প্রতিবেদন : বিজেপি বাংলা থেকে সব লুটেপুটে নিয়ে যাচ্ছে আর বাংলার সব কিছু বন্ধ করে দিচ্ছে। জিতলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে বলেছে। এত বড় সাহস! তোমরা মা লক্ষ্মীর অধিকার কেড়ে নিতে চাইছ? মানুষই তোমাদের উপযুক্ত জবাব দেবে। বৃহস্পতিবার উত্তরের রায়গঞ্জ ও বালুরঘাটের জোড়া জনসভা থেকে বিজেপিকে ইঞ্চিতে-ইঞ্চিতে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে বন্ধ সরকার বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি বাংলার আরও এক গদ্দার বলে নিশানা করলেন মিঠুন চক্রবর্তীকে। একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে বিজেপির পরিকল্পিত চক্রান্ত বলে তোপ দেগে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে বিজেপি বিধায়কের গ্রেফতারি দাবি করলেন, ডিআইজিকে বদলির জন্য জবাবদিহি চাইলেন কমিশনের।
আরও পড়ুন-আজ প্রথম দফার ভোট, আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল তিনে তিন. দেশে ১০২ কেন্দ্রে নির্বাচন
মায়ের অধিকার : লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে বিজেপিকে কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে? কে হে হরিদাস? সাহস থাকলে বন্ধ করে দেখাও। মায়ের আঁচলের কত দাম জানো? তোমরা মা লক্ষ্মীর অধিকার কাড়তে এসেছ? লজ্জা করে না? তাঁর সাফ কথা, কোনও প্রকল্প বন্ধ হবে না, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস। বিজেপিকে বিঁধে তিনি বলেন, মেয়েদের সম্মান জানাও। বিলকিস আজও কেঁদে কেঁদে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাথরাসের ঘটনার কোনও বিচার হয়েছে? হকির টিমের কোনও বিচার হয়েছে?
লুটেরার দল : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা যা কথা দিয়েছি, সব করে দিয়েছি। আমরা আপনাদের পাহারাদার, বিজেপির মতো জমিদার নই। বিজেপি একটা লুটেরার দল। বাংলা থেকে সব লুটেপুটে নিয়ে যায়, আর বাংলাকে কিছুই দেয় না। দশ বছরে কিছুই করেনি বাংলার জন্য। উল্টে সব বন্ধ করে দিচ্ছে। বাংলার গরিব খেটে-খাওয়া মানুষের সঙ্গেও বঞ্চনা করছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
বন্ধ সরকার : বিজেপি ও মোদি-শাহদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে তিনি বলেন, সব চোর-ডাকাতকে দলে নিয়ে ‘ওয়াশিং মেশিন ভাজপা’য় সফেদ করে নিচ্ছ তোমরা। আর তাদের কথায় বাংলার প্রাপ্য বন্ধ করে দিচ্ছ। তোমাদের সরকার একটা ‘বন্ধ সরকার’। দলনেত্রীর কথায়, ওরা মানুষের প্রাপ্য সব টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই ওরা হল ‘বন্ধ সরকার’।
উল্টে দেবে : একযোগে মোদি-শাহদের নিশানা করে দলনেত্রী বলেন, এত বড় সাহস! বলছে, বেছে বেছে সবাইকে জেলে ভরবে! আরে বেছে বেছে জনতা তোমাকে ভোট দেবে না। হিম্মত থাকলে কাজ করে ভোট নাও। ১০ বছরে কী কাজ করেছ, তার রেকর্ড দেখাও। আবার একজন বলছে, জনতাকে উল্টো ঝুলিয়ে সিধে করে দেবে? আরে জনতা তোমাদের সরকারটাই উল্টে দেবে। ভোট-পাখি হয়ে আর একজন আসছে পাহাড়ে ভাষণ দিতে। তাকে বলছি, নিজের রাজ্যটাকে আগে সামলাও। উত্তরপ্রদেশে তো কেউ কথাই বলতে পারে না।
আরও পড়ুন-বন্ড না করে চেক বা আরটিজিএস করা যেত, ১০০ কোটির অর্ধেকের বেশি গিয়েছে বিজেপির অ্যাকাউন্টে
সার্ভেতে বিশ্বাস নয় : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ফের স্পষ্ট জানান, বাংলায় বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল একা লড়ছে। সিপিএম-কংগ্রেস এখানে বিজেপির হয়ে কাজ করে। বাংলায় বিজেপির কোনও জায়গা নেই। ভোট নিয়ে সার্ভে রিপোর্ট বিশ্বাস করবেন না। বিজেপির টাকায় ওই সার্ভে হয়। ওরা বিধানসভায় বলেছিল ২০০ পার করবে। ৭৭-এই থেমে গিয়েছিল। এবার বলছে ৪০০ পার করবে। আমি বলছি ২০০-ও পার হবে না।
উন্নয়নের খতিয়ান : বিজেপি এই ১০ বছরে বাংলার জন্য কোনও কাজ করেনি বলে আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা তো পুরনো ট্রেনকে রং করে বলছেন, সবথেকে বেশি গতি। দুরন্ত কোথায় গেল? রাজ্য জমি দেয়, অর্ধেক টাকা দেয়। ওরা ২৫ শতাংশ দেয় আর বলে, ঘরে ঘরে আমরা জল দিয়েছি। হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নদীর ওপর সেতু, মহিলা পুলিশ স্টেশন-সহ জেলার সব উন্নয়ন আমরা করেছি। নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে, ইসলামপুর থেকে দক্ষিণবঙ্গে এখন মাত্র ৬ ঘণ্টা লাগবে। চা-বাগানে পাট্টা দিয়েছি, ঘরের টাকাও আমরা দেব। ৫৯টি চা-বাগান খুলেছি, বিজেপি কিছু করেছে?
খেলা হবে : এদিন প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘কী খেলা হবে? নাকি ভুলেই গেছ! আপনারা যদি চান সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থাকুক, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, দুয়ারে রেশন ইত্যাদি, তবে ভোটটা তৃণমূলেই আসবে। আর কোথাও নয়। বিজেপি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেবে, ওদের আর ভোট দেবেন না। ওরা সব বন্ধ করে দেবে, অধিকার-পরিচয় সব কেড়ে নেবে। সাবধান করলেন জননেত্রী।