প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দীপাবলির আলো নিভে বাংলায় অন্ধকার নেমে এল এসএসকেএম এ বললেন মুখ্যমন্ত্রী, রবীন্দ্রসদন থেকে বিধানসভা হয়ে মরদেহ যাবে এভারগ্রীণ ক্লাব, বাড়ি শিক্রবার বিকেলে শেষকৃত্য
দীপাবলির আলো নিভিয়ে প্রয়াত পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন-সহ রাজ্যের চারটি দফতরের মন্ত্রী বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। সুব্র মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, দীপাবলির রাতে অন্ধকার নেমে এল। আমার প্রিয় মানুষকে হারালাম। শুক্রবার সকালে যার হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার কথা ছিল সে এভাবে চলে গেল। আমি মরদেহের সঙ্গে যাব না কোথাও। সুব্রতদাকে ওভাবে আমি দেখতে পারবো না। গলা বুজে এল মুখ্যমন্ত্রীর।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রয়াত সুব্রতবাবুর মরদেহ রাখা হল পিস ওয়ার্ল্ডে। শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে রবীন্দ্রসদনে মরদেহ রাখা থাকবে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। সেখান থেকে দুপুর ২ টোয় বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে অধ্যক্ষ্য বিমান বন্দোপাধ্যায় সহ অন্যান্য বিধায়ক মন্ত্রীরা শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সুব্রত মুখার্জির প্রাণের একডালিয়া এভারগ্রীণ ক্লাবে। এরপর বড়ি ঘুরে মরূেহ নিয়ে যাওয়া হবে শেষকৃত্যের জন্য।
আরও পড়ুন-আমেরিকাতেও ব্রাত্য পেগাসাস
বাড়ির কালীপুজোর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী খবর পান সুব্রত মুখোপাধ্যায় আর নেই। কোনওমতে মায়ের পুজা – হোম শেষ করেই ছুটে যান এসএসকেএম হাসপাতালে। সঙ্গে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সহ বাকিরা। এসএসকেএমর উডবার্ন ওয়ার্ডে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ঘরে তখন রয়েছেন ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়। প্রয়াত সুব্রতবাবুর স্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে সান্ত্বনা দেন। তাঁকে বুঝিয়ে নিজে গাড়িতে তুলে বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করে দেন।
২৪ অক্টোবর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে এসএসকেএমে ভর্তি হন তিনি। শ্বাসকষ্ট বাড়ায় উডবার্ন ওয়ার্ডের আইসিসিইউ-তে রাখা হয়। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন তাঁকে সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে কালীপুজোর রাত ৯ টা ২২ মিনিটে মৃত্যু হল প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। শুক্রবার শেষকৃত্য হবে তাঁর। সকাল দশটা থেকে দুটো পর্যন্ত রবীন্দ্রসদনে তাঁর দেহ শায়িত থাকবে। দুটোর পরে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর বাড়িতে।
ছাত্র পরিষদ থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি। ছাত্র পরিষদের সভাপতিও ছিলেন তিনি। ১৯৭২-এ মাত্র ২৬ বছর বয়সে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হন তিনি। শ্রমিক সংগঠনের নেতা ছিলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।
কংগ্রেস ছেড়ে ১৯৯৯ এ তৃণমূলে যোগ দেন। ২০০০ থেকে ২০০৫ কলকাতা পুরসভার মেয়র ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে নিজের দল গড়ে পুরভোটে লড়েন সুব্রত। ‘ঘড়ি’ চিহ্নে লড়ে তিনি জয়ী হন। কিন্তু তাঁর দল হেরে যায়। পরে কংগ্রেসে ফিরে যান। তাঁকে কার্যনির্বাহী সভাপতি করে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন-সন্ত্রাসের মধ্যেও লড়াই জারি থাকবে ত্রিপুরায় : সুবল
২০০৯ এ ফের তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ২০১১-এ রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন সুব্রত।
শুধু রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক ব্যক্তি হিসেবেই নয়, এক বর্ণময় চরিত্র হিসেবে সবার মনে থেকে যাবেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আজীবন বাম-বিরোধী রাজনীতি করলেও বাম নেতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। রাজনীতির বাইরে দুর্গাপুজো একটা প্যাশন ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। একডালিয়া এভারগ্রিন পুজো তাঁকে ছাড়া ভাবাই যেত না। অভিনয়ও করেছেন তিনি। মুনমুন সেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলা সিরিয়াল করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কালীপুজোর রাতে চলে গেলেন বঙ্গরাজনীতির অন্যতম রঙিন চরিত্র মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।