জননেত্রী ফের রাজপথে, বাংলা-বিদ্বেষীরা হুঁশিয়ার

বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলা ও বাঙালির হেনস্থা। বাঙালি অস্মিতা রক্ষায় রাজপথে তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দিল্লির ঠগি ও বর্গিদের ঠেকাতে আজ সব বাঙালির পথে নামার দিন। দ্রোহ-লগ্নে প্রতিবাদে ফেটে পড়ার দিন। এখনও যদি চুপ করে থাকি, তবে নিশ্চিত বাঙালি অস্মিতার বিসর্জন। লিখছেন পার্থসারথি গুহ

Must read

আমি বাংলায় গান গাই। আমি বাংলার গান গাই। / আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই। —সদ্য প্রয়াত হয়েছেন বিশিষ্ট মুক্তমনা গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়। অন্তিম সময়ে দূরদর্শী মানুষটি হয়তো সেই কাউন্টডাউন শুনতে পেয়েছিলেন। অমৃতপথগামী হওয়ার মাত্র ক’দিন আগে হাসপাতালে দেখতে আসা মুখ্যমন্ত্রীকে উদাত্ত কণ্ঠে বাংলার এই গান শুনিয়েছিলেন তিনি।
এভাবেই কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী, কোকিলকণ্ঠী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থেকে সন্ত মাদার টেরেজার মতো অসংখ্য স্নেহভরা আশীর্বাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর বারংবার বর্ষিত হয়েছে।

আরও পড়ুন-২০২৮ অলিম্পিকে ক্রিকেট শুরু ১২ জুলাই

বাংলার মনীষীরা যোগ্য উত্তরাধিকারী বাছতে কালবিলম্ব করেননি। প্রশ্রয় ও স্নেহাশিসের মধ্যে বাংলা ও বাঙালির উত্তরাধিকারের ব্যাটন তুলে দিয়েছেন মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। সেই গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দিল্লির দৈত্যদের মোকাবিলায় সদা তৎপর তিনি। ঠগি বা বর্গিদের আমরা চোখে দেখিনি। কিন্তু তাদের ভয়াবহ ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল। দিল্লির নব্য-ঠগি-বর্গিদের স্বৈরাচার যখন দেশ জুড়ে ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে ঠিক তখনই প্রবল বাঙালি-বিরোধী বিজেপির মুখোশ টেনে খুলতে ফের রাজপথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেশ জুড়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে যেভাবে বাঙালির ওপর নির্মম অত্যাচার নেমে এসেছে, বাংলায় কথা বলার জন্য যে পৈশাচিক আঘাত পদে পদে বাঙালিকে ক্ষতবিক্ষত করছে তার প্রতিবাদে আজ বুধবার কলকাতার রাজপথে নামছেন বঙ্গজননী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মহামিছিলে তাঁর সেনাপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সমানতালে পা মেলাবেন। বাঙালির অস্মিতা রক্ষার লড়াইয়ে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় মিছিল সংগঠিত হবে। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে হয়তো রাজ্যের আন্দোলন। কিন্তু এর তর্জন-গর্জন ধ্বনিত হবে দিল্লি হয়ে দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায়। হ্যাঁ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মাতৃসমা দিদি যখন পথে নামেন আকাশবাতাস এভাবেই মুখরিত হয়।
এইমুহূর্তে সারা ভারত জুড়ে গৈরিক দখলদারদের ওয়ান অ্যান্ড ওনলি টার্গেট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। বিধানসভা ভোটের আগে বিহারকে ভায়া করে ঘুরিয়ে এনআরসি লাগু করার যে অপচেষ্টা চলছে তা কিন্তু হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বলা চলে বিহারকে গিনিপিগ বানিয়ে টেস্ট স্যাম্পেল সংগ্রহ করে বাংলার ওপর সেই ফর্মুলা প্রয়োগ করবে বিজেপি। বিহারে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের বকলমে বিজেপির এই নোংরামোর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন প্রবীণ আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব ও তাঁর পুত্র তেজস্বী। অল্প সময়ের মধ্যে যেভাবে ৩৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে তাতে অশনিসঙ্কেত দেখা দিয়েছে। এদের অনেককে বিদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও মারাত্মক। যার তীব্র বিরোধিতা করছে বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য হার নিশ্চিত জেনে বিরোধী ভোটারদের নাম এভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এমনকী সুপ্রিম কোর্টও স্পষ্ট জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের কোনও এক্তিয়ার নেই নাগরিকত্ব বাতিল করার।

