প্রতিবেদন : কেন্দ্রের অসহযোগিতায় নদীভাঙনের গ্রাসে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাগীরথী, পদ্মা, ফুলহার নদীর ভাঙনে দুই জেলায় নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে ২৫ হাজার বিঘা জমি। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার চোখ বুজে রয়েছে। বুধবার রাজ্য বিধানসভায় এই কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন সেচ ও জলপথ দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। ভাঙন রোধ, জলপ্রকল্প ও আন্তঃদেশীয় নদী সমস্যায় কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা না থাকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মন্ত্রী জানান, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রাজ্যের পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে সমস্ত পার্টির এক প্রতিনিধিদল গঠনের প্রস্তাব থাকলেও সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। গঙ্গা ও পদ্মা নদীর ভাঙনরোধে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হলেও কেন্দ্র ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে এক টাকাও দেয়নি। পূর্বতন ৭৫:২৫ অনুপাতে অর্থসাহায্য দেওয়া হলেও বর্তমান কেন্দ্র সরকার প্রথমে তা ৫০:৫০, পরে ৬০:৪০ করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
আরও পড়ুন-মহাসমারোহে পালিত ৬২৯ বছরের প্রাচীন মাহেশের স্নানযাত্রা
মানসবাবু জানান, ছয়টি স্কিমের জন্য ৪৪৪৯ কোটি টাকার পরিকল্পনা পাঠানো হলেও কেন্দ্র থেকে এখনও পর্যন্ত এক টাকাও আসেনি। কেন্দ্রের মনোভাবের তীব্র নিন্দা করে তিনি বলেন, আপনারা চান বাংলা পচে মরুক। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানেও কেন্দ্রের তরফে সহযোগিতা করা হয়নি। রাজ্য বাজেটে ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ৫০০ কোটি ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে এবং কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভুটান থেকে নেমে আসা ৭৬টি নদীর জল উত্তরবঙ্গের জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছে। ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। রাজ্য সরকার এককভাবে সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট।
মন্ত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামশেরগঞ্জ ছুটে গিয়েছেন। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাজ্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। বাংলার বাড়ি করে দিয়েছে। ২৫৯৯টি পরিবারকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। মালদহে ২১৮টি ও মুর্শিদাবাদে ১৯৫টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়েছে। ২৩৫৩ বিঘা জমি নদীগর্ভে। সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালে সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের ২০২২ সালে চিঠি দেন, এখনও কোনও উত্তর নেই। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়েও প্রকল্পে অনুমোদন নেই। বাংলাকে শুকিয়ে মারো, বাংলাকে ডুবিয়ে মারো— এটাই নীতি কেন্দ্রের। মানসবাবু আরও জানান, কেশপুর, চন্দ্রকোনা প্রকল্পে ঢুকেছে। হুগলিও খুব শীঘ্রই ঢুকবে। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো উচিত, যিনি সত্যিকারের উন্নয়নের রাজনীতি করেন। আমরা চাই— সব দল মিলে বাংলাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুক।