দিঘায় এখন দীর্ঘ লাইন। ট্রেনের লাইন, বাসের লাইন, সেসব ছাপিয়ে আরও বড় লাইন জগন্নাথধামের জন্য। এবার থেকে একসঙ্গে রথ দেখা ও কলা বেচা দুই-ই সারা হবে যে। বঙ্গ জুড়ে এখন বিরাট হইচই। দিঘায় উদ্বোধন পর্ব কভারেজের ফাঁকে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হল দিঘায় প্রভু জগন্নাথের কৃপা তাঁদের ওপরও পড়েছে। জয় জগন্নাথ বলে এখন তাঁরা দিনরাত মেতে রয়েছেন কাজে। কারণ মানুষের চাপে দম ফেলার ফুরসত নেই যে! রোজগার বেড়ে গিয়েছে এ-ক’দিনেই। যা আরও বহুগুণ বাড়বে এ-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ মানুষ চাইছেন একবার অন্তত প্রভুর দর্শন পেতে। শ্রীক্ষেত্র পুরী যেতে তো ভালই লাগে, কিন্তু কিন্তু প্রভু জগন্নাথ যখন নিজ গুণে এ-বঙ্গে অধিষ্ঠ হয়েছেন তখন সেই সুযোগ ছাড়া কি ঠিক হবে? ফলত দিঘায় এখন ঠাঁই নাই রব। আগে বুকিং না করলে হোটেল মিলছে না। বিশেষ করে সামনে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই দিঘায় প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রশাসন। তবে জগন্নাথধামের উদ্বোধন বাংলা তথা দেশের বুকে ইতিহাস হয়ে থেকে যাবে। এই কাজ নিয়ে গুটিকয়েক অর্বাচীন বিরোধিতা করার চেষ্টা করলেও বাংলার মানুষ দ্বারোদঘাটনের প্রথম ঘণ্টা থেকেই আছড়ে পড়েছে মন্দিরে। সেই ছবি ঝামা ঘষে দিয়েছে অর্বাচীনদের মুখে। যত সময় গড়িয়েছে ভক্তগুলোর পরিমাণ লক্ষ সংখ্যা ছাড়িয়েছে। ৩০ এপ্রিল উদ্বোধনের পর মাত্র এই ক’দিনেই সেই সংখ্যা ৩০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এবার ধুমধাম করে রথযাত্রা হবে দিঘায়। যে রথযাত্রা দেখতে যে বাঙালি পুরীমুখী হত, নিশ্চিত করে বলা যায়, তাঁদের অনেকেই এবার দিঘার ট্রেন ধরবেন।
প্রভুর মূর্তি তৈরি নিয়ে নিমকাঠ বিতর্কে ইতি টেনেছে পুরী প্রশাসনই। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে পুরী থেকে নিমকাঠ আনা হয়নি দিঘায়। এদিকে প্রভুর ৫৬ ভোগ ছাড়িয়ে বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী আরও নানাবিধ পদ প্রভুর সামনে নিত্য হাজির করা হচ্ছে। সেখানে পেড়া-গজা-খাজা কী নেই? সেইসঙ্গে রয়েছে বাংলার ভোগের চিরায়ত ছোঁয়াও। ইসকনের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাধারমণ দাসের কথায়, পুরীর মন্দিরে যে ভোগ দেওয়া হয় তা তো আছেই, কিন্তু আমরা আমাদের মতো করেও প্রভুর ভোগের আয়োজন করছি। প্রভুর প্রসাদ ও ছবি বাংলার সর্বত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাঁরা দিঘায় যাবেন তাঁরা প্রসাদ নিয়ে ফিরতে পারবেন।
দিঘা এখন শুধু পর্যটন কেন্দ্র নয়, আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তার কারণ একটি পর্যটন কেন্দ্র সেই জেলার অর্থনীতিকে পোক্ত সাহায্য করে। সৈকত নগরী দিঘা পর্যটনের উপর দাঁড়িয়ে। জগন্নাথধাম হওয়ার পরেই এক লাফেই পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ।
স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা রয়েছে পরিবহণ, স্থানীয় দোকান, হোটেল, আনুষাঙ্গিক সমস্ত কিছুর। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ইতিমধ্যেই। ভবিষ্যতে যা আরও বাড়বে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারের উদ্যোগে ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই যে জগন্নাথধাম তৈরি হল সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে বাংলার পর্যটন মানচিত্রে থেকে যাবে চিরকাল। স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। যতই বিরোধিতা করা হোক না কেন এই সারসত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