আরও পড়ুন-জনপ্রিয় টেলি-অভিনেত্রী বর্ধমানের রাস্তায় ভবঘুরে

বাংলাতেও কিছুদিন আগে ভোটার তালিকায় ভারতীয় জনতা পার্টির জুমলাবাজদের ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ করার অপচেষ্টা হাতেনাতে ধরা পড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল সাংসদদের সক্রিয় অবস্থানে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত বাধ্য হয়েছিল তা সংশোধনে। কিন্তু ভবি কি তাতে ভোলে? ফের ঘুরপথে অসভ্যতা শুরু হয়েছে। অন্যায়ভাবে কোচবিহারের বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে হঠাৎ করে অসম থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে তিনি নাকি অসমের বাসিন্দা। তুফানগঞ্জের আরতি ঘোষের অসমে বিয়ে হওয়ার পর একইভাবে এনআরসি’র গেরোয় তার ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে তিনি বাপের বাড়ি তুফানগঞ্জ অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন। প্রবল বাঙালি বিরোধিতার বাতাবরণে মুখ খুলে কার্যত ঘৃতাহুতি ঢেলেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেছেন, মাতৃভাষা বাংলা লিখলেই নাকি ধরে নিতে হবে বাংলাদেশি! বস্তুত, বাঙালি বিদ্বেষের চরম সীমা লঙ্ঘনে অসমের পথে হাঁটছে অধুনা বিজেপি-শাসিত বাংলার আরেক পড়শি রাজ্য ওড়িশা। সেখানেও বাংলাদেশি তকমা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিককে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর পদক্ষেপে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠেছে হঠকারী ওড়িশা সরকার। দিল্লিতেও বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলার প্রতি বিদ্বেষ চরমে উঠেছে। দিল্লির অভিজাত বসন্তকুঞ্জের পিছনে পূতিগন্ধময় আরও এক কুঞ্জ জয় হিন্দ কলোনিতে কোনওরকমে মাথাগুঁজে থাকেন পশ্চিমবাংলার শ্রমিকরা। বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিয়ে তাঁদের ওপর শুরু হয়েছে ভয়াবহ গেরুয়া-নির্যাতন। ভাতে মারার চেষ্টা হচ্ছে হতদরিদ্র মানুষদের। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে ২৪ ঘণ্টার অবস্থানে বসেছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, দোলা সেন, সাকেত গোখলে ও সাগরিকা ঘোষরা। বিজেপি-শাসিত মহারাষ্ট্রেও বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে দেবেন্দ্র ফড়েনবিশের বিজেপি সরকার।
সত্যি কথা বলতে, সোজা পথে কিছুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বাংলা দখল করতে পারছে না গৈরিক গোয়েবলসরা। বাংলায় এসে বারবার সেই অশ্বমেধের ঘোড়া ধরা পড়ছে। আটকে যাচ্ছে যাবতীয় আস্ফালন। একের পর এক নির্বাচনে বাঙালি বিরোধী বিজেপির হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ উদারমনা পশ্চিমবঙ্গবাসী৷
বস্তুত, ২০১৪-তে প্রোপাগান্ডার প্যাকেজে দিল্লি দখলের পর থেকেই নানা অগণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে বর্গির দল। পঙ্গপালের মতো শস্যশ্যামলা সবুজ বাংলায় আগ্রাসন চালাচ্ছে। কখনও মিথ্যে অপবাদে এজেন্সি লেলিয়ে আবার কখনও প্রাপ্য অধিকার থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করে। সেজন্য একাধিকার আদালতের ভৎর্সনা শুনেও চোখ খোলেনি কেন্দ্রের। পুরো যেন গন্ডারের চামড়া। একটাই লক্ষ্য যেনতেনমূল্যে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে তছনছ করে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের বকলমে পেয়ারের শিল্পপতিদের হাতে অবাধ লুণ্ঠনের অধিকার তুলে দেওয়া।
এমতাবস্থায়, বাঙালি-বিদ্বেষী মহিষাসুর বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্গার প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-আবেদনের মেয়াদ বাড়ল

অসুর বিনাশকালে দেবতারা নানা অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন দেবীর হাতে। বাংলাকে ঋদ্ধ করা মনীষীরাও যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বাংলা ভাষার চাবিকাঠি ও রক্ষাকবচের উত্তরাধিকার প্রদান করেছেন। দেশপ্রেম, সাহিত্য-সংস্কৃতি, প্রজ্ঞা, সততার ওপর ভর করে দিল্লির দানবদের মোকাবিলায় নেমেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। স্বাধীনতার লড়াইয়ে ব্রিটিশের তাঁবেদারি করা নির্লজ্জ বিজেপি নিশ্চিতভাবে গোহারান হারবে এখানে।
যতই বাংলা দখলের হুঙ্কার দিক না কেন, তা গাঁজাখুরি দিবাস্বপ্নে পর্যবসিত হতে বাধ্য। বাম জমানার সুদীর্ঘ ৩৪ বছরের ক্ষয়ক্ষতি সামলে অসম্ভব মনের জোর, অমানুষিক পরিশ্রম এবং প্রত্যয়ে ভর করে বাংলা জুড়ে উন্নয়নের জোয়ার এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প আজ শুধু এদেশে নয় তামাম বিশ্বে বন্দিত। গর্বের সেই বাংলায় বিজেপির ঠাঁই হবে আঁস্তাকুড়ে।

Latest article