গল্প-উপন্যাসে প্রেম-বিরহ

অনবদ্য দুটি বই। দিব্যেন্দু ঘোষের ‘রমণী গাঁয়ের রূপকথা ও অন্য গল্প’ এবং সুমিতা চক্রবর্তীর ‘যারা বৃষ্টিতে ভেজেনি’। আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

কালিকলম থেকে প্রকাশিত হয়েছে দিব্যেন্দু ঘোষের বই ‘রমণী গাঁয়ের রূপকথা ও অন্য গল্প’। একটি উপন্যাস এবং তিনটি গল্পের সংকলন। শুরুতেই রয়েছে উপন্যাস ‘রমণী গাঁয়ের রূপকথা’। প্রধান চরিত্র মনোজমোহন। তাকে কেউ মনা ডাকে। কেউ ডাকে মন। সে এক হাবাগোবা ছেলে। এই চরিত্র ঘিরেই আবর্তিত একাধিক চরিত্র। লোপা নামের বোষ্টুমী তার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় অসাধ্যসাধন করার মন্ত্র। মাঝেমাঝে গর্জন বেরিয়ে আসে হাবাগোবা ছেলেটির ভিতর থেকে। অনেকেই তাকে সমীহ করে। ফুল যেমন আছে, তেমনই আছে কাঁটা। বোষ্টুমী লোপা পুরুষের লালসার শিকার হয়। শেষপর্যন্ত মৃত্যু। চোখের সামনে বদলে যায় অনেক কিছুই। মনোজমোহনের বড় ভাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরিবারকে ভুলে যায়। ভুলে যায় নিজের প্রেমিকা অনুরাধাকেও। হাবাগোবা মনোজমোহন একদিন পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। মনোজমোহন এবং অনুরাধা পরস্পরের কাছাকাছি আসে। এক হয় দুটি মন এবং শরীর। টানটান কাহিনি। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা এই উপন্যাস জুড়ে রয়েছে নিষিদ্ধ অথচ স্নিগ্ধ প্রেমের আকর্ষণ, যা পাঠককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেনে রাখে। প্রতিটি চরিত্রই রক্তমাংসের। মনে হয় যেন চারপাশে দেখা মানুষজন। সহজেই চিনে নেওয়া যায়।

আরও পড়ুন-ছাত্ররাই সুস্থ রাজনীতির ভবিষ্যৎ পুরুলিয়ার প্রস্তুতি সভায় তৃণাঙ্কুর

এছাড়াও রয়েছে তিনটি প্রেমের গল্প। ‘রঙ্গিনীর তুর্কি নাচন’ গল্পে দেখা মেলে মুখোশধারী মানুষের। শত্রুতা করে বন্ধু। অথচ একটি হিংস্র বন্যপ্রাণী বন্ধুর মতো হয়ে ওঠে। তিন অভিন্ন হৃদয় বন্ধুর গল্প ‘পল্লবীর প্রতিশোধ’। এই গল্পে বন্ধুতার পাশাপাশি এসেছে দাম্পত্য, শরীর, পরকীয়া। সেইসঙ্গে প্রতিশোধও। আর্ট কলেজের বেহিসাবি জীবন নিয়ে বাঁধা হয়েছে ‘গভীরে যাও’। ন্যুড মডেল ও শিল্পীর সম্পর্কের গল্প। এই গল্পেও শরীর এসেছে তুমুলভাবে। তিনটি গল্পই পড়তে ভাল লাগে। প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ আর্য ঘোষের। দাম ৩০০ টাকা।
বিচিত্রপত্র গ্রন্থন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়েছে সুমিতা চক্রবর্তীর বই ‘যারা বৃষ্টিতে ভেজেনি’। উনিশটি ভিন্ন স্বাদের গল্প পরিবেশিত হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম দিকে কিছু অণুগল্প আছে। বাকি ছোটগল্প। শেষে একটি বড়গল্প। পাঠকমাত্রই জানেন, অণুগল্প সাহিত্যে র এক বিশেষ দিক। এখন মানুষের হাতে সময় কম। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে অণুগল্প যেন বিন্দুতে সিন্ধুর স্বাদ এনে দেয়। অনেক বড় বিস্তার, অনেক বড় সম্ভাবনা যেন লুকিয়ে থাকে। প্রচ্ছন্ন হয়ে, সংযত হয়ে। ছোট-ছোট টানটান ঘটনা বা শেষের মোচড় মন ছুঁয়ে যায়। ভাবায়।
আলোচ্য বইয়ের পাতায় পাতায় রয়েছে নানা বিষয়ের গল্প। প্রেম আছে। আছে বিরহও। প্রতিটি চরিত্রই যেন পরাজিত। নির্জন দ্বীপের বাসিন্দা। কারও সহানুভূতি পায় না। অসম্পূর্ণ জীবন। ঘটে যায় মহতী সম্ভাবনার বিনাশ। সমাজের অবহেলায়, নিষ্ঠুরতায় হারিয়ে যায় নিকষ কালো অন্ধকারে। তারা কোনওদিন ভেজেনি ভালবাসার বৃষ্টিতে। বৃষ্টির অভাবে খুঁজে পায় না জীবনের অর্থ।

আরও পড়ুন-আবারও আদালতে প্রশ্নের মুখে সিবিআইয়ের ভূমিকা

প্রথম গল্প ‘পাগলিটা’। এখানে নারী জীবনের গভীর সমস্যার দিক তুলে ধরা হয়েছে। কোনও কোনও সময় মানসিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবে অসুস্থ, দুই নারীকে একই বিন্দুতে দাঁড়াতে হয়। তখন একজনের চোখের জলের অনুভূতি টের পায় আরেকজন। ‘কেউ কথা রাখে না’ একটি মেয়ের হারিয়ে যাওয়ার গল্প। পরপর কন্যসন্তান জন্ম দেওয়ায় এক নারীর কী ভয়াবহ পরিণতি হয়, দেখিয়েছে ‘একটি হত্যা এবং’ গল্প। কাউকে না পাওয়ার বেদনা ঝরে পড়ে ‘গোপন অধ্যায়’ গল্পে। ‘প্রেমহীন’, ‘দৌড়’, ‘মুক্তি’, ‘সেই মেয়ে’ গল্পগুলো মনকে নিয়ে যায় অন্য জগতে। বড়গল্প ‘হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র’-ও মন্দ নয়। লেখিকার প্রথম একক বই। বেশ ভাল। যদিও বাক্য আরেকটু আঁটসাঁট, নির্মেদ করা যেত। ভাল হত অতিরিক্ত শব্দ তুলে নিলে। তাহলে গল্পগুলো হয়ে উঠত আরও ঝরঝরে, প্রাণবন্ত। মায়া লেগে রয়েছে স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়ের প্রচ্ছদে। দাম ২৫০ টাকা।

Latest article