ভবানীপুর উপনির্বাচনের প্রচারে এসে ফের নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ টেনে আনলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন চেতলার সভা থেকে সরাসরি তিনি জানিয়ে দেন, নন্দীগ্রামে তিনি হয়তো প্রাণেও মারা যেতে পারতেন। পায়ের বদলে গলাটা কেটে যেতে পারতো। অর্থাৎ, তাঁর অভিযোগ, তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল।
নন্দীগ্রামে সেদিনের সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ”নন্দীগ্রামে যে দিন মনোনয়ন জমা দিলাম আমার পা-টা বারোটা বাজিয়ে দিল। আপনারা পুরোটা জানেন না। আমার পায়ের অবস্থা দেখাতে পারলে বুঝতে পারতেন।ডাক্তাররা বলেছিল আপনি বেরোতে পারবেন না। ওই সময়ে থাকা পুলিশ কর্মীদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। হুইলচেয়ার করে দেড়মাস ঘুরে বেরিয়েছি। মিটিং করেছি। আসল ছবি দেখালে কাঁতরে উঠবেন। গোড়ালিটা চেপে দিয়েছিল। ভাগ্য ভালো মারা যাইনি! নন্দীগ্রামে দরজাটা যেভাবে চেপে ধরেছিল গলাটা কাটা যেত। পা-টা ঠিক হয়নি কিন্তু জেদে চলি আমি। ৩০ বছর সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদিরা যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। কতটা দানবিক, পাশবিক, পাপী, ভয়ঙ্কর এই বিজেপি পার্টি কল্পনা করতে পারবেন না! তবে এই দানব বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। লড়াই চলবে। যতদিন না পর্যন্ত দিল্লি থেকে উৎখাত করা হবে। খেলা হবে। দিল্লিও দখল হবে। অন্য রাজ্যে ঝাঁপাবো আমরা।”
আরও পড়ুন-শুভেন্দুকে মল-মূত্রের সঙ্গে তুলনা করলেন সুকান্ত, শুরুতেই গেরুয়া দ্বন্দ্ব
এখানেই শেষ নয়। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ আন্দোলন ও চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের তথ্য এদিন চেতলার সভায় তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ”আমার জীবনে অনেক লড়াই আন্দোলন করেছি। লকআপে মৃত্যু হত আগে। মানবাধিকার নিয়ে ২১ দিন আন্দোলন করেছিলাম। সব বইয়ে লিখেছি। ১০৫টা বই প্রকাশিত হয়েছে। জানবার জন্য বলছি। ১৯৯৩ সালে আমার ধর্নার পর তৈরি হয়েছিল মানবাধিকার কমিশন। আমার সেই আন্দোলনের জন্যই এখন লক আপে মৃত্যু হওয়া লোকের পরিবার চাকরি বা ক্ষতিপূরণ পায়। এরপর সিঙ্গুর আন্দোলনের জন্য ১৬ দিন আমরণ অনশন করেছি। বাঁচার কথা ছিল না। সিপিএম আমাকে অনেক অত্যাচার করেছে, আমি জীবন্ত লাশের মতো, মাথা থেকে পা পর্যন্ত অপারেশন।”
সিপিএমের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের কথাও উল্লেখ করেছেন তৃণমূল নেত্রী বলেন, ”অনেকে জানেন না, হাজরায় ওরা আমাকে মেরে ক্ষান্ত হয়নি। গার্ডেনরিচে গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিল। একটি ছেলে হাত তুলেছিল বলে গুলিটা আমার মাথায় না লেগে তাঁর হাত লাগে। আমি প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু আমার চোখ দুটো কাঁচ ঢুকে প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একুশে জুলাই যখন মারল আমার শরীর থেকে দু’টো পার্ট বাদ হয়ে গিয়েছিল। আমি কখনও আপনাদের জানতে দিইনি। পরপর মার খেয়েছি। পা থেকে কোমর,হাত- এমন কোনও জায়গা নেই। জীবন্ত লাশ বলতে পারেন।”
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্ৰাক্তন সাংসদ হওয়ার জন্য ১ লক্ষ টাকা করে পেনশন পান কিন্তু নেন না। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতনও নেন না। তিনি সরকারের নয়, পার্টির গাড়ি চড়েন।ছবি এঁকে, গান সুর দিয়ে কিছু উপার্জন হয়, সেটা থেকেই তাঁর চলে যায়।