প্রতিবেদন: বিজেপির রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থায় গেরুয়াকরণের প্রসার ঘটাতে এবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন’ শিরোনামে একটি নতুন কোর্স চালু হয়েছে। এই কোর্সে ভারতের জাতিভেদ ও ধর্মভেদ প্রথার ধারক-বাহক বিতর্কিত মনুস্মৃতিকে (Manusmriti ) প্রাথমিক পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে কীভাবে বর্ণ ও জাতি ব্যবস্থা ‘সমাজকে সংগঠিত করে’। এই পাঠ্যক্রমের মধ্যে ‘সভ্য সামাজিক শৃঙ্খলা’ নির্মাণে বিবাহের ভূমিকা এবং কীভাবে নৈতিকতা ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, তা-ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে হিন্দু বর্ণভেদ প্রথা ও নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক নীতির আকরগ্রন্থ মনুস্মৃতির অন্তর্ভুক্তি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। কারণ এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং লিঙ্গ বৈষম্যকে মহিমান্বিত ও শক্তিশালী করার কথা বলে। শিক্ষামহলের সমালোচনা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মগজে মনুস্মৃতির ঢোকাতে উৎসাহী ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার। যে বিজেপি দলের বিরুদ্ধে নারীবিদ্বেষ এবং ধর্ম ও জাতিভিত্তিক বিভাজনের জন্য অভিযোগের আঙুল ওঠে, তাদের জমানায় এই বিভাজনমুখী পাঠ্যসূচি অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিকল্পনারই অংশ।
আরও পড়ুন-রাশিয়ার হামলায় আরও একটি শহর হারাতে চলেছে ইউক্রেন
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অনুষদের সদস্যদের মধ্যে এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ ধর্মশাস্ত্রের কোর্সের উদ্দেশ্য বোঝাতে বলা হয়েছে যে, প্রাচীন ভারতীয় সমাজ, সামগ্রিকভাবে এবং এর বিভিন্ন অংশ, সংস্কৃত ভাষায় সংকলিত ‘ধর্মশাস্ত্র’ নামে পরিচিত গ্রন্থগুলিতে চিত্রিত হয়েছে। রামায়ণ, মহাভারত এবং পুরাণ-এর মতো অন্যান্য হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থগুলিও এই কোর্সের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পত্রটি বর্তমান শিক্ষাবর্ষে একটি মূল কোর্স হিসেবে চালু করা হয়েছে এবং এর ক্রেডিট সংখ্যা চার। সংস্কৃতের কার্যকরী জ্ঞানসম্পন্ন স্নাতক শিক্ষার্থীরা এটি অধ্যয়নের সুযোগ পাবেন। কোর্সের চারটি ইউনিটে ধর্মের ধারণা, ধর্মশাস্ত্র, ব্যবহার বা রাষ্ট্রনীতি (যেখানে প্রাচীন ভারতের আইনগত ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করা হয়েছে) এবং প্রায়শ্চিত্ত বা অনুশোচনা বিষয়ক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রাথমিক পাঠ্য হিসেবে আপস্তম্ব ধর্মসূত্র, বৌদ্ধায়ন ধর্মসূত্র, বশিষ্ঠ ধর্মসূত্র, মনুস্মৃতি, যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি, নারদ স্মৃতি এবং কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের মতো গ্রন্থগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই নতুন কোর্সের প্রবর্তন শিক্ষাবিদ এবং সাংস্কৃতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একাধিক শিক্ষাবিদ ও সমালোচক যুক্তি দিয়েছেন যে মনুস্মৃতির মতো গ্রন্থগুলিকে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিতই নয়। কারণ এগুলিতে এমন কিছু বিধান রয়েছে যা সমসাময়িক সমাজে বিভেদ-বৈষম্য তৈরি করতে পারে এবং লিঙ্গ ও জাতিগত সমতার ধারণার পরিপন্থী। সমালোচকদের মতে, এই গ্রন্থগুলি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা উচিত, তবে সেগুলিকে সামাজিক আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা কখনওই উচিত নয়।