমোদিত নীতি অনুসারে এনপিএ মকুব করে, যার মধ্যে সাধারণত সেই সমস্ত ঋণ অন্তর্ভুক্ত থাকে যার জন্য চার বছর পূর্তিতে সম্পূর্ণ সংস্থান করা হয়েছে। তবে, এই ‘রাইট-অফ’ বা মকুবের ফলে ঋণগ্রহীতার দায় মকুব হয় না। ঋণগ্রহীতারা পরিশোধের জন্য দায়ী থাকেন এবং ব্যাঙ্কগুলি তাদের বিরুদ্ধে শুরু করা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়। মন্ত্রী আরও বলেন, মকুব করা ঋণ পুনরুদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আরবিআই-এর তথ্য অনুসারে, ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক কার্যকলাপের ভিত্তিতে এই হিসাব দেওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে অনাদায়ী ঋণ কমাতে এবং পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার ও আরবিআই একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রধান উদ্যোগগুলি হল, ১) আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম : পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক রিফর্মস এজেন্ডার অধীনে, সরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে প্রায় ৮০টি আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ট্রিগার সহ স্বয়ংক্রিয় এবং ব্যাপক ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। এটি তৃতীয় পক্ষের ডেটা ব্যবহার করে সময়মতো ঋণ অ্যাকাউন্টের সমস্যা চিহ্নিত করে এবং সক্রিয়ভাবে এনপিএ-তে পরিণত হওয়া রোধ করে। ২) ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপসি কোড (আইবিসি), ২০১৬: এই কোড ঋণদাতা-ঋণগ্রহীতার সম্পর্ককে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করেছে, যেখানে ‘ঋণগ্রহীতার নিয়ন্ত্রণে’ থাকার পরিস্থিতি থেকে ‘ঋণদাতার নিয়ন্ত্রণে’ থাকার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই কোডের ফলস্বরূপ, মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত, ১৩.৭৮ লক্ষ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ সংশ্লিষ্ট ৩০,০০০ এরও বেশি আবেদন প্রি-অ্যাডমিশন পর্যায়েই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া শেষ করতে বিলম্ব কমানোর জন্য আইবিসি-তে আরও সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। ৩) ডিআরটির আর্থিক এক্তিয়ার বৃদ্ধি: ডেট রিকভারি ট্রাইব্যুনাল (ডিআরটি)-এর আর্থিক এক্তিয়ার ১০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষে বাড়ানো হয়েছে, যাতে তারা উচ্চমূল্যের মামলাগুলিতে মনোযোগ দিতে পারে এবং ব্যাঙ্কগুলির উচ্চতর পুনরুদ্ধার নিশ্চিত হয়। ৪) বিশেষজ্ঞ দল গঠন: সরকারি ব্যাঙ্কগুলি এনপিএ অ্যাকাউন্টগুলির কার্যকর পর্যবেক্ষণ ও ফোকাসড ফলো-আপের জন্য বিশেষায়িত ‘স্ট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ভার্টিকাল’ ও শাখা স্থাপন করেছে। ‘বিজনেস করেসপন্ডেন্ট’ নিয়োগ এবং ‘ফিট-অন-স্ট্রিট মডেল’ গ্রহণও এনপিএ পুনরুদ্ধারের গতি বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন-সরকারের নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নেই, মালার প্রশ্নে লোকসভায় জানাল কেন্দ্র

