প্রতিবেদন : একদিকে ডিভিসি, পাঞ্চেতের পরিকল্পনাহীন জল ছাড়া, অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় ৩৫০ মিলি লিটারের বেশি বৃষ্টি। যার জেরে ভাসছে রাজ্যের ৮টি জেলা। শনিবার দুপুরে হেলিকপ্টারে আকাশপথে সেই পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসে মুখ্যমন্ত্রী তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় সরকার আর ডিভিসির বিরুদ্ধে। সাফ বললেন, যেভাবে জলছাড়া চলছে, তাতে এবার ডিভিসির কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে। আর কেন্দ্র কথায় কথায় মানবাধিকার কমিশন পাঠায়। জলে ভাসছে বাংলার ৮ জেলা। দেখে যান। রাজ্যকে সাহায্য করুন।
আরও পড়ুন-মানবজনম
আকাশপথে সরেজমিনে
জলমগ্ন জেলার পরিস্থিতি দেখতে শনিবার দুপুরে কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে ঘুরে দেখেন উদয়নারায়ণপুর, হুগলি, পুরশুড়া, খানাকুল, আরামবাগ, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর। মাঝে নামেন হুগলির আরামবাগে। সেখান থেকে হেঁটে যান কালিকাপুর ত্রাণশিবির। হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে কথা বললেন এলাকাবাসীর সঙ্গে। রিপোর্ট নেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের থেকে। ফের স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, এটা ম্যানমেড বন্যা। দুপুরে নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকের পর ফের আর একবার কেন্দ্রকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তুলে ধরলেন আসল চিত্র।
ক্ষতির খতিয়ান প্রকাশ্যে
উদয়নারায়ণপুর, বাগনান, খানাকুল, ঘাটাল, ডেবরা, পটাশপুর প্লাবিত হয়েছে। ৫ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ নামানো হয়েছে। নেমেছে সেনা। ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে শিবিরে।
আরও পড়ুন-মৃত্যু নেই যে কণ্ঠস্বরের
ডিভিসিকে তোপ
উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যেভাবে জল ছাড়া হয়েছে, তা ক্রাইম ছাড়া কিছু নয়। কেন আগে আমাদের সঙ্গে কথা বলা হবে না? তথ্য দিয়ে জানান, ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার কিউসেক জল ছাড়লে গ্রামগুলো ভাসত না, ফসল নষ্ট হত না। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে ডিভিসি। আবার বেলা ১টায় ১ লক্ষ কিউসেক, রাত ৮টায় ১.২৫ লক্ষ কিউসেক। আবার রাত তিনটেয় ঝাড়খণ্ড সরকার ছাড়ে ৮০ হাজার কিউসেক জল, আবার সকালে ১.২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। কেন বারবার জল ছাড়া? কেন জানানো হবে না? কেন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না? কেন ভাবা হবে না বাংলার মানুষের কথা? যেভাবে জল ছাড়া হয়েছে তা এর আগে কখনও হয়নি। আমার মনে পড়ছে না।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন কেন ডিভিসি খাল সংস্কার করবে না? ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ১০ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আর দুর্গতি বেড়েছে বাংলার মানুষের। আমি আগে ম্যানমেড ফ্লাড বলতাম। অনেকে আমাকে সমালোচনা করত। আর যা হয়েছে বিগত কয়েক দিনে তা ম্যান মেড ছাড়া কী? ঝাড়খণ্ড সরকারকে বলব, আমাদের সঙ্গে বসে প্ল্যান করুন। আর কেন্দ্রকে বলব মাস্টার প্ল্যান করতে। আর বলব টাকা দিন।
ক্ষতিপূরণ চাইব
মুখ্যমন্ত্রী জানান, গোটা ঘটনার জন্য ডিভিসির কাছে ক্ষতিপূরণ চাইব। কেন্দ্রকে বলব ডিভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখব। কৃষি সচিবকে বলেছি, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যাবিনেট সচিবকে চিঠি লিখতে। এই রাজ্য কতবার ভাসবে?
আরও পড়ুন-অন্য এক ৩ অক্টোবর
মোদি-শাহকে তোপ
ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রথমত বলব বাংলাকে গুরুত্ব দিন। দ্বিতীয়ত টাকা দিন। তারপর বলব মাস্টার প্ল্যান করুন। প্রশ্ন করব, একের পর এক ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, কত টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন? ডিভিসি ঝাড়খণ্ড ভাসাবে, আর কেন্দ্র দর্শক হয়ে থাকবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করে বলেন, কথায় কথায় আপনি মানবাধিকার কমিশনকে পাঠান। কিন্তু ডিভিসি জল ছেড়ে বাংলা ভাসাল, ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন না কেন? আমফান-বুলবুলে কত টাকা দিয়েছেন? লোক পাঠিয়ে দেখুন পরিস্থিতি। এনডিআরএফ ও এসডিআরএফের টাকাও আসছে না। বারবার বাংলা কেন বঞ্চিত হবে?