দেবনীল সাহা, গঙ্গাসাগর: সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের খরচে মুড়িগঙ্গার উপরে গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের কথা সোমবারই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আরও তিন নয়া সেতুর উদ্বোধন করলেন তিনি। মঙ্গলবার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে মণি, পিয়ালী এবং সুন্দরিকা-দ্বারিকা নদীর উপরে তিনটি কংক্রিটের সেতুর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও এদিন দুপুরে সাগর-সফর শেষে কলকাতার উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার আগে সাগরদ্বীপের হেলিপ্যাড গ্রাউন্ড থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য মোট ৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। যার সর্বমোট খরচ ১৫৩ কোটি টাকা। এছাড়াও ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯টি প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন তিনি। এর ফলে উপকৃত হবেন প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ। একইসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela) নিয়ে প্রশাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার কথা।
আগামী বৃহস্পতিবার বাবুঘাট থেকে গঙ্গাসাগর মেলার (Gangasagar Mela) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে দু-দিনের সাগর-সফরে এসে মেলা নিয়ে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা খতিয়ে দেখলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মঙ্গলবার কলকাতায় ফেরার আগে সাগরমেলার গোটা ব্যবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে মেলা নিয়ে যাতে কোনওরকম নেগেটিভ ন্যারেটিভ না ছড়ানো হয়, সেই ব্যাপারেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিলেন পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীকে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে উসকানি ছড়ানো হতে পারে তাই সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। গঙ্গাসাগর মেলা সারা বিশ্বের কাছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই মেলায় যাতে কোনওরকম নেগেটিভ ন্যারেটিভ না হয় এটা সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন-BGBS-এর প্রস্তুতির অগ্রগতি দেখতে আগামিকাল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী
সাগরমেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কাকদ্বীপ লট-৮-এ একটি নতুন স্থায়ী জেটি গড়ে তোলা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের জন্য ২২৫০টি সরকারি বাস, ২৫০টি বেসরকারি বাস, ৯টি বার্জ, ৩২টি ভেসেল, ১০০টি লঞ্চ, ২১টি জেটি ব্যবহার করা হবে। বার্জ, ভেসেল ও লঞ্চে ফগলাইট এবং স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। সুলভ মূল্যে কলকাতা-গঙ্গাসাগর হেলিকপ্টার পরিষেবাও থাকছে। পাশাপাশি, গঙ্গায় ড্রেজিং করে গভীরতা বাড়ানো হয়েছে। ফলে দিনের ২০ ঘণ্টাই লঞ্চ, ভেসেল চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আরও সংযোজন, যে-কোনও দুর্ঘটনা ঠেকাতে বা দুর্ঘটনার পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৫০০ জন সিভিল ডিফেন্স ও অন্যান্য ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন দুই কোস্টাল থানা।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য সাগরের আশেপাশের হাসপাতালগুলিতে শুধু মেলার জন্যই ৫১৫টি বেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক্স-সহ আইসিইউর ব্যবস্থাও থাকবে। মেলা উপলক্ষে ১০০টি অ্যাম্বুল্যান্স, ৪টি ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স, ১টি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। মেলাকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশেষ পরিবেশবান্ধব ব্যাগেরও। পুণ্যার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা-সহ সমস্ত বিষয় দেখার জন্য ১০ জন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।