ঝড়ে আম কুড়োতে গেছি
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
আম কে না ভালবাসে? আমিও ভালবাসি। একটা সময় আম এবং জাম খুব খেতাম। আমাদের গাছেই হত। এখন সেই আম কিনে খেতে হয়।
ছোটবেলায় প্রচণ্ড দুষ্টু ছিলাম। তবে গাছে উঠে কোনওদিন আম পাড়িনি। কারণ গাছে উঠতে ভীষণ ভয় পেতাম। ভয় পেতাম গাছের উচ্চতাকে। তবে বন্ধুবান্ধবরা উঠত। আমি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দেখতাম। মনে পড়ে, কালবৈশাখীর ঝড়ে আম কুড়োতে গেছি দলবেঁধে। খেয়েছি সবরকমের আম। যে কোনও মিষ্টি আম খেতেই ভাল লাগে। তবে হিমসাগর, ল্যাংড়া আমার বিশেষ প্রিয়। ল্যাংড়া আমের গন্ধটা খুব সুন্দর। হিমসাগরের গন্ধটাও দারুণ।
একটা সময় উত্তরবঙ্গে থাকতাম। মালদার ফজলি আম খেতাম। তবে সব ফজলি আম কিন্তু খেতে ভাল নয়। ফজলি আম ওঠে মরশুমের শেষে। আমগুলো আকারে বেশ বড় হয় বলে আলাদা সৌন্দর্য। যাই হোক, শারীরিক কারণে এখন নিয়মিত আম খাওয়া হয় না। খুব সাবধানে থাকতে হয়। কখনও কখনও এক-আধ টুকরো খাই।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
আম খেতেই হবে
প্রণতি ঠাকুর
আম এমন একটি ফল, যার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি। দুঃখের বিষয় মাত্র দুই থেকে তিন মাস এই ফলটির স্বাদ আমরা পাই। ছোটবেলায় কাঁচা আম খেতে খুব ভাল লাগত। গরমের ছুটিতে পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে কাঁচা আম, তাতে একটু নুন দিয়ে লঙ্কা মাখিয়ে, আহা সে স্বাদের ভাগ হবে না। কিন্তু পরে দেখা গেল যে, কাঁচা আম, মানে যে কোনও টক জাতীয় ফল আমার সহ্য হচ্ছে না। ফলে ওই কচকচ করে কাঁচা আম চিবিয়ে খাওয়ার যে আনন্দ, সেটা চিরতরে ফুরিয়ে গেল।
তবে পাকা আমের জন্য তো উদগ্রীব অপেক্ষা, সেই ছোটবেলা থেকে এখনও পর্যন্ত। ঈশ্বরের কৃপায় এখনও পর্যন্ত আমার ডায়াবেটিস ধরা পড়েনি। পড়লেও কিছু করার ছিল না। আম খেতেই হবে।
মুর্শিদাবাদে এমন কিছু আমের সন্ধান পেয়েছিলাম যার নাম আমরা কলকাতাবাসীরা আগে জানতাম না। কলকাতার মানুষের মাত্র কয়েক প্রকার আমের সঙ্গে পরিচয়। আমার সবচেয়ে প্রিয় আমের নাম হিমসাগর। যদিও ল্যাংড়া আম নিয়ে অনেকেই খুব মাতামাতি করেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, কেন যে এত সুন্দর একটি আমের নাম ল্যাংড়া হল আমি জানি না।
আলফানসো আম নিয়েও খুব মাতামাতি হয়। প্রচুর দাম। আমি খেয়ে দেখেছি। খুব একটা সাংঘাতিক কিছু মনে করিনি। একটাই দুঃখ, আম বড্ড অল্প সময়ের জন্য আসে আমাদের এই বাংলায়। আর কিছুদিন যদি থাকত, ভাল হত।
