প্রতিবেদন : পাঁচটা লোককে ভোট দিতে দেয়নি বলে কি মোদি জিতে যাবে? পাঁচজনকে ভোট দিতে না দিলে পাঁচ লাখ ভোট বিরুদ্ধে যাবে, পাঁচ কোটি ভোট বিরুদ্ধে যাবে। মঙ্গলবার পুরুলিয়া ও বিষ্ণুপুরের প্রচারসভা থেকে বিজেপিকে একহাত নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ভোট দিতে গিয়েছে, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে রাখা হয়েছে রোদ্দুরের মধ্যে। এরপর কমিশন ও বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এরপর কি মনে করেন, ইলেকশন কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেবে? কোনও ব্যবস্থা নেবে না। মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট এখন মোদি কোড অফ কন্ডাক্টে পরিণত হয়েছে। বিজেপির দালালি করে বেড়াচ্ছে কিছু লোক।
স্বেচ্ছাচারী-অনাচারী রাজা : এদিন প্রধানমন্ত্রীকে স্বেচ্ছাচারী-অনাচারী রাজা বলে তীব্র কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, লোকের একশো দিনের কাজের টাকা দেয় না। রাস্তাঘাটের টাকা দেয় না। কেন্দ্র-রাজ্য ভাগাভাগি করে টাকা দিলেও নিজের ছবি লাগায়। কোভিডের ইঞ্জেকশনেও নিজের ছবি। দেশের প্রধানমন্ত্রীও জুমলার কথা বলছে। আমরা কেউ হিন্দু নই, উনি একা হিন্দু। তারপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তুমি অনেক বড় নেতা, সবার দীক্ষাগুরু হয়ে গিয়েছ। সুব্রতদা থাকলে বলতেন, যিনি সবথেকে বেশি মিথ্যা কথা বলেন তাঁর দাঁতের মাড়ি কেন থাকবে?
মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী দেখিনি : মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপি কূলে পানি না পেয়ে গ্রামে গ্রামে মিথ্যা কথা প্রচার করছে। প্রধানমন্ত্রীও মিথ্যা বলছেন। এত বড় মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী দেখিনি। দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি মিথ্যা কথা বলেন, তাঁকে ভোট দেওয়া বন্ধ করে দিতে হয়। যাতে আর কোনওদিন প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন তার ব্যবস্থা করতে হয়। গ্রামে গ্রামে লিখছে অন্নপূর্ণার ভাণ্ডারে তিন হাজার টাকা দেবে। বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কোথায় গেল, মিথ্যাগুরু! শুধু মিথ্যা কথা বলো। চাল দেয় না, অন্নপূর্ণার ভাণ্ডার দেবে! আমরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেব বলেছিলাম, দিচ্ছি।
বিজেপির সবটাই ভাঁওতা : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফ কথা, আমাদের কথা মানে আমাদের কথা। বিজেপির কথা মানে সবটাই ভাঁওতা। ভোটের আগে বলছে বিনা পয়সায় গ্যাস দেব, বিনা পয়সায় রেশন দেব। ওরা নির্বাচন মিটে গেলে আর আসে না। ভাঁওতা দিয়ে এমপি-এমএলএ নিয়ে পগার পার। সব পালিয়ে যাওয়ার ধান্দা।
আরও পড়ুন- ২৫,৭৫৩ চাকরি বহাল আদালতে, হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের
ফুর্তি করিয়ে ভোটটা নেবে : বিজেপি সবাইকে ডেকে ডেকে বলছে, তোকে টাকা দিচ্ছি তুই আমাদের সাপোর্ট দে। বলুন, ১৫ লক্ষ দেবে বলেছিলে, তার কমে এক পয়সাও নেব না। তোমরা কী ভাবো, একটু ফুর্তি করিয়ে ভোটটা তোমরা নিয়ে নেবে। এত সস্তা! সন্দেশখালি দেখলেন তো! কীভাবে মা-বোনেদের অসম্মান করল কয়েকটা টাকার বিনিময়ে। মনে রাখবেন, সব হারালে ফিরে পাওয়া যায়। কিন্তু সম্মান হারালে ফিরে পাওয়া যায় না। এটা হল মানুষের সবথেকে বড় অহংকার, সবথেকে বড় অলংকার।
তোমার এত রাগ কেন : বিনা পয়সায় রেশনের বলে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়েছে বিজেপি। প্রচারক বা প্রকাশকের নাম নেই। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপি এই মিথ্যাচার করে, আমরা ওভাবে বলি না। রেশন নিয়ে মিথ্যা বলছে ওরা। দু’বছর ধরে কেন্দ্র এক পয়সা দেয়নি, আমরা সবটা দিয়েছি। বিনা পয়সায় রেশন আমরাই দিই, আমরাই দিয়ে যাব। কোর্টে আবার কেস করেছে, বাড়ি বাড়ি রেশন দেওয়া যাবে না। তোমার এত রাগ কেন? তুমি এত হিংসুটে কেন? ছেলেমেয়েরা চাকরি করলে, চাকরি খেয়ে নাও। মানুষখেকো বাঘ শুনেছেন, কিন্তু চাকরিখেকো বাঘ শুনেছেন?
