মণীশ কীর্তনিয়া, পুরী: বাংলা ও ওড়িশার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কতটা মজবুত এবং আগামী দিনে যে এই বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে ওড়িশা সফরের দ্বিতীয় দিনেই তা বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলে পুরীর নির্মাণ নিবাস থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান পুরী সংলগ্ন বালিয়াপণ্ডাতে। ঘুরে দেখেন প্রস্তাবিত বঙ্গভবনের জায়গা। সেখানে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের নির্দেশে উপস্থিত ছিলেন ওড়িশার মুখ্যসচিব, পুরীর জেলাশাসক ও ওড়িশা সরকারের ভূমি ও রাজস্ব দফতরের অফিসারেরা। দীর্ঘক্ষণ গোটা জায়গা ঘুরে দেখে এখানকার বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নেন। এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে আসেন জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিতে। এখানেও তাঁকে ঘিরে ছিল উচ্ছ্বাসের ছবি। এদিন মা-মাটি-মানুষের নামে সঙ্কল্প করে পুজো দেন তিনি। পুজো শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, দেশের-বাংলার-ওড়িশার কল্যাণ হোক। সকলে ভাল থাকুক। এদিন মন্দির চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীর আনা ধ্বজা লাগানো হয়। পুরনো ধ্বজাটি দয়িতাপতিরা তাঁকে উপহার দেন। পুরীতে প্রস্তাবিত বঙ্গভবনের জমি নিয়ে আজ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Naveen patnaik- Mamata Banerjee) কথা হবে। এছাড়া ২০২৪-এর আগে জাতীয় পরিসরে বিজেপি-বিরোধী ও অকংগ্রেসি দলগুলি কোন পথে চলবে তা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: রাজধানীজুড়ে মোদিবিরোধী পোস্টার
পুরীর জমি পরিদর্শনের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Naveen patnaik- Mamata Banerjee) বলেন, সেরা লোকেশনে হবে রাজ্যের এই গেস্ট হাউস। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আশা, এই জায়গা থেকেই গড়ে উঠবে ‘নতুন পুরী’।
তাঁর সংযোজন, বৃহস্পতিবার ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে আলোচনার সময় এই বিষয় নিয়ে কথা বলবেন তিনি। একইসঙ্গে তাঁকে ওড়িশার ‘রাজ্য অতিথি’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, পুরী বাংলার মানুষের আরেকটি ঘর। এখানে সারা বছর কমপক্ষে চার থেকে পাঁচবার বাঙালিরা আসেন। রথযাত্রা, উল্টোরথ, স্নানযাত্রা-সহ বিভিন্ন সময় পুরীতে ভিড় জমান বাঙালিরা। কিন্তু সেই সময় স্থান সঙ্কুলন হয় না। হোটেলগুলিতে ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই’ পরিস্থিতি। এসবের কথা ভেবেই এই গেস্ট হাউস তৈরির পরিকল্পনা করছি আমরা। জায়গা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গেস্ট হাউসের প্রস্তাবিত জমির খুব কাছে বিমানবন্দর। রয়েছে ব্রিজ। পুরীর অন্যতম সেরা জায়গা এটি। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ নিতান্ত সৌজন্যমূলক। আগেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। সেই সময় তাঁর আসা হয়নি। সেই কারণেই এবার এসেছেন। প্রস্তাবিত জমিটি ৯৯ বছরের লিজে নেওয়া হবে। বাংলার আর্কিটেক্টরা জমিটিতে তাঁদের মতো করে দেখে পরিকল্পনা করবেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন শুনে বাংলা থেকে পুরী ঘুরতে আসা প্রচুর মানুষ ভিড় করেন মন্দির চত্বরে। জগন্নাথের পুজোর পর বিমলা মায়ের মন্দির, লক্ষ্মী মন্দির-সহ সব ক’টি মন্দির ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন প্রায় দুশো ব্রাহ্মণ ভোজনও করান তিনি। মন্দিরের তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি বিশাল জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার ছবি উপহার দেওয়া হয়। রামকৃষ্ণ দাস মহাপাত্র-সহ অন্যান্য দয়িতাপতিরা মুখ্যমন্ত্রীকে পুজো করান।