আরও পড়ুন-মৃতার পরিবারের পাশে কল্যাণ
আম আমার খুব প্রিয়
অনির্বাণ চক্রবর্তী
গরমকাল আমার একেবারেই পছন্দের নয়। তবে গরমকালের ফল আম আমার খুব প্রিয়। আমের জন্যই আমি প্যাচপেচে গরমটা সহ্য করে নিতে পারি। অনেকরকমের আম আছে। আমার সবচেয়ে পছন্দের আম হিমসাগর। এর আগে এবং পরেও বেশকিছু আম ওঠে। কিছু কিছু খাই। তবে হিমসাগরের মতো ভাল লাগে না। বাংলার বাইরে থেকেও প্রচুর আম আসে। তার মধ্যে অন্যতম আলফানসো। বিরাট নাম। আমি খেয়েছি। তবে খুব একটা ভাল লাগেনি। গোলাপখাস, ল্যাংড়া, চৌসা আমও খেয়েছি। ভাল লেগেছে। তবে হিমসাগরের কাছে সবাই ফেল।
আমি বড় হয়েছি মফসসলে। বজবজে। সেখানে প্রচুর গাছপালা। আমাদের পাড়াতেও আমগাছ ছিল বেশ কয়েকটা। অবশ্যই দেশি আম। মনে পড়ে, কালবৈশাখীর ঝড় হলেই আমরা আম কুড়োতে যেতাম। দারুণ মজা হত। আমের মুকুলের গন্ধ আমার খুব ভাল লাগে।
টক আমি খুব একটা পছন্দ করি না। ফলে কাঁচা আম বিশেষ খাওয়া হয় না। তবে আমের চাটনি খাই। ঘন চাটনি এবং সরষে ফোড়ন দিয়ে অল্প মিষ্টির আমের অম্বল। আমের ডাল খেতে খুব পছন্দ করি। কাঁচা আম পুড়িয়ে আম পান্নার শরবত হয়। সেটা খেতেও দারুণ লাগে। আম দিয়ে কিছু কিছু মিষ্টি হয়। দই হয়। আম দিয়ে হয় পায়েসও। খেতে খুব ভাল লাগে। আম খুব ভালবাসি ঠিকই, তবে প্রতিদিন খাওয়া হয় না। মাঝেমধ্যে খাই।
আম খেতে ভালবাসি
রাঘব চট্টোপাধ্যায়
যে-কোনও ফল আমার খুব প্রিয়। আমের প্রতি অবশ্যই ভালবাসা আছে। বিভিন্নরকমের আম হয়। আম যে খুব বেশি চিনি, তা নয়। তবে আম খেতে ভালবাসি। বিভিন্ন আমের আলাদা আলাদা টেস্ট এনজয় করি। হিমসাগর, ল্যাংড়া-সহ বাংলার বিভিন্নরকমের আম আমার খুব পছন্দের। লালফুলি, পেয়ারাফুলি, গোলাপখাস আমও খাই।
আমার থেকেও আমার বাবা এগুলো আরও ভাল বোঝেন। তিনি একজন আমপ্রেমী। অনেক বয়স হওয়া সত্ত্বেও, নিয়মিত বাজারে যান এবং পছন্দের আম কিনে আনেন। কখনও আম শুধু খাওয়া হয়, কখনও ফলার মেখে খাওয়া হয়। ডিনারের পরে আম খাওয়ার চল আছে আমাদের বাড়িতে। ভ্যানিলা আইসক্রিমে ছোট ছোট আমের টুকরো দিয়েও খাওয়া হয়।
আমি নৈহাটিতে থাকি। আমাদের এখানে প্রচুর আমগাছ রয়েছে। আমাদের নিজেদের আমবাগানও রয়েছে। ছোটবেলায় গাছে উঠে আম পাড়তাম। ঝড়ে আম কুড়োতে যেতাম। লোকের বাড়ি থেকে আম চুরি করেও খেয়েছি। ফলে আমি যে একজন আমবিলাসী, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
প্রিয় ফল আম
অরিজিতা মুখোপাধ্যায়
