দেবাশিস পাঠক: কাঁওয়ার যাত্রীদের যাত্রাপথের দু’পাশের যেসব খাবারের দোকান রয়েছে, তার মালিকদের বাধ্যতামূলক ভাবে দোকানের বোর্ডে নিজেদের নাম লিখে রাখতে হবে। ঘোষণা যোগী সরকারের। বলা হচ্ছে, কাঁওয়ার তীর্থযাত্রীদের পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত। ঘটনাচক্রে, বিজেপি শাসিত পড়শি রাজ্য উত্তরাখণ্ডেও শুক্রবার একই নির্দেশ জারি করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন-তথ্যচিত্রে কোলাজ-শিল্পী
উত্তরপ্রদেশ সরকারের বক্তব্য, দোকানদারদের একাংশ নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে কাঁওয়ার যাত্রীদের কাছে নিরামিষ খাবার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার পুলিশের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে শুক্রবার প্রকাশিত একটি খবরেও এমন ‘অভিযোগ’ তোলা হয়েছে। এর আগে পুণ্যার্থীদের সম্মান জানিয়ে কাঁওয়ার যাত্রাপথে আমিষ বিক্রি বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই নির্দেশের সঙ্গে প্রায় ন’দশক আগের নাৎসি জার্মানিতে প্রশাসনের ইহুদি-বিরোধী নির্দেশের ছায়া স্পষ্ট। নাম প্রকাশের মাধ্যমে খাবারের দোকানের মালিক ও কর্মীদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ্যে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই এই নির্দেশ। যোগী প্রশাসনের বক্তব্যে সেই ইঙ্গিতই মিলেছে। এই প্রতিবেশে মনে পড়ে গেল, আজ ২০ জুলাই সারদামণির প্রয়াণদিবস। কাঁওয়ার যাত্রীদের প্রতি যোগী প্রশাসনের নির্দেশিকা, বিজেপির ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি এসব দেখতে দেখতে আমরা মায়ের এক ভক্ত আমজাদের কথা স্মরণ করতে পারি। নিজের হাতে তাকে খেতে দিয়েছিলেন, এমনকী খাওয়া শেষে এঁটো থালা পরিষ্কার করতেও তাঁর কোনও দ্বিধা ছিল না। আমজাদের পরিচয় সম্পর্কে মাকে মনে করিয়ে দেওয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার শরৎ যেমন ছেলে, ওই আমজাদও তেমন ছেলে’। শরৎ, অর্থাৎ পরবর্তী কালে স্বামী সারদানন্দ মহারাজ। এই সামান্য ঘটনাটির তাৎপর্য মোটেও সাধারণ নয়। আজকের এই জটিল আর্থ-সামাজিক দুনিয়ায়, যেখানে অসহিষ্ণুতার একটা বিষময় বাতাবরণ, সেখানে মা সারদার এই সহজ অভিব্যক্তিটা খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। আজও আমরা সর্বস্তরে জাতপাতের সীমানা লঙ্ঘন করতে পারছি না। আমরা সবাই এক এবং অভিন্ন, এই শাশ্বত বোধ আমাদের সবার মধ্যে আসছে না। অথচ কত বছর আগে প্রকৃত সমাজসেবী হিসেবে শ্রীশ্রীমা এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন, ‘আমরা-ওরা’র পাঁচিল। শ্রীশ্রীমা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আসল ধর্ম মানুষের ধর্ম। শিখিয়েছিলেন, ‘জগৎকে আপনার করে নিতে শেখো। কেউ পর নয়, মা, জগৎ তোমার।’