জগন্নাথধামকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গান বেঁধেছেন। সেই গান গেয়েছেন ইন্দ্রনীল সেন। গোটা উদ্বোধন পর্বে সেই গান বেজেছে দিনরাত। ‘নয়ন পথগামী জগন্নাথ স্বামী’। জগন্নাথধামের উদ্বোধন সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে বাংলা, দেশ ছাড়িয়ে গোটা পৃথিবীতে। মানুষ বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখেছেন হাওয়াই চটি পরিহিতা এক মহিলা কী অসম্ভব উদ্যমে, নিখুঁত পরিকল্পনায় তৈরি করলেন এক ইতিহাস। পুরী থেকে এলেন দ্বৈতাপতিরা। দিন কতক ধরে চলল যাগ-যজ্ঞ। মহাযজ্ঞে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তাতে সমাজের সবক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আমন্ত্রণপত্র গিয়েছে অথচ আসেননি এমন কেউ নেই। বরং উপস্থিত থাকতে যে আবেদন প্রচুর এসেছে কিন্তু স্থান সংকুলানে তা মানা সম্ভব হয়নি অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু বিপরীত দলের নেতা দিলীপ ঘোষ সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণ রক্ষা করে জগন্নাথ দর্শনে এসেছিলেন। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় বয়ে গিয়েছে। তাতে অবশ্য থোড়াই কেয়ার করেন দিলীপ ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে আলাপচারিতা হয়েছে তাঁর। তাঁর উপস্থিতি বরং ঝামা ঘষে দিয়েছে তাঁদের মুখে যাঁরা এই জগন্নাথধামকে গুরুত্বই দিতে চাননি বরং কটাক্ষ করেছেন। জগন্নাথধাম তৈরি থেকে উদ্বোধন পর্ব এবং তার পরবর্তী অধ্যায় মানুষের আগ্রহ প্রমাণ করে দিয়েছে প্রভু জগন্নাথই পথ দেখিয়েছেন জগন্নাথধাম তৈরিতে। তা নাহলে এই বিপুল দক্ষযজ্ঞ এবং কর্মযজ্ঞ কোনওরকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই সুসম্পন্ন করা প্রভু জগন্নাথের আশীর্বাদ ছাড়া সম্ভব নয়। মন্দিরের দ্বার আগলানোর ফাঁকে নিরাপত্তারক্ষী ও প্রশাসনিক আধিকারিকরাও কপালে হাত ঠেকাচ্ছেন প্রভুর সামনে। মন্দিরের ধ্বজা বদলানো হচ্ছে রোজ। কোনওদিন লাল কোনওদিন হলুদ সুউচ্চ মন্দিরের সেই ধ্বজা জানান দিচ্ছে বাংলায় এভাবেই মাথা উঁচু করে এভাবেই আবহমান কাল ধরে কৃষ্টি সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির ধ্বজা উড়েছে, আগামী দিনেও উড়বে। সৌজন্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নয়ন পথগামী জগন্নাথস্বামী
৩০ এপ্রিল, অক্ষয়তৃতীয়ার পবিত্র দিনে বাংলার মাটিতে রচিত হয়েছে ইতিহাস। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটন হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই মন্দিরে আছড়ে পড়েছে ভক্তদের ভিড়। বলা যায়, সৈকত নগরীর এখন ঠাঁই নাই রব। এক লাফেই পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে। ইতিমধ্যেই দিঘায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রোজগার বেড়েছে স্থানীয়দের। স্বভাবতই খুশি তাঁরা। অসাধ্যসাধন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অসম্ভব উদ্যমে এবং নিখুঁত পরিকল্পনায় তৈরি হয়েছে মন্দির। ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। আবহমান কাল ধরে বাংলায় এভাবেই মাথা উঁচু করে কৃষ্টি সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির ধ্বজা উড়েছে। আগামী দিনেও উড়বে। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘুরে এসে লিখলেন মণীশ কীর্তনিয়া