আম খেতে ভীষণ ভালবাসি। আমার খুব প্রিয় ফল আম। প্রথম এবং শেষ পছন্দ হিমসাগর। তবে সবরকমের আমই খাই। গরমের মরশুমে তো প্রতিদিনই আম খেতে ইচ্ছে করে।
কাঁচা আমের ডাল খেতে খুব পছন্দ করি। আর একটা পছন্দের গুড় আম। কাঁচা আম দিয়ে তৈরি হয়। ছোটবেলায় দুপুরে খেতাম। মা আর একটা জিনিস তৈরি করতেন, সেটা হল আম তেল। সেই আম তেল মুড়িতে মেখে খাওয়া হত, রান্নায় দেওয়া হত। পাকা আম কখনও দুধ-মুড়ি দিয়ে বা ফলার করে খাইনি। আমি শুধু আমটাই খেতেই পছন্দ করতাম বা করি। পিস পিস করে কেটে ফ্রিজে রেখে খেতে চমৎকার লাগে। ডেজার্ট বা মিষ্টিতে যে ম্যাঙ্গো ফ্লেভার ইউজ করা হয়, সেটা আমার একদম পছন্দের নয়।
আমার দেশের বাড়ি অম্বিকা কালনার ভবানন্দপুরে। মামার বাড়িও খুব কাছেই, কৃষ্ণদেবপুরে। সেখানে প্রচুর আমগাছ ছিল। আমার দাদু শখ করে লাগিয়েছিলেন। গরমের দিনে মামার বাড়ি গেলে প্রচুর আম খাওয়া হত।
ছোটবেলায় আমি বড় হয়েছি আসানসোলে একটি বড় ব্রিটিশ বাংলোয়। সেখানে দুটো দুর্দান্ত বোম্বাই আমের গাছ ছিল। কালবৈশাখীর সময় আমগুলো কাঁচা থাকত। ঝড়ে পড়ে গেলে আমরা কুড়িয়ে আনতাম। কাঁচা আম পাকানোর জন্য রাখা হত চালের ড্রামে। স্মৃতিগুলো মাঝেমধ্যেই ভিড় করে আসে।
হাত বাড়ালেই আম
সৌমিত্র রায়
আম খেতে খুব ভালবাসি। তবে এখন শারীরিক কারণে খুব একটা মুখে দেওয়া হয় না। তবে লুকিয়ে চুরিয়ে একটু আধটু যে খাই না, তা নয়। এই বছর মাত্র একদিন আম কিনেছি। বড়বাজার থেকে। আসলে আম কিনে খেতে আমার খুব খারাপ লাগে। মালদায় আমার দেশের বাড়ি। সেখানে বিঘের পর বিঘে আমাদের আমবাগান। যদিও এখন লিজে দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু আম আমরা পেয়ে থাকি।
মালদায় আম ফলে কিছুটা পরে। মোটামুটি জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে। সবরকমের আম হয়। আমাদের বাগানেই হয় ৭-৮ রকমের আম। ফজলি হয় তো বটেই। ল্যাংড়া এবং হিমসাগর আমার খুব প্রিয়। আরেকটা কথা বলি, আমাদের বাড়িতে আম পুজো না হলে আমরা আম ছুঁই না। নতুন আম উঠলে বাড়ির ঠাকুরের কাছে আমের ভোগ দেওয়া হয়। দু’-তিন রকমের আম দিয়ে পুজো করা হয়। তারপরে আমরা আম খাওয়া শুরু করি। এটা আমাদের পরম্পরা।
মালদার আমগাছগুলো নানা আকারের। গাছে বড় বড় আম ঝুলত। হাত বাড়ালেই আম ধরা যেত। মাঝেমধ্যে গাছে উঠতাম। আমার স্ত্রী খুব সুন্দর আমের শরবত বানায়। কাঁচা আমের ডাল আমাদের বাড়িতে নিয়মিত হয়। বেশি খাওয়া না হলেও, আমার আমপ্রীতি কিন্তু আজও রয়ে গেছে। মালদার লোক বলেই হয়তো!