শিলিগুড়ি : বৃষ্টিতে ভিজে কলকাতায় ২০০-র বেশি দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করতে গিয়ে বেশ ঠান্ডা লেগেছে। সেই থেকেই শরীর ঠিক নেই। এই শরীরেই তিনি হাজির প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গে। সফরের প্রথম দিন শিলিগুড়িতে পা দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের বাঘাযতীন পার্কে পুলিশ কমিশনারেটের বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠানে। চারদিনের সফর। তার মাঝেই শিলিগুড়ি দেখল এক অন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যিনি কখনও আবেগে স্মৃতিচারণ করছেন, কখনও কঠোর প্রশাসক, যিনি যে কোনও পরিস্থিতিতে বাংলা বিভাজনের চক্রান্ত রুখতে বদ্ধপরিকর। আবার কখনও জাতীয় নেত্রীর সুরে বলছেন— বাংলাই মডেল।
আরও পড়ুন-রিখটার স্কেলে ৬.৫, ভোররাতে প্রবল কম্পনে আতঙ্ক তাইওয়ানে
ডুবলেন স্মৃতিচারণে
অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাঁর নিজের কথায় ও সুরে এবছরের পুজোর গান গাইলেন ইন্দ্রনীল সেন। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের গলায় রেকর্ড করা নিজেরই গান বাজানো হল। মঞ্চে বসে শুনছেন। সঙ্গে আমজনতাও। আবেগের রেশ ধরেই বললেন, সারাজীবন কত হোঁচট খেয়ে তবে এই জায়গায় পৌঁছেছি। উপস্থিত জনতার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন ভবানীপুর নির্বাচনের আগের দিন ইন্দ্রনীল সেন ও নচিকেতার সঙ্গে বসে তাঁর পুজোর গান তৈরির নেপথ্য কাহিনি। বললেন, ১২-১৩ বছর বয়েস থেকে রাজনীতির ময়দানে চলার পথে শরীরে কতশত অত্যাচার-হামলা হয়েছে। দেহে একাধিকবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আমি এখন জীবন্ত লাশ। রাজনীতিতে লড়াই করতে করতেই লিখে ফেলেছি ১০৫টি বই। আছে উর্দু শায়েরির বইও। রয়েছে ৮০০ কবিতা। ওটা ১০০০ করতে চাই।
প্রসঙ্গ উত্তরবঙ্গ
তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম উত্তরবঙ্গ সফর। আগামী পাঁচদিনে একাধিক প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে। বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গবাসীর উদ্দেশে তাঁর বার্তা, এখানে কোনওরকম ভাগাভাগি করবেন না। কাউকে করতেও দেবেন না। সকলে একসঙ্গে থাকবেন। এতে শান্তি আসে। মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে হবে। সংস্কৃতির সমাজ গড়ে তুলতে হবে। মানুষ ভাল থাকবে।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধি
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, জিনিসপত্রের দাম রোজ বাড়ছে। গ্যাসের দাম প্রায় ৯০০ টাকার উপরে। পেট্রোল-ডিজেল সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। বাড়ছে তো বাড়ছেই। কিন্তু কারও মুখে কোনও কথা নেই। কেন্দ্রের মন্ত্রী-নেতাদের কোনও কথাই নেই। কিন্তু আমরা মানুষের স্বার্থে প্রতিবাদ করব।
ভ্যাকসিন রাজনীতি
ভ্যাকসিনে বাংলা এক নম্বরে। এখনও পর্যন্ত আমরা ৭ কোটি টিকা দিতে পেরেছি। দরকার ১৪ কোটি। দুটি ডোজ সম্পূর্ণ না হলে তাকে ১০০ শতাংশ বলা যায় না। ভ্যাকসিন নিয়ে কেন্দ্র জুমলাবাজি করছে। পুরো ব্যপারটাই হ-য-ব-র-ল। সারা ভারতে ৩৫ কোটি মানুষ এখনও একটা ডোজও পাননি। বাচ্চাদের ধরলে সংখ্যাটা প্রায় ৭৫ কোটি। মোদিবাবু শুধু ছবি লাগিয়ে দিচ্ছেন ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেটে। এবার তবে ডেথ সার্টিফিকেটেও ছবি দিন। আসলে বারবার বাংলাকে বঞ্চনা করাই ওঁদের উদ্দেশ্য। মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওঁদের পছন্দ করছেন না। এর মাঝেও বাংলা ব্যতিক্রমী হয়ে উঠছে। আমি বাংলার মানুষকে বলব, আগামী দুটো মাস সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। আর সরকারি বিধিনিষেধও মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোভিড মোকাবিলায় দেশে বাংলাই মডেল।
প্রসঙ্গ বিএসএফ
বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের সীমান্ত রয়েছে রাজ্যে। শিলিগুড়ি, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা— এইসব জায়গায় বর্ডার রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ ১৫ কিমি পর্যন্ত যেতে পারত। হঠাৎ বলছে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত তারা ঘুরে বেড়াতে পারবে। মানেটা কী? আমাদের সঙ্গে সব প্রতিবেশীরই সম্পর্ক ভাল। এমনকী উত্তর-পূর্বেরও। রাজনৈতিক কারণে দাঙ্গা লাগানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। কোনও এজেন্সির বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু এভাবে রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় ঢুকে পড়া কতখানি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সঠিক, মানুষ বিচার করবেন।
আরও পড়ুন-এনসিবির বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ঘুষের বিস্ফোরক অভিযোগ
সোমবারের কর্মসূচি
সোমবার বেলা ১২টা উত্তরকন্যায় জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিধায়ক এবং জনপ্রতিনিধিদের। ভয়াবহ কোভিডের মধ্যে ৮ দফা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন উন্নয়নের গতি থমকে ছিল। কাজ শুরু করা গেলেও এইসময়ে ঘটল ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এবার নতুন করে আবার উত্তরবঙ্গকে গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে পাহাড়ের অবস্থা শোচনীয়। বৃষ্টি-ধসে বিধ্বস্ত পাহাড়। এই চারদিনের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী খতিয়ে দেখবেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। সেই অনুযায়ী নেবেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা। চারদিনের সফর শেষে ২৭ তারিখ কলকাতায় ফিরবেন। ২৮ অক্টোবর রওনা দেবেন গোয়ার উদ্দেশে।