মিথ্যা ভাষণ দেবেন : জনতার কাছে তৃণমূল সুপ্রিমোর আবেদন, ওদের আর আসতে দেবেন না। সর্বনাশ করে দেবে। কেউ বাড়ি থাকতে পারবে না। এনআরসি করে জেলে রেখে দেবে সবার জন্য জেল বানিয়ে, অসমে যেমন করেছে। আমার আদিবাসী ভাইবোনেরা বুঝতে পেরেছে, আমি তার জন্য কৃতজ্ঞ। সিএএ করেছে, যেই আবেদন করবেন আপনি বিদেশি হয়ে যাবেন। আর একটা আইন এনেছে ইউনিফর্ম সিভিল কোড। ইন্ডিয়ান পিনাল কোড উঠে গিয়েছে। এই আইন মানে কারও কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। দেশে কেউ থাকবেন না, উনি একা থাকবেন। একা থেকে মিথ্যা ভাষণ দেবেন।
কান মুলে দিতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরশু দিন একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছিল। বলেছিল, টাকা দেব না, গভর্নমেন্ট নাকি টাকা অপচয় করেছে। আমি ডকুমেন্ট-সহ বলতে পারি। ওরে মিথ্যাবাদী মিথ্যুকের দল, ১৮.২৪ কোটি টাকা তৃণমূল কংগ্রেস সেভ করেছে। এর জন্য কান মুলে দিতে হবে ওদের। একটা ভোট দেবেন, দুটো কান মুলবেন। তবেই যদি শান্তি হয়।
পগার পার করে দিন : তৃণমূলনেত্রী বলেন, মোদিবাবু বিনা পয়সায় গ্যাস দিচ্ছেন না গ্যাস বেলুন দিয়েছেন। বিদ্যুৎ নাকি বিনা পয়সায় দিচ্ছেন! শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি খেয়ে নিল, ভোটের আগে বলছে হামভি কৌসিস করে গা। তুমি সিবিআইকে দিয়ে যোগ্যদের চাকরি খেয়ে নিয়েছ। আমার ১০ লক্ষ চাকরি রেডি আছে। বিজেপি-সিপিএমের লোকেরা কোর্টে চলে যাচ্ছে। আপিল করলেই হাইকোর্ট দিয়ে দিচ্ছে। আমাদের বেলায় জেল, ওরা করলেই বেল, এইভাবেই মোদি বিজেপিকে করছে সেল। মোদিবাবু দেশ বিক্রি করে দিয়েছেন, মানুষ, ধর্ম, জাতি সব বিক্রি করে দিয়েছেন। আপনারা কি চান, এই মোদি জিতুক দিল্লিতে? টাকা খাইয়ে মিথ্যা বলাচ্ছে। বিশ্বাস করবেন না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবেন। বিজেপি এবার পগার পার হবে। ওদের পগার পার করে দিন, নিজেদের এনআরসি-ইউসিসি থেকে বাঁচান।
আদিবাসীদের লড়াইয়ে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সারি ও সারনা ধর্ম নিয়ে যে লড়াই আদিবাসী ভাইবোনেরা করছেন, আমি আপনাদের সঙ্গে একমত। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখেছি। আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর করা যাবে না, সেই আইন করেছি। জোর করে কেড়ে নিলেও তা আইনি স্বীকৃতি পাবে না। এছাড়া রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিনে, হুল দিবসে ছুটি দিয়েছি আমরা। করম পুজোর দিনেও ছুটি দিয়েছি। তিন লক্ষের উপর আদিবাসী মানুষকে জয় জোহর পেনশন দিই। সাঁওতালি ভাষা কুরুক ভাষা ও কুড়মালি ভাষাকে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। সাঁওতালি ভাষায় ডিগ্রি কোর্স, পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ সবই করা হয়েছে।