প্রতিবেদন : ‘‘সরফারোশি কি তমান্না, আব হামারে দিল মে হ্যায়, দেখনা হ্যায় জোর কিতনা, বাজু-ই কাতিল মে হ্যায়।’’ এই লাইন তিনি যখন বলছেন, তখন গুরুদ্বারের ভিতরে বিস্মিত মুখগুলি তাঁর দিকে তাকিয়ে। খানিক বাদে তাঁরাও গলা মেলালেন। বুধবার বিকেলে।
আরও পড়ুন :শেষ হল “কল্পতরু” মমতার দুয়ারে সরকার, লক্ষ্মী ভাণ্ডারেই ২ কোটি আবেদন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যখন তিনি সন্ত কুটিয়া গুরুদ্বারের ভিতরে, তখন বাইরে উদ্বেলিত জনতা। সময় যত গড়িয়েছে, ঘরের মেয়েকে ঘিরে শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে আবেগের বাঁধ ভেঙেছে। স্বাধীনতার লড়াইয়ে পাঞ্জাবের বীর শহিদদের বারবার কুর্নিশ জানাই। তাঁদের ছাড়া এই লড়াই সহজ হত না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ কথা শেষ না হতেই উপস্থিত পাঞ্জাবিরা বলে উঠলেন, ‘যো বলে সো নিহাল, সৎ শ্রী আকাল’। নেত্রী বলছেন, স্বাধীনতার সময় থেকেই অটুট বাংলা-পাঞ্জাব সম্পর্ক। এই বন্ধন চিরকালের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন জাতীয় সংগীত লিখেছিলেন তখন শুরুই করেছেন পাঞ্জাব দিয়ে। গুরুদেব লিখেছেন ‘পাঞ্জাব, সিন্ধু, গুজরাট, মারাঠা, দ্রাবিড়, উৎকল, বঙ্গ’। শেষ করেছেন বাংলায় এসে। দিল্লিতে পাঞ্জাবের কৃষকরা যে আন্দোলন করছেন তার সঙ্গে তাঁদের দাবিদাওয়ার প্রতি তাঁর সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এই আন্দোলনের জন্য যতরকম সহযোগিতার প্রয়োজন তিনি করবেন। স্মৃতির স্মরণি বেয়ে বললেন, আন্দামানে দেখেছি, যেসব শহিদদের নাম ওখানে আছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই পাঞ্জাবি ও বাঙালি। বুধবার এক লহমায় মন জয় করলেন ঘরের মেয়ে। বাংলার বুকে কার্যত নেমে এল এক টুকরো পাঞ্জাব। ভবানীপুর ফিরে গেল তার সেই চেনা ‘মিনি ইন্ডিয়া’ তকমায়। সঙ্গে সঙ্গেই ফের আওয়াজ ‘যো বলে…’।
আরও পড়ুন :টাইম ম্যাগাজিনের প্রথম ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা
এদিন বিকেল চারটে নাগাদ তিনি গুরুদ্বারে আসেন। ভিতরে গিয়ে চাদর চড়ান।কিছুক্ষণ প্রার্থনাও করলেন। মহিলাদের উদ্দেশ্যে বললেন, আপনাদের দেখে ভালো লাগছে। আমিও আপনাদেরই একজন। এবার ঘিরে ধরে মুখ্যমন্ত্রীকে মহিলাদের পাল্টা অনুরোধ, মাঝেমধ্যেই আসতে হবে। প্রত্যুত্তরে ঘরের মেয়ে বলেন, আমার সঙ্গে এখানকার সম্পর্ক বহু বছরের। আমি ময়দানে আপনাদের গুরু নানকের যে শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান হয় সেখানেও সব সময় যাই। অভিষেকের স্ত্রীও একজন পাঞ্জাবী। আপনাদেরই সম্প্রদায়। ও প্রার্থনা করতে গুরুদ্বারে আসে। ছেলেমেয়েরাও এখন শিখছে। ওরা কালীঘাটেও যায় আবার দক্ষিণেশ্বরেও যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি গুরু নানক, আনন্দ সাহিব-সহ দিল্লিতে গুরুদ্বারে গিয়েছি। আমার একবার পাঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরে যাওয়ার খুব ইচ্ছে রয়েছে। আমি কুড়ি বছর আগে, দু’বার পাঞ্জাবে গিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরেছিলাম। আবারও যাবো। একথা বলেই, তিনি জানান, পাঞ্জাবীদের হালুয়া তাঁর খুব পছন্দের। ভাষাও তিনি বুঝতে পারেন। আগে পুরোটা বলতেও পারতেন এখন কিছুটা বলতে পারেন।
উপস্থিত শিখ সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলে উঠেন, ‘বহে গুরুজিকা খালসা, বহে গুরুজিকা ফতেহ’। তখন পরিবেশ একেবারে ঘরোয়া। কেউ জড়িয়ে ধরছেন। কেউ কথা বলছেন। কেউবা আবার নানা দাবি জানাচ্ছেন। হাসিমুখে সব আবদার মেটাচ্ছেন তিনি। এরপর বেরিয়ে আসতেই উদ্বেলিত জনতা তাঁকে একবার দেখতে চান। সকলকে প্রণাম করে এগিয়ে গেলেন নেত্রী। পিছনে তখনও জনতার গর্জন।