সুনীতা সিং, বর্ধমান: বর্ধমানের বিদ্যাসুন্দর কালীবাড়ির সঙ্গে জড়িত এক প্রেমকাহিনী। কথিত, রাজকন্যা বিদ্যা ও পূজারি সুন্দরের প্রাণরক্ষা করেন স্বয়ং দেবী। তৎকালীন বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদের আমলে ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল বর্ধমানের দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ। সেখানেই ছিল মা দক্ষিণ মশানকালীর মন্দির। নিত্যপুজো করতেন রাজা। মন্দিরে হত নরবলিও। এই মন্দিরেরই পূজারি ছিলেন সুন্দর। কথিত, তেজচাঁদের একাধিক মন্দিরে রাজকন্যা বিদ্যা নিজের হাতে গাঁথা মালা মালিনী মাসিকে দিয়ে পুজোর জন্য পাঠাতেন। একদিন মালিনী মাসি ফুলের মালা নিয়ে যান দক্ষিণ মশানকালী মন্দিরে। মালা দেখে মুগ্ধ হন পূজারি সুন্দর।
আরও পড়ুন-বন্যা-ঝড় সবেতেই মানুষের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা প্রশাসনিক কর্তাদের সংবর্ধনায় তৃণমূল
মালিনী মাসিকে তিনি জিজ্ঞেস করেন এই মালা কে গেঁথেছেন? তিনি রাজকন্যা বিদ্যার কথা জানালে পূজারি তাঁর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন মালিনীকে। কিন্তু তিনি জানান, সেটা সম্ভব নয়। তবে সুন্দরও হাল না ছেড়ে বিদ্যাকে দেখার জন্য মন্দির থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত তৈরি করেন সুড়ঙ্গপথ। সেই পথ দিয়ে তিনি পৌঁছন বিদ্যার কাছে। শুরু হয় দুজনের প্রেম। কিন্তু গোপন থাকেনি সে খবর। জানতে পেরে বিদ্যা-সুন্দরের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন রাজা। বলি দেওয়ার জন্য দুজনকে আনা হয় দক্ষিণ মশানকালী মন্দিরে। বলির আগের মুহূর্তে বিদ্যা ও সুন্দর কাপালিকের কাছে মাকে স্মরণ করার অনুরোধ জানান। বলি দেওয়ার আগেই জ্ঞান হারান কাপালিক আর সেই সুযোগে নিরুদ্দেশ হয়ে যান বিদ্যা ও সুন্দর। দেবীই স্বয়ং যুগলকে রক্ষা করেন বলে মনে করেন সকলে। এরপর থেকে আজও বিদ্যা-সুন্দরের কোনও খোঁজ মেলেনি। এই অলৌকিক ঘটনার কথা লোকমুখে ছড়াতেই কালীমন্দিরের নাম মুখে মুখে হয়ে যায় বিদ্যাসুন্দর কালীমন্দির। আর সেই থেকেই নাকি বন্ধ হয়ে যায় নরবলি প্রথাও। এখন কালীপুজোয় ছাগবলি হয় মন্দিরে। নিত্যপুজোয় মাছ ছাড়া হয় না মায়ের ভোগ।