ময়দান

টিম নিয়ে এবার মাঝমাঠে অজয় দেবগণ। ছবির নাম ‘ময়দান’। এখানে ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের কিংবদন্তি কোচ আবদুল সৈয়দ রহিমের ভূমিকায় অবর্তীণ তিনি। ছবিটি সৈয়দ আবদুল রহিমেরই বায়োপিক। ‘ভোলা’ এবং ‘শয়তান’-এর পর সম্পূর্ণ এক নতুন অবতারে দেখা যাবে অজয়কে। ছবির পরিচালক অমিত আর শর্মা। মুক্তি পাচ্ছে আগামী সপ্তাহে। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

‘ওয়ান ম্যান, ওয়ান বিলিফ, ওয়ান স্পিরিট, ওয়ান নেশন’ এটাই ট্যাগ লাইন ‘ময়দান’ ছবির। ফুটবল হোক বা ক্রিকেট খেলার সঙ্গে ভারতীয় তথা বাঙালির একাত্মবোধ আর দেশাত্মবোধ খুব তীব্র। বিশেষ করে বাংলা ও বাঙালির কাছে ফুটবল কৈশোরের সেন্টিমেন্ট, যৌবনের উন্মাদনা, বার্ধক্যের আবেগ। কলকাতার ট্রামগাড়ি, ময়দান, কাদাজলে মাখামাখি হয়ে ফুটবল খেলার সেই চিরন্তন বাঙালি দৃশ্যের কাছে ঋণী এই বঙ্গের ফুটবলপ্রেমীরা।
আগামী সপ্তাহেই মুক্তি পেতে চলেছে বহু প্রতীক্ষিত বলিউডি এই ছবি ‘ময়দান’। এই ছবির গল্প বাঙালির সেই নস্টালজিয়াকে উসকে দেবে। ছবিতে ফুটবলের গরিমাকে এমনই এক পর্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে।
সাল ১৯৫২ থেকে ১৯৬৩ সাল প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিংবদন্তি কোচ সৈয়দ আবদুল রহিম। এই সময়কালটাই, ‘ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগ’ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এই সময়সীমায় ১৯৫১ এবং ১৯৬২ সালে এশিয়ান গেমসে ভারত দুটি স্বর্ণপদক অর্জন করে। সেই সৈয়দ আবদুল রহিমের বায়োপিক হল পরিচালক অমিত আর শর্মার ছবি ‘ময়দান’।
একজন কিংবদন্তি ফুটবল কোচ যিনি উনিশের দশকের শেষের দিকে ভারতীয় ফুটবলের উত্থানের জন্য বড় কৃতিত্বের দাবিদার।
১৯৬২ সালে ভারত যখন এশিয়া কাপ জেতে তখন সেই টিমটি তৈরি করেছিলেন সৈয়দ আবদুল রহিম। তিনি টিমটা তৈরি করেন। সবাইকে নিয়ে তাঁর সেই জার্নির শুরু থেকে সোনা জেতা পর্যন্ত সময়টাই ধরা হয়েছে এই ছবিতে।
অমিত আর শর্মা পরিচালিত এই ছবিতে সৈয়দ আবদুল রহিমের চরিত্রে ‘ময়দান’-এ নামছেন অভিনেতা অজয় দেবগণ। বেশ কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে এসে গেছে এই ছবির ট্রেলার। একের পর এক ছবিতে নিজের ইমেজকে নতুন করে ভেঙে নতুন করে গড়েছেন অজয়। ‘ভোলা’, ‘শয়তান’-এর পর নতুন এক অবতারে তিনি উসকে দিলেন ফুটবলপ্রেমীদের তীব্র আবেগকে।
ছবিতে মূল চরিত্রে অজয়কে কাস্টিং করার সময় পরিচালক অমিত আর শর্মা একটু দোটানার মধ্যে পড়েছিলেন। কারণ অজয় দেবগণের সঙ্গে এটাই ছিল তাঁর প্রথম কাজ। এই প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, অজয়ের ইমেজ আমার কাছে ‘সিংহম’-এর মতো। তাই একটু ডাউট ছিল যে অজয়কে এই চরিত্রে কতটা মানাবে। কিন্তু সেই দ্বিধা একেবারেই কেটে যায় যখন ফ্লোরে অজয়কে দেখি। আমার দেখে মনে হয়েছিল ওঁর যেন ট্রান্সফর্ম ঘটে গেছে।
স্বাধীনতার ৫ বছর পর ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পায় ভারতীয় ফুটবল দল। সেই বছর সামার অলিম্পিক হয় ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে। ভারতের বিরুদ্ধে ময়দানে নাম হাঙ্গেরি। ম্যাচের দিন তুমুল বৃষ্টি। ভিজে যায় পুরো ময়দান। কাদামাঠে হাঙ্গেরির ফুটবলারদের পায়ে স্পাইক জুতো। আর উলটো দিকে খালিপায়ে মাঠে ভারতীয় ফুটবলাররা। কী হবে সেই খেলার? এই রোমাঞ্চকর পরিস্থিতিটাই ‘ময়দান’ দেখতে বসে উপভোগ করবে দর্শক।
