প্রতিবেদন : যা বলেছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), তারই চিত্রনাট্য তৈরি হচ্ছে দেশ জুড়ে, বিশেষত রাজধানীতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) বেদম ভয় দেশের শাসককুলের। অখিলেশ থেকে স্ট্যালিন, হেমন্ত সোরেন থেকে শরদ পাওয়ার, সকলেই মানেন, তৃণমূলনেত্রীই দেশের যোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য বিরোধী নেত্রী। তাই মরিয়া বিজেপি। কী করছে? রাহুল গান্ধীকে বিরোধী মুখ সাজাতে নেমে পড়েছে ময়দানে। বিগত এক সপ্তাহ ধরে দিল্লিতে রাহুলকে ঘিরে সংসদ ও সংসদের বাইরে নাটকের যে চিত্রনাট্য তৈরি হচ্ছে, তা সস্তার বহুল প্রচারিত স্ক্রিপ্ট। যে স্ক্রিপ্টে মোদির বিজেপি ২০১৪ আর ২০১৯-এর ভোট বৈতরণী পেরিয়েছিল, তার রেপ্লিকা বানানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু ভুল হচ্ছে এখানেই, যতই তেল ঢালুক না কেন, ২০২৪-এ কিন্তু সেই রাধা আর নাচবে না।
দেশ জুড়ে রাজ্যে-রাজ্যে রিপোর্ট কী বলছে? সবচেয়ে সেটা ভাল জানে মোদির বিজেপি (BJP)। গত ভোটে বিজেপি যত আসন পেয়েছিল সে আসন এবার কমছে। ভীষণ কমছে। সেই কারণে কপালে ভাঁজ। এই তালিকায় পাঞ্জাব, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে। বাংলায় এবার আসন কমতে কমতে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সে নিয়ে চিন্তিত দিল্লির নেতৃত্ব। বিজেপি তার নিজস্ব অ্যাসেসমেন্টে বুঝতে পারছে একের পর এক জনবিরোধী নীতি গেরুয়া শিবির জনগণের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের দাম, পেট্রোল-ডিজেলের দাম, নোটবন্দি, জিএসটি, আদানি-কাণ্ডে শেয়ারে ব্যাপক ধস এবং জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি প্রান্তিক মানুষকে নাড়া দিয়ে গিয়েছে। বিজেপি অনুভব করছে তৃণমূল গোটা দেশ জুড়ে বিজেপির বিকল্প দল হিসেবে আলোচনায় উঠে আসছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় Mamata Banerjee() বিরোধী নেত্রী হিসেবে দেশ জুড়ে গ্রহণযোগ্য মুখ হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন রাজ্যে অবিজেপি, অকংগ্রেসি রাজনৈতিক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সেই কারণে বিজেপির প্রয়োজন একটি নরম মুখকে। যার দলকে হারানো সহজ হবে।
তাই নেতা হিসেবে ব্যর্থ রাহুল গান্ধীকে রাজনৈতিক তোল্লা দিয়ে চলেছে বিজেপি। ২০১৪ এবং ২০১৯-এ মোদি বনাম রাহুল হয়েছে। দু’বারই হারতে হয়েছে। এই জায়গা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ রাজনৈতিক মহলে প্রকট। তার কারণ সমস্ত রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করেও তৃণমূলনেত্রীকে হারাতে পারেনি বিজেপি। তাই এমন একটা মুখ দরকার যাকে লোকসভায় হারানো সহজ হয়। বিরোধী শিবিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীন পট্টনায়ক, অখিলেশ যাদব-সহ দেশের প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের নাম উঠে আসছে। আর তা ঘেঁটে দিতেই রাহুলকে মুখ করার চেষ্টা করছে বিজেপি। রাহুল বিদেশে কি করেছে তা নিয়ে সংসদ চলতে দিল না, আদানি নিয়ে কথাই হল না।
প্রশ্ন হচ্ছে রাহুলকে কেন আক্রমণ? রাহুলকে আক্রমণ করে প্রচারের আলোয় এনে বিরোধী মুখ তৈরি করার চেষ্টা করছে। যাতে চব্বিশে হারাতে সুবিধা হয়। কিন্তু এবার এই ছক ধরে ফেলেছে অকংগ্রেসী এবং অবিজেপি দলগুলি। কংগ্রেস নিজেরা সফল হচ্ছে না। বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে। কিন্তু বিরোধী দলগুলিকে নানাভাবে বিরক্ত করে চলেছে। কংগ্রেস মোটেই চায় না অকংগ্রেসী, অবিজেপি দলগুলি তাদের রাজ্যে শক্তিশালী হোক। তাই মরিয়া কংগ্রেস কোথাও কোথাও বিজেপির সাহায্য নিচ্ছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গ। বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করছে শতাব্দী প্রাচীন এই দল। ফলে কংগ্রেসকে আলাদা করে রাজার পাটও দেওয়া হবে না আবার বাদও দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপে রেকর্ড রাজ্যের
এই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কী করবে? তৃণমূল কংগ্রেস নিজের শক্তিতে চলবে বাংলায়। আর সারা ভারতে অবিজেপি, অকংগ্রেসী দলগুলি একজোট হয়ে যাবে। ভোটের পর পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত। তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতৃত্ব রাহুলকে সিরিয়াস রাজনীতিবিদ হিসেবেই মানতে চান না। কখনও মোদিকে জড়িয়ে ধরে শেষে চোখ মারেন। কখনও একমাস রাজনীতি করে বিদেশে হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন ৭ দিন। যে কারণে কংগ্রেসের মধ্যেই ঘরোয়া কোন্দল। সিনিয়ররা ক্ষুব্ধ। কংগ্রেস বিভক্ত। রাহুল একবার সভাপতি হলেন। ছেড়ে দিলেন। মাকে ফিরে এসে দলের হাল ধরতে হল। যেখানে মায়ের কাছ থেকে ছেলের দায়িত্ব নেওয়ার কথা সেখানে উল্টোটা ঘটছে। ছেলের অপদ্বার্থ্যতায় মাকে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। রাহুলের রাজনৈতিক সিরিয়াসনেস এবং গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গান্ধী পরিবারের বহু যুগের ঘাঁটি আমেথিতে হারে। মোদি ভার্সাস রাহুল কার্যত নো-ম্যাচ। তাই রাহুকে নেতা বানাতে মরিয়া কংগ্রেস। অপ্রাসঙ্গিক রাহুলকে প্রাসঙ্গিক করার লড়াইয়ে গেরুয়া শিবির।
যদি জোট সফল হয় তাহলে তাকে সমর্থন করতে বাধ্য হবে কংগ্রেস। আর এই বিকল্প জোটকে ঠেকাতেই রাহুলকে মুখ করার চেষ্টা। সংসদে রাহুলের বিদেশের বক্তব্য নিয়ে হুল্লোড় কিংবা বাড়িতে পুলিশ পাঠানো সবই হচ্ছে চিত্রনাট্যের প্লট। রাহুলকে বিরোধী সাজানোর স্ক্রিপ্ট।
তৃণমূল কংগ্রেসের স্পষ্ট কথা, এজেন্সির অতি সক্রিয়তা নিয়ে প্রতিবাদ ছিল-আছে-থাকবে। রাজনীতিতে হেরে গিয়ে যেভাবে এজেন্সিকে বিরোধীশক্তি দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা দেশের রাজনীতিতে আগে দেখা যায়নি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটা নাটকের চিত্রনাট্যে পরিণত হচ্ছে।