জনতাই মমতার ক্ষমতা, এটাই ওরা বুঝছে না

কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই চালাচ্ছেন জননেত্রী। অযুত অপপ্রচার, কুৎসা, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র তাঁর পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে, কিন্তু প্রতিহত করতে পারেনি অগ্রগমনের জয়কেতন। তিমির বিদারী উদার অভ্যুদয়ের মহানায়িকা তিনি। লিখছেন অধ্যাপিকা ড. নম্রতা কোঠারি

Must read

২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের এক উজ্জ্বল মুখ হিসেবে উঠে আসেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একমাত্র মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করতে সক্ষম হয়। এই নির্বাচনে মোদি ম্যাজিক ফিকে হয়ে যায় মমতার জনপ্রিয়তায়। মমতার নানান জনপ্রিয় প্রকল্প, তাঁর ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কাছে বিজেপির শত ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ভারতে এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি সর্বভারতীয় আঞ্চলিক প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন বা সুসম্পর্ক বজায় আছে। এমনকী তাঁর কট্টর রাজনৈতিক বিরোধীর সঙ্গেও সৌজন্যবোধ, মানবিকতা দেখানোর মতো অতি দুর্লভ গুণ একমাত্র তাঁর মধ্যেই দেখা যায়। শুরু থেকেই তিনি তৃণমূল স্তরের মানুষদের মাঝে গিয়ে কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। ধান চারা রোপণের কাজ বা গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মোটর বাইকে পৌছে যাওয়া বা গ্রাম-বাংলার লোক উৎসবে মানুষের মধ্যে উৎসবে মিশে যাওয়া এ-কাজ একমাত্র তিনিই ধারাবাহিকভাবে করে দেখাতে পারেন।

রাজনৈতিক জীবনের শীর্ষে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আজ জাতীয় রাজনীতির অন্যতম এক চালিকাশক্তি। বিখ্যাত ‘টাইম’ পত্রিকার বিচারে বিশ্বে প্রভাবশালী একশো ব্যক্তিত্বের তালিকায় তাঁর নাম যুক্ত হওয়া বাঙালিকে গর্বিত করে। দেশের অন্যান্য মহিলা মুখ্যমন্ত্রী বা রাজনীতিবিদদের মধ্যে তিনি অনন্য। তাঁর অদমনীয় জেদ, প্রখর বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ক্ষমতাই তাঁকে করে তুলেছে প্রকৃতই এক জননেত্রী। যে মানুষ ছিল দিনের পর দিন বঞ্চিত, শোষিত, নিপীড়িত, তাদের নিয়ে মমতার বিকল্প রাজনৈতিক আন্দোলন এক নূতন যুগের সূচনা করেছে। ৩৪ বছরের বাম অপশাসন থেকে রাজ্যের মানুষকে আলোর জীবনে আনতে মমতার নেতৃত্বে যেমন আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে তেমনি আজ আরও বড় বিপদ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিজেপির রাজনীতির বিরুদ্ধে মমতাই দেশকে দেখাচ্ছেন এক বিকল্প সম্প্রীতি, উন্নতির পথ। বন্ধ সংস্কৃতির শিকড়কে বাংলা থেকে উপড়ে ফেলে মমতাই বাংলার মানুষকে উপহার দিয়েছে এক সুস্থিতির-শান্তি-সমৃদ্ধির বাংলা। হিন্দু-মুসলিমে বিভেদ ভুলে আজ দিল্লির বহিরাগত শক্তি চাইছে বাংলার শান্তি-সম্প্রীতি-ঐক্যকে বিনষ্ট করতে। আর জনতার নয়নের মণি মমতা চাইছেন সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে, মানুষে-মানুষে মিলন উৎসব করে দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা, সম্প্রীতি তথা গরিব মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের জীবনকে সচল রাখতে।

শুধু রাজনৈতিক ভাবেই নয়, প্রশাসনিক বুনটের মাধ্যমেও জনগণকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আজ রাজ্যে প্রায় একশোটিরও বেশি প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী, ঐক্যশ্রী, শিক্ষাশ্রী, বাংলা আবাস যোজনা, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী, গতিধারা, খাদ্যসাথী, কৃষকবন্ধু, সুফল বাংলা, শিশুসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, জয় জোহার ইত্যাদি কিছু জনপ্রিয় প্রকল্পের উদাহরণ। এসব প্রকল্পের মধ্যে একটা বড় অংশই মহিলাকেন্দ্রিক। সমাজে নারী নিপীড়ন, নারী বৈষম্য কমিয়ে আনতে এসব মহিলাকেন্দ্রিক প্রকল্প আজ দেশকে পথ দেখাচ্ছে। দেশের মহিলাদের অনুপ্ররণা মমতাই। দুর্বল, বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জীবনে আশার আলো মমতার সাহসী জীবন তিনি ‘নারীশক্তি’র প্রতীক। তাঁর লড়াইকে সম্মান জানিয়ে তিনি জনমানসে ‘বাংলার বাঘিনি’ বলে পরিচিত। দেশ-বিদেশের মানুষ তাঁকে আদর করে সম্বোধন করে ‘দিদি’ বলে। তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ হল, মানুষের তাঁর প্রতি এমন আবেগ।

আরও পড়ুন-আমি তো প্রশ্নের উত্তর দিতাম কিন্তু ওদের অন্য উদ্দেশ্য ছিল, ছ’পিসের অভব্যতা, আঁচড়ও কাটল না মুখ্যমন্ত্রীর সফরে

‘দুয়ারে সরকার’ অনুষ্ঠানে যে কোনও ক্যাম্পে গেলেই দেখা যাবে, মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের উৎসাহ বিভিন্ন জনকল্যাণ প্রকল্পকে ঘিরে। মমতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যেভাবে বিভিন্ন অংশের মানুষের মহামিলন মেলা তৈরি করে চলেছে তা সমস্ত বিরোধী চক্রান্ত নস্যাৎ করে রচনা করবে সাধারণ মানুষের ইতিহাস। বাম জমানায় যে অনুন্নয়নের গর্ত খোঁড়া হয়েছিল পরিবর্তনের স্লোগানে আসা মমতা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে সেই গর্ত ভরাটের কাজই করে চলেছেন। আজ নবজাতক কন্যাশিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিদ্যালয়ে মেয়েদের ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া ‍‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প বহুচর্চিত। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায় পুরুষের তুলনায় ৪% অতিরিক্ত মহিলা ভোট তৃণমূলের দখলে গেছে। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প ২.২ কোটির বেশি মহিলা পেয়ে থাকেন। যাতে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা (তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য ১২০০ টাকা) দেওয়া হয়।

গত বছর প্রায় ৫ লাখ উপভোক্তার বৃদ্ধি নিয়ে মোট ৫৪০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে যা এক কথায় ঐতিহাসিক। বিভিন্ন সরকারের আমলে কিছু কিছু প্রকল্প নেওয়া হত কিন্তু তার টাকা পেতে উপভোক্তাকে শাসকদলের কথা অনুযায়ী চলতে হত। মমতার সরকার দল-মত নির্বিশেষে সকলকেই প্রকল্পের আওতায় এনেছেন। আজ দিদির প্রকল্পকে নকল করে অন্যান্য রাজ্যে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলিও মহিলাদের সরাসরি অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যা তৃণমূল কংগ্রেসের নৈতিক জয়। কন্যাশ্রী প্রকল্পের অভূতপূর্ব সাফল্য দিদিকে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোকিত করেছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা একটি প্রকল্পকে কীভাবে সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম ভিত্তি করে তুলতে পারে, নারী ক্ষমতায়নকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অক্সফোর্ড বক্তৃতায় প্রমাণিত। মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে একটি বলিষ্ঠ প্রমাণ মহিলা সাংসদদের শতকরায় তৃণমূলই দেশের মধ্যে প্রথম। ৪২টি আসনের মধ্যে বিগত সাধারণ নির্বাচনে তৃণমূল ১২টি আসনে মহিলা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় যার মধ্যে ১০টি আসনেই জয়যুক্ত হয়। সভা-সমাবেশে ব্যাপক জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন সংগ্রাম জনগণ প্রত্যক্ষ করে ১০০ দিনের কাজের টাকা ও আবাস যোজনার টাকা বন্ধের বিরুদ্ধে তাঁর লাগাতার লড়াই আন্দোলনের মাধ্যমে। শত অপপ্রচার, কুৎসা, ষড়যন্ত্রের দ্বারা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মানুষের মনে তাঁর ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করতে পারেনি। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা রাজ্য দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক।

Latest article