‘ময়দান’-এ আর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন এই বাংলার প্রতিভাবান অভিনেতা অমর্ত্য রায়। অমর্ত্য বেশ পরিচিত মুখ। এই ছবিতে ফুটবলার চুনি গোস্বামীর ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে। অমর্ত্যর আরও একটা পরিচয় রয়েছে। তিনি টলিউডের অভিনেত্রী চৈতি ঘোষালের পুত্র। ‘ময়দান’ ছবিটির আগে টুয়েন্টি টু ইয়ার বলে একটি হিন্দি ছবি করেছেন অমর্ত্য প্রাইম ভিডিওর জন্য এবং বাংলায় করেছেন ‘উড়নচণ্ডী’। যেটি প্যানোরামায় প্রদর্শিত হয়। ‘ময়দান’ ছবিতে ডাক পাওয়া এবং কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে অমর্ত্য বললেন, ‘২০১৯ সালে আমি ময়দানের জন্য কাজ শুরু করি। ওর আগেই একদিন আমার কাছে হঠাৎ একটা ফোন আসে। সেই ফোনে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, অজয় দেবগণের একটি নতুন ছবি আসছে একজন ফুটবল কোচকে নিয়ে সেই ছবিতে চুনি গোস্বামীর চরিত্রের জন্য আমরা একজনকে খুঁজছি। আপনি কি অডিশন দিতে চান?’ শুনেই আমি এককথায় রাজি হয়ে যাই। দু রাউন্ডে অডিশন হয়। ফাইনাল রাউন্ড মুম্বইয়ে ছিল। আমাকে সেখানে ডাকা হয়। আমার অডিশন দেখে পরিচালক অমিত আর শর্মার খুব ভাল লেগেছিল। ওঁরা বলেছিলেন, আমাকে একদম চুনি গোস্বামীর মতোই দেখতে লাগছে। এরপর শ্যুটিং শুরু হয়। অমিত স্যার চাননি ছবিতে ফুটবলকে কম্প্রোমাইজ করা হোক। অর্থাৎ কোনও আসল ফুটবলারকে এনে তাঁকে দিয়ে খেলার দৃশ্যগুলো তুলিয়ে অন্যের মুখ বসিয়ে দেওয়া। আমরা যাঁরা এই ছবিতে অভিনয় করেছি তাঁদের প্রত্যেককে খেলাটা রপ্ত করতে হয়েছে। মাসের পর মাস মাঠে গিয়ে এক প্রাক্তন ফুটবল কোচের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত দু-আড়াই ঘণ্টা ফুটবল শিখতে হয়েছে এবং প্র্যাকটিস করতে হয়েছে। একটা সময় এই কঠোর পরিশ্রমে আমরা সবাই খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছিলাম। অভিনেতা অজয় দেবগণ সম্পর্কে অমর্ত্য জানালেন, শ্যুটিং ফ্লোরে অজয় স্যারের বডি ল্যাঙ্গোয়েজটাই যেন পাল্টে যেত। উনি আবদুল রহিম হয়ে যেতেন। এতটা সিরিয়াস একজন মানুষ নিজের কাজ সম্পর্কে এত ডেডিকেশন। অনেক কিছু শিখেছি ওঁর থেকে। মানুষ হিসেবেও উনি ভীষণ ভাল, কোনওরকম স্টারডম ছিল না কোনও দিন। ষোলো জনের একটা টিম ছিলাম আমরা। এতটাই বন্ডিং হয়ে গিয়েছিল যে আজ আমরা যে কোনও সমস্যায় একে অপরকে ফোন করতে পারি। গোটা ছবির শ্যুটিং দেখলে মনে হবে শ্যুটিং হচ্ছে না যেন একটা ফুটবল টিম তৈরি করা হচ্ছে! আমার কেরিয়ারে এটা একটা স্মরণীয় ঘটনা হয়ে রয়ে যাবে।
ছবিতে অন্যতম দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়মণি এবং গজরাজ রাও। রয়েছেন বাংলার আরিয়ান ভৌমিক। এ-ছাড়া টলিউডের অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ এই ছবির মাধ্যমেই পা রাখতে চলেছেন বলিউডে। মোট ৪টি ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে অজয় দেবগণের ‘ময়দান’। হিন্দি, তামিল, তেলুগু ও মালায়াম ভাষায়। ইদের সময় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ময়দান’-এর সঙ্গে জোরদার টক্কর লাগবে বড়ে মিঞা অক্ষয়কুমার এবং ছোটে মিঞা টাইগার শ্রফের। কারণ একই সঙ্গে ওই সময় মুক্তি পাচ্ছে তাঁদের ছবি ‘বড়ে মিঁয়া ছোটে মিঁয়া’। কার দৌড় কতদূর সেটাই এখন দেখার।

